রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার পরিবারকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টে আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
বুধবার সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গণে দাঁড়িয়ে নিজের ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
পাশাপাশি বসুন্ধরাসহ যেকোনো বড় কোম্পানির অন্যায় রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, 'তাদেরকে ব্লাঙ্ক চেক দেয়া হয় নি।'
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘তার বাবা-মা কেউ পৃথিবীতে নেই। এই এতিম মেয়ের জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি এর চেয়ে ভালো আইনজীবী না পান তাহলে আমি তার পক্ষে দাঁড়াতে চাই। তার পরিবারকে আমি আইনি সহায়তা দিতে চাই।’
বসুন্ধরা'র বিরুদ্ধে বিষোদগার করে জমি দখল, হত্যাসহ ইতোপূর্বে আরো অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন তিনি।
মামলাটি আত্মহত্যার সহযোগিতা না হয়ে হত্যা মামলা হওয়া উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ব্যারিস্টার সুমন।
এই ঘটনায় আসামির বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটাই আবেদন থাকবে। আপনি তো শক্তিশালী যুদ্ধাপরাধীদেরও ৩০/৩৫ বছর পরেও তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করেছেন। তাই আমার বিশ্বাস জনগণের যে প্রত্যাশা আপনার ওপর। বসুন্ধরা হোক বা যে শিল্প প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তাদের বিচার এই মাটিতে হবে এবং সুষ্ঠ বিচার হবে। জনগণের সামনে এটা প্রমাণিত হবে যে, আপনি কোনো কিছুতেই পিছপা হননি। সে যেই হোক না কেন।’
এই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা কোনো কর্মসূচি না দেয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ব্যারিস্টার সুমন।
গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাটে থেকে তরুণীর উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তরুণীর বড় বোন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।
পরদিন ঢাকার একটি আদালত এই শিল্পপতির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আদেশ দিয়েছে।
অন্যদিকে, হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেছেন মামলার আসামির আইনজীবী।
সোমবার সন্ধ্যায় যে তরুণীটির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার বাবা-মা মারা গেছেন আগেই। এখন আছেন ভাই বোন।
আনভীরের বিচার চেয়ে বসুন্ধরা সিটির সামনে মানববন্ধন
আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে বসুন্ধরা সিটির সামনে ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দেশে ‘এক দেশ দুই নীতি’ ক্রমেই প্রতীয়মান হচ্ছে বলে মনে করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিখা পিরেগু। গুলশানে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার আসামি আনভীরকে ‘গ্রেপ্তার করে বিচার না’ করলে ছাত্র ইউনিয়নে রাজপথে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গুলশানে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে ওই মানববন্ধন ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
বুধবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
‘এই হত্যাকাণ্ড’ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় উল্লেখ করে সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিখা পিরেগু বলেন, ‘এটি এই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার ভোগবাদী মনোভাবের ফলাফল। ইতোমধ্যেই হত্যাকারী কার্গো ফ্লাইটে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা দেখছি এই রাষ্ট্র…হত্যাকারীদেরই স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।’
দেশে ‘এক দেশ দুই নীতি’ ক্রমেই প্রতীয়মান হচ্ছে বলে মনে করেন মিখা পিরেগু। তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার আসামি আনভীরকে ‘গ্রেপ্তার করে বিচার না’ করলে ছাত্র ইউনিয়নে রাজপথে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মেয়েটিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে সোমবার রাতেই গুলশান থানায় মামলা করেন তার বোন। এতে আসামি করা হয় বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে।
পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, সোমবার সন্ধ্যার দিকে গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি কুমিল্লায়।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করার পাশাপাশি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবারই কুমিল্লায় ওই তরুণীর দাফন হয়।
এ ঘটনায় মামলার পর মঙ্গলবারই সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। সেই সঙ্গে বিচারক আগামী ৩০ মের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেন।
এরপর কয়েকটি গণমাধ্যমে আনভীরের বিদেশ যাওয়ার খবর প্রকাশ করলেও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিনের মধ্যে এই নামে কেউ বিদেশ যাননি।
তরুণীর আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে বুধবার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সব চলবে। যেই অপরাধী হোক, তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটি তদন্তাধীন রয়েছে। সেই তদন্তের পরই আমরা বলতে পারব।’
এদিন সন্ধ্যায় আনভীরের আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। এটি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার বিচারপতি মামুনুন রহমানের বেঞ্চের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]