সিঙ্গাপুরে চাকরি পাবেন দালাল ছাড়াই


বিদেশগামীদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায় বাড়তি উৎকোচ দেওয়ার কথা। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য দেশ ছাড়া মানুষ ঋণের বোঝায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। বিদেশগামীদের পাশে দাঁড়াতে সিঙ্গাপুরে চালু হয় সামা (Sama) স্টার্টআপ নামে একটি অ্যাপ। এবার বাংলাদেশিরাও পাবেন এই সুবিধা। বিদেশ যেতে ধরনা দিতে হবে না কোনো দালালের কাছে।
বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আবেদন করছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। শুক্রবার বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সিঙ্গাপুরে এখন সাড়ে তিন লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক কাজ করেন। বেশির ভাগই নির্মাণখাত ও বন্দরে জাহাজে পণ্য-সংক্রান্ত কাজের কর্মী। এর মধ্যে অধিকাংশই আবার বাংলাদেশ এবং ভারতের নাগরিক। এসব শ্রমিক সিঙ্গাপুরে পা রাখার আগেই ঋণের কবলে পড়েন। এ ঋণ থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে কয়েক মাস, কখনো কখনো কারও কারও কয়েক বছর লেগে যায় সেই ঋণ শোধ করতে। ঋণের ফাঁদে যেন পড়তে না হয়, সে জন্যই এই অ্যাপ।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী, কোনো কর্মীর থেকে কর্মসংস্থান এজেন্টরা দুই মাসের বেশি বেতন নিতে পারেন না। কিন্তু অন্য দেশে সিঙ্গাপুর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ সুযোগে এজেন্টরা অন্য দেশে তিন-চার মাসের বেশি বেতন নিয়ে নেন। তাই কর্মীদের চাকরি নিয়ে দেশটিতে যাওয়ার পরও নিজ দেশের এজেন্টদের মাসের পর মাস অর্থ দিয়ে যেতে হয়। এ সমস্যা থেকে শ্রমিকদের মুক্তি দিতে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘সামা’ স্টার্টআপের যাত্রা শুরু হয় গত এপ্রিলে। এখান থেকে কর্মীরা নিজেদের পছন্দমতো চাকরি খুঁজে নিতে পারেন। এ জন্য সর্বোচ্চ দুই মাসের বেতন দিতে হয় তাঁদের।
চাকরিপ্রত্যাশীরা কোম্পানিটির হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে সব কাগজপত্র জমা দিতে পারেন। অ্যাপে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এখানে শ্রমিকেরা তাঁদের বেতন ডিজিটাল ওয়ালেটে রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে দেশে সরাসরি অর্থ পাঠানো যায়।
আইন অনুযায়ী এজেন্টকে সর্বোচ্চ দুই মাসের বেতন দিতে হয় কর্মীদের। কিন্তু অন্য দেশের মতো সিঙ্গাপুরের কর্মীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত কাজে নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে কম।
হেলথসার্ভ স্থানীয় একটি দাতব্য সংস্থা। এরা অভিবাসী কর্মীদের চিকিত্সা, খাবার ও কর্মক্ষেত্রের সহায়তা দেয়। দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান সুইয়েন লো বলেন, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কর্মীদের কাছ থেকে ১ হাজার ১০০ ডলার থেকে ১১ হাজার ডলার পর্যন্ত নেওয়া হয়। এ ফি তাঁদের প্রশিক্ষণ বা ভ্রমণের ব্যবস্থাসহ নানা কাজে ব্যয় করা হয়। কিন্তু যখন এই প্রক্রিয়ায় একের অধিক এজেন্ট ঢুকে যান, তখন কর্মীদের সিঙ্গাপুরে ঢোকার আগেই অর্থ পে করতে হয় অনেক সময়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁরাই, যাঁদের মাসিক আয় ৫০০ ডলার।
সামা স্টার্টআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা নেমানজা গ্রুজিক এবং কীর্তন প্যাটেল। তাঁরা বিবিসিকে বলেন, তাঁরা কোম্পানিগুলো থেকে ‘ফি’ নেন। যেখানে শ্রমিকেরা কাজ করছেন, তাদের বুঝিয়ে এ বিষয়ে রাজি করান। কিন্তু অন্যরা শ্রমিকদের থেকে ‘ফি’ নেয়। এতে তাঁদের ওপর চাপ পড়ে।
কীর্তন প্যাটেল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, শ্রমিকেরা ঋণের চিন্তা বাদ দিয়ে কাজ করলে বেশি আউটপুট পাওয়া যায়।’
বাংলাদেশ ও ভারতে আসার বিষয়টি জানিয়েছেন নেমানজা গ্রুজিক। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ও ভারতে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশি এজেন্টদের প্রতি শ্রমিকদের নির্ভরতা কমাতে আমরা বাংলাদেশ এবং ভারতে কাজ করতে যাচ্ছি। এ জন্য নিবন্ধনের আবেদন করেছি।’
চাকরিপ্রত্যাশীরা কোম্পানিটির হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে সব কাগজপত্র জমা দিতে পারেন। অ্যাপে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এখানে শ্রমিকেরা তাঁদের বেতন ডিজিটাল ওয়ালেটে রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে দেশে সরাসরি অর্থ পাঠানো যায়।
অ্যাপটির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাহিদ আলী সিঙ্গাপুরে গাড়িচালকের চাকরি পেয়েছেন। ২৮ বছর বয়সী জাহিদ দেশটিতে ৫ বছর কাজ করার পর মেয়াদ শেষ হওয়ায় অন্য চাকরি খুঁজছিলেন। জাহিদ বলেন, ‘কোনো কষ্ট হয়নি। তারা আমাকে ভালো একটি চাকরি পেতে সাহায্য করেছে।’ জাহিদ মাসে ৭০০ ডলারের বেশি আয় করেন। আয়ের একটি অংশ বাংলাদেশে পরিবারের কাছে পাঠান তিনি। আর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বাংলাদেশে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে চান জাহিদ।
চুয়া চি পিন পারিবারিকভাবে কাঠের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ট্যাট হিন টিম্বার নামের ওই প্রতিষ্ঠানে সামা অ্যাপের মাধ্যমে চুয়া চি পিন কিছুদিন আগে একজনকে কাজে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বিবিসিকে জানান, সামার মাধ্যমে আরও কর্মী নিয়োগ দিতে চান তিনি।
সূত্র: বিবিসি

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
