কলারোয়ার জনবহুল সোনাবাড়ীয়া বাজারের আধুনিক গণশৌচাগার দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ সময় বন্ধ এই গণশৌচাগারটি উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়নি দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ। উপজেলার বৃহৎ এই বাজারের সাধারণ মানুষ আর শতশত ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই।
আধুনিক গণশৌচাগারটি ২০১৩ সালের শেষের দিকে নির্মাণ হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ীরা। তবে, কোন অর্থবছরে, কত টাকা ব্যয়ে, কোন প্রকল্পের আওতায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে তার তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি গণশৌচাগারের বাহিরের দেয়ালে বা সামনের ফটকে কোথাও নেই নির্মাণের তথ্য সম্বলিত কোনো নেমপ্লেট।
মাতৃছায়া টেলিকমের স্বত্বাধিকারী রিফাদুজ্জামান সুমন বলেন, বৃহত্তম ও জনবহুল এই বাজারের আধুনিক গণশৌচাগার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হলেও নির্মাণের পর এটি ব্যবহারযোগ্য ছিল। কিন্তু তখন কেন জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়নি?
আলভী কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী শিক্ষক বি.এম আব্দুল আলিম বলেন, সবার জন্য গণশৌচাগারটি উন্মুক্ত করা খুব জরুরি। এতে করে ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব হবে। যতটুকু জানি বর্তমানে গণশৌচাগারের হাউজটির জরাজীর্ণ অবস্থা, প্রয়োজন হলে এটি সংস্কার করে হলেও দ্রুত উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
গ্রাম ডাক্তার মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা এটি উন্মুক্ত করার জন্য বিগত দিনে চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি পাঠান বাজার কমিটির সভাপতির কাছে, আর সভাপতির কাছে গেলে তিনি পাঠান চেয়ারম্যানের কাছে। এভাবেই দো’টানায় তালাবদ্ধ হয়ে আছে আধুনিক এই গণশৌচাগারটি।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে গণশৌচাগারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণ শেষে ইঞ্জিনিয়ার গণশৌচাগারের মূল দরজা তালাবদ্ধ করে রেখে যায় এবং এটির চাবি আমাদের কাছে দিয়ে যায়নি।
তৎকালীন বাজার কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মো. জিয়াউল হক বলেন, নির্মাণ কাজ শেষে ইঞ্জিনিয়ার গণশৌচাগার তালাবদ্ধ করে রেখে যাওয়ায় এটি আমরা উন্মুক্ত করতে পারিনি। সেই সময়ে বাজারের মাছ চান্নিতে একটি টয়েলেট ছিল, বাজারের লোকজন তখন সেটি ব্যবহার করতেন।
বর্তমান বাজার কমিটির সেক্রেটারী আলমগীর ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা গণশৌচাগারটি উন্মুক্ত করতে কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। কারণ, গণশৌচাগারের উত্তর সাইটে পুকুর পাড়ে যে হাউজটি আছে সেটির খুব জরাজীর্ণ অবস্থা। এটি সংস্কার না করে উন্মুক্ত করা সম্ভব নয়। আমরা বিগত সময়ের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের বিষয়টি দফায় দফায় জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। তবে, ইতোমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান (বেনজির হেলাল)কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি গণশৌচাগারটি উন্মুক্তের জন্য দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। গণশৌচাগার সংস্কারপূর্বক জনসাধারণের জন্য দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
ইউপি চেয়ারম্যান বেনজির হোসেন হেলাল বলেন, সোনাবাড়ীয়া বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আধুনিক গণশৌচাগারটি দীর্ঘ সময় ধরে তালাবদ্ধ। এ বিষয়টি নিয়ে বিগত দিনগুলোতে কোনো জনপ্রতিনিধির মাথা ব্যাথা ছিল না। আমরা ইতোমধ্যে গণশৌচাগারের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছি। ভিতরের কোনো জিনিস বা অবকাঠানো নষ্ট হয়নি। তবে, বাহিরে উত্তর পাশে (পুকুর পাড়ে) গণশৌচাগারের যে হাউজটি রয়েছে বলা যায় সেটি পুরোপুরি নষ্ট। অতি নিম্নমানের হাউজ হওয়ায় সেটি এখন আংশিক সংস্কার নয়, পুরোপুরি নতুনভাবে তৈরি করতে হবে। নতুন হাউস তৈরি না করে এটি চালু করলে দুর্গন্ধে আশপাশের ব্যবসায়ীরা এখানে থাকতে পারবে না। আমরা ইতোমধ্যে একটি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি। বরাদ্দটি পেলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার মাধ্যমে আজ শুনলাম। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব কেন এতদিন ধরে গণশৌচাগারটি বন্ধ। প্রয়োজন হলে এটি সংস্কার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]