সাতক্ষীরা টাউন হাইস্কুল গণহত্যা দিবসে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি
সাতক্ষীরা টাউন হাইস্কুল গণহত্যা দিবসে প্রথমবারের মতো বধ্যভূমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শ্রদ্ধা নিবেদন।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, শিল্পায়ন সঙ্গীত একাডেমী ও প্রাণকেন্দ্র সাতক্ষীরার আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে শিশুদের অংশগ্রহণে উদযাপিত কর্মসূচি থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবি পুণরায় উচ্চারিত হয় সম্মিলিত ভাবে।
রবিবার ভোর থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কর্মসূচীতে একুশে এপ্রিলের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।
কর্মসূচি থেকে অংশগ্রহণকারী ছাত্র শিক্ষক শিল্পী সাংবাদিক চিকিৎসক, রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা বধ্যভূমিতে নব নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে দেয় শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শহীদ স্মরণে সকালে বিতরণ করা হয় গণভোজ (খিচুড়ি)।
আলোচনা করেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা হারুন অর রশিদ, নাগরিক নেতা মাধব দত্ত, জাসদ নেতা প্রভাষক ইদ্রিস আলী, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সমরেশ কুমার দাস, সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গাজী মোমিন উদ্দীন, উদীচীর জেলা সম্পাদক সুরেশ পান্ডে, সামাজিক আন্দোলনের সহ সভাপতি প্রভাষক হেদায়েতুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা প্রভাষক শুভাশীষ পাল, প্রভাষক এম সুশান্ত, প্রধান শিক্ষক আসাদুল ইসলাম, শিল্পায়ন সঙ্গীত একাডেমীর পরিচালক জাকির হোসেন, শ্রমিক নেতা ডা: আলী হোসেন, কবি মনিরুজ্জামান মুন্না, মিল্টন খান চৌধুরী, নাট্যকর্মী মনিরুল ইসলাম মিলন, সাংবাদিক ইমরান হোসেন, হৃদয় মন্ডল, সমাপ্তী গাইন, সুমিত ঘোষ, সুদীপ্ত দেবনাথ, প্রসেনজিত দাস মঙ্গল প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবারের সদস্য এডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু।
প্রসঙ্গত, একাত্তরে দুই চারজন নয় চারশ’র বেশী নিরস্ত্র শরনার্থী যারা একটু বাঁচার আশায় ভারতগামী হচ্ছিলো। হেটে আসা ক্লান্তিতে থাকা মানুষ একটু আশ্রয়ের জন্য স্কুলে আশ্রয় নিতে গিয়ে পাক হায়েনাদের হাতে নৃশংস হত্যার শিকার হন চারশ’র বেশী মানুষ। কিন্তু সেই স্মৃতি আজ বিস্মৃত হতে চলেছে। বধ্যভূমির মুলজমিটাও ইতিমধ্যে হাতছাড়া হয়ে গেছে স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার বলেন, ২৫ মার্চ ১৯৭১ এদেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী শহর গ্রামে ঢুকে পড়েছে। জ্বালাচ্ছে ঘরবাড়ি, লুন্ঠন ও হত্যা করছে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে। তাই প্রাণ ভয়ে একেবারে সাধারণ মানুষরা একটু বেঁচে থাকার আশায় সব ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছিল ভারতে। এরকমভাবে সাতক্ষীরা সড়ক ধরে সীমান্ত দিয়ে যাবে মানুষ। ক্লান্ত শরনার্থীরা একটু জিরোতে আশ্রয় নিলো সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তখনকার টাউন হাইস্কুলে। সেখানে থাকা সেই সাধারণ চারশতাধিক মানুষকে হত্যা করলো নির্মমভাবে। এই পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মারা এখনও ভর করে বলেই সাতক্ষীরায় নির্মাণ হয় না শহীদ স্মৃতিসৌধ।
তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরার সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের দুঃখ ও ক্ষোভ এই সাতক্ষীরা জেলা সদরে যেমন নেই কোন স্মৃতিসৌধ। তেমনি টাউন হাইস্কুলের গণহত্যার এই ভূমিকে রক্ষায় সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিদের কোন উদ্যোগ কখনও দেখা যায়নি। এঅবস্থায় স্থানীয়দের জোর দাবি দ্রুতই কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হোক এবং বধ্যভূমির স্মৃতি সংরক্ষণ করা হোক একই সাথে শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক। এটাই সাতক্ষীরাবাসীর প্রাণের দাবি।
একাত্তরের বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ও শহীদ পরিবারের সদস্য এডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলুর সাফকথা বধ্যভুমি রক্ষার উদ্যোগ সরকাকেই নিতে হবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, স্বাধীনতার ৫৩বছর পেরোলেও বাংলাদেশের একমাত্র জেলা সাতক্ষীরা জেলা সদরে নেই কোন স্মৃতিসৌধ। তেমনি হবে হবে করেও সাতক্ষীরার এতো বড় গণহত্যার স্থানটিকে সংরক্ষণ করা হয়নি। এটি জাতির জন্য লজ্জার।
সুমনা, সেজুতি, রিমি, ঝিলিক, নন্দিনী, আসাদ, তৌফিক, সবুজ, তীর্যক, ও জাকির হোসেনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় দেশাত্ববোধক ও সংগ্রামী সঙ্গীত আয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শহীদ স্মৃতি সৌধ নির্মাণ ও বধ্যভূমি সংরক্ষণের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।
শপথ বাক্য পাঠ করান সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)