হজে গিয়ে ভিক্ষা করা বাংলাদেশি মন্টু ছিলেন এলাকার ‘কুখ্যাত ডাকাত’- এমনটাই জানালেন এলাকাবাসী।
তারা জানান, এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মতিয়ার রহমান মন্টু ছিলেন ডাকাত সর্দার। এরপর হঠাৎই প্রতিবছর হজে যাওয়া শুরু করেন তিনি। কখনো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আবার কখনো ভারত কিংবা আফগানিস্তান হয়ে সৌদি আরব যান।
সম্প্রতি হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন বাংলাদেশি মতিয়ার রহমান ওরফে মন্টু। তার এমন কাণ্ডে বাংলাদেশি হাজিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা।
মতিয়ার রহমান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের মৃত হারুনর রশীদের ছেলে।
হজের সময় সৌদি আরবে ভিক্ষা করেই হয়েছেন পাঁচ বিঘা জমির মালিক।
এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, মতিয়ার রহমান ছাত্রাবস্থায় ডানপিটে ছিলেন। কুষ্টিয়াতে পড়ালেখা করার সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। নিজস্ব বাহিনী গঠনে অর্থ যোগাড়ের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাই করতেন। বিশেষ করে সিন্দুরকৌটা-বাওট মাঠ, কামারখালি-ছাতিয়ান এবং চোখতোলা মাঠে প্রতিনিয়ত ডাকাতি করতেন।
একবার ডাকাতির সময় জনগণের ধাওয়া খেয়ে বোমা বিস্ফোরণ করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন মতিয়ার। সেসময় একটি বোমা হাতের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়ে আহত হন মতিয়ার। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে চিকিৎসা দেয়। ওই সময় চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে তার দু'হাতের কব্জি কেটে ফেলেন।
তখন থেকে পঙ্গুত্বকে পুঁজি করে নানা অপকর্ম করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তার বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে ২০১২ ও ২০১০ সালে গাংনী থানায় দুটি মামলা হয়। কুষ্টিয়া থানায়ও তার নামে মামলা রয়েছে।
মামলাগুলো থেকে ইতোমধ্যে খালাস পান মতিয়ার রহমান ওরফে মন্টু।
মতিয়ার রহমানের বড় ভাই আতিয়ার রহমান জানান, গত বছর হজে যাওয়ার কথা ছিল মতিয়ারের। অফিসিয়াল জটিলতায় তিনি যেতে পারেননি। এ বছর তিনি নিয়ম অনুযায়ী হজে গেছেন। তবে সৌদিতে আটকের বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা।
মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন জানান, তার স্বামী হজ করতে গেছেন। কয়েকজনের মুখে স্বামীর আটকের বিষয়টি শুনেছেন। এখন তিনি বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা সম্ভব না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা অনেক ছোট অবস্থায় তার (মতিয়ারের) দুটি হাত কেটে ফেলা হয়েছে। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দু’হাতের কবজি উড়ে যায়। তার বিষয়ে এলাকার মানুষ এখনও সমালোচনা করেন। তবে তিনি মাঝে মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যান। কোথায় থাকেন কেউ নিশ্চিত নয়। তবে ভারত ও আফগানিস্তান হয়ে সৌদিতে হজ করতে যান বলে তার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে শোনা যায়। মতিয়ার রহমান চিকিৎসার অজুহাতে ভারতে গিয়ে সেখানেও নানা কারণ দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহাম্মেদ জানান, মতিয়ার রহমান এলাকায় কখনো ভিক্ষা কিংবা সাহায্য নেন না। দুটি হাত না থাকায় বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভিক্ষা বা সাহায্য চেয়ে এলাকায় জমি করেছেন। তবে তিনি সৌদি আরবে যা করেছেন তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। আমাদের জেলার সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, মতিয়ারের ব্যাপারে তিনি শুনেছেন এবং যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে মতিয়ারের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় দুটি মামলা ছিল যেটা থেকে আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, এমন ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি আমাদের এখতিয়ার বহির্ভুত।
মতিয়ার সৌদি আরবে যান ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেখানে ব্যাগেজ হারিয়ে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। এ ঘটনায় ২২ জুন মতিয়ার সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন। পরে এজেন্সির একজন সদস্য মতিয়ারকে মুচলেকায় ছাড়িয়ে নেন।
ওই হজযাত্রীকে গাইড করার মত কোনো মোয়াল্লেম এবং বসবাসের বাড়ি বা হোটেলও ছিল না। তাই গত ২৫ জুন ওই এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]