সুুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বনবিভাগের
সাতক্ষীরার সুন্দরবন রেঞ্জে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ। শনিবার সকাল থেকে বন বিভাগ মৌখিকভাবে পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় প্লাস্টিকসহ ক্ষতিকর দ্রব্য সুন্দরবন সংলগ্ন নদীর পানিতে ব্যবহার বন্ধে এ উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ সাতক্ষীরা।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, পর্যটকেরা সুন্দরবনে প্রবেশের সময় সঙ্গে করে প্লাস্টিকের পানির বোতল, প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার, ওয়ান টাইম গ্লাস, ওয়ান টাইম প্লেট,ওয়ান টাইম চায়ের কাপ, চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে যান। ব্যবহার শেষে এসব দ্রব্য সুন্দরবনসংলগ্ন নদীতে ও সুন্দরবনের মধ্যে ফেলে দেন। ফলে নদী ও সুন্দরবনের পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। এ ছাড়া অনেক প্রাণীও মারা যাচ্ছে। এ বিপর্যয় ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নূরুল আলম বলেন, প্রতিদিন বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে ২৫-৩০টি ট্রলারে ৪৫০-৫০০ পর্যটক সুন্দরবনে ভ্রমণে যান। এসব ট্রলার থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন নদ নদী ও বনে যাতে কোনো ধরনের প্লাস্টিক ফেলা না হয়, এ জন্য পর্যটক বহনকারী ট্রলার মালিকদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে একাধিকবার। সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয় গত ২৭ এপ্রিল। কিন্তু পর্যটকবাহী ট্রলার থেকে নদী ও বনে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পানির বোতল, প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার, ওয়ান টাইম গ্লাস-প্লেট, চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর দ্রব্য ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে শনিবার থেকে পর্যটকদের সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, বন ও পরিবেশমন্ত্রী সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষার্থে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সুন্দরবনের নদ-নদী ও বনে পর্যটকেরা যাতে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের জিনিস না ফেলেন, সেদিকে সজাগ হতে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছেন। মন্ত্রীর চিঠির বরাত দিয়ে একাধিক ট্রলার মালিককে চিঠি দিলেও তাঁরা সতর্ক হচ্ছেন না। শুক্রবার দুপুরে তিনি সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্র কলাগাছিয়া যাওয়ার পথে দেখেন নদীতে ও বনে অনেক প্লাস্টিকের জিনিস ফেলা রয়েছে। ট্রলার মালিক সমিতির নেতাদের বললেও তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে শনিবার সকাল থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের অনুমতি দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রলার মালিক সমিতি যদি দায়িত্ব নেয়, তবে বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
সুন্দরবন এলাকার শ্যামনগর ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম জানান, তাঁদের প্রতিটি ট্রলারে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন রয়েছে। পর্যটকেরা ট্রলারে উঠলেই তাঁদের সতর্ক করা হয় ডাস্টবিনে ছাড়া যেন কেউ নদী কিংবা বনে কোনো ধরনের ময়লা বিশেষ করে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি জিনিস না ফেলার জন্য। অধিকাংশ পর্যটক এ নির্দেশনা মেনে চলেন।
আবদুল আলিম আরও বলেন, সুন্দরবনসংলগ্ন অসংখ্য গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামে প্রায় প্রতিদিন নানা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান শেষে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পানির বোতল, প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার, ওয়ান টাইম গ্লাস, ওয়ান টাইম প্লেট, চিপসের প্যাকেটসহ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি নানা জিনিস সুন্দরবনসংলগ্ন নদীতে ফেলে দেয়। জোয়ারে তা ভাসতে ভাসতে সুন্দরবন চলে আসে। গ্রামের মানুষ সচেতন না হলে এটি বন্ধ হওয়া কঠিন। পর্যটক ঢোকা বন্ধ রাখলে ট্রলার চালানোর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩০০ মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)