সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মধ্যযুগীয় কায়দায় ২৭ বছরের এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শওকত ওসমান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের হাফালিয়াকাটা মুরাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও গতকাল সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
গৃহবধূর স্বামী একজন দিনমজুর। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নিয়াজুল ইসলাম বাদল বলেন, কয়েক মাস আগে ওই গৃহবধূ স্বামীর চিকিৎসার জন্য শওকত ওসমানের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা সুদের ভিত্তিতে ধার নেন। ইতিমধ্যে তিনি সুদ ও আসলসহ আট হাজার টাকা পরিশোধও করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শওকত ওসমান আরও দুই হাজার টাকা দাবি করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ ওই টাকা বৃহস্পতিবার (আজ) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা মানেননি শওকত ওসমান। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শওকত ওসমান ওই গৃহবধূকে একটি গাছের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করেন এবং অমানবিক নির্যাতন চালান। এ সময় শওকত ওসমান ওই গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান।
ওয়ার্ড মেম্বার নিয়াজুল ইসলাম বাদল বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে। কিন্তু ভুক্তভোগী এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলায় জানা যায়নি। পরে গতকাল সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হলে জানাজানি হয়। বিষয়টি জানানোর পর পুলিশ শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে আটক করে নিয়ে যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শওকত ওসমান একটি গাছের সঙ্গে শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখেন ওই গৃহবধূকে। এ সময় ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাঁধন খুলে দিতে অনুরোধ করেন।
কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে শওকত ওসমান তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন এবং চুলের মুঠি ধরে টানতে থাকেন শওকত ওসমান। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূর চুলের মুঠি ধরে তা গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন তিনি। পরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নারী ভুক্তভোগী গৃহবধূকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শওকত ওসমান।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ‘জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানানো হয়েছে। আমি চাই এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ’
ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহতাবুর রহমান বলেন, কয়েক মাস আগে শওকত ওসমানের কাছ থেকে সুদের ভিত্তিতে ৪ হাজার টাকা ধার নেন ওই গৃহবধূ। ইতিমধ্যে তিনি ৮ হাজার টাকা পরিশোধও করেছেন। কিন্তু আরও দুই হাজার টাকা দাবি করে শওকত ওসমান ওই গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। অভিযুক্ত শওকত ওসমানকে না পাওয়ায় তার বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]