পৃথিবীর কোন জাতি পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে চায় না। প্রত্যেক জাতিরই স্বাধীনতা দিবস তাদের ইতিহাসের স্বর্ণক্ষরে লেখা। ২৬ মার্চ; ৫০ বছর পূর্বে এই দিনে ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে রক্ত¯œান লাল সবুজ পতাকার আশ্রয়স্থল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই দিনটি বাঙ্গালি জাতির গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা, গর্ব ও আনান্দের তাৎপর্য বহন করে।
শেষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, একটি উদার ও সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন ও শিক্ষার প্রসার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে বিনাশ করাসহ ন্যায় ভিত্তিক আদর্শে ১৯৭২ সালে বিজয়ী দেশের বহুল প্রত্যাশিত সংবিধান রচিত হয়। বিজয় অর্জিত হলেও জনগণের লালিত স্বপ্ন ও অর্থনৈতিক মুক্তি আজো অর্জিত হয়নি। দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফিতির আবার্তে জনজীবন আজ দুর্বিসহ ও বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটেছে নগন্য। সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা অক্টোপাসের মত জেকে বসেছে।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। ৫০ বছরে পা রাখতে চলেছে বাংলাদেশ; স্বভাবতই একটু আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা। সেখানে আমাদের মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গনিরোধ, বিচ্ছিন্ন থাকা ইত্যাদি। এরই মধ্যে লেগেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। স্কুল-কলেজ এখনও খুলছে না। লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। মানুষের মাঝে হতাশাও বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে অপরাধ। সরকারের উদ্যোগে এ ধরনের সামাজিক বিষয়কে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এত সব পরেও আমদের প্রাপ্তি কোন অংশে কম নয়। তবে ৫৪তম দেশে হিসেবে ভ্যাকসিন দিয়েছে। রোগ ব্যাধির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের গড় আয়ু আরো বেড়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর পদাচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে, কমেছে দরিদ্রতা। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁসি দিয়ে জাতিকে কলঙ্ক মোচন করা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী কল্পিত তলাবিহীন ঝুঁড়ির দেশ বাংলাদেশ, এখন আঠারো কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে। উপরন্তু সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়মিত তিন বেলা খাওয়ানোর পরও খাদ্যে উদ্বৃত্তে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গ্রামীন মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন, ব্যাংকের রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় প্রবৃদ্ধি আশাজনক অবস্থানে রাখা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী এবং প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই। স্বাধীনতার পর রপ্তানি আয়ের সত্তর ভাগ ছিল পাটের দখলে। বর্তমানে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের দখলে। ৪০ লাখের বেশি শ্রমজীবী এ খাতের পেশায় নিয়োজিত রয়েছে, যার আশি ভাগই নারী শ্রমিক। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশে আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেশি হবে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দিয়ে যারা অপমান-অপদস্থ করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অনেকের জন্য রোল মডেল।
লেখক: নাজমুল হক, আহবায়ক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]