কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও চাঁদপুরে বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বজ্রপাতের এসব ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টায় ও ১০ টায় কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন কৃষক ও একজন কৃষাণী।
অন্যদিকে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভোরে নেত্রকোনার মদন উপজেলা ২ জন, দুপুরের দিকে চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন এবং সকালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় একজন নিহত হন।
কিশোরগঞ্জ:
জানা গেছে, জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজীত দাস (৩৬) ও কলমা হাওরে ধান কাটার সময় স্বাধীন মিয়া (১৪) নামের দুই কৃষক নিহত হন।
এছাড়া মিঠামইন উপজেলার রাণীগঞ্জ কেওয়ারজোড় এলাকায় ফুলেছা বেগম (৬৫) নামে এক কৃষাণী নিহত হন। তিরি মৃত আশরাফ আলীর স্ত্রী।
নিহত ইন্দ্রজীত দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে এবং স্বাধীন মিয়া একই উপজেলার খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে।
কুমিল্লা:
অপরদিকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। তারা হলো-পয়ালগাছা গ্রামের প্রয়াত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) ও আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)। দুজনেই বড়হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হালকা মেঘ থাকা সত্ত্বেও শিশুরা মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
বরুড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া কুমিল্লার মুরাদনগরে কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। এ ঘটনার পর আহতরা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন-বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কোরবানপুর গ্রামের বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভুঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভুঁইয়া।
মিঠামইন থানার উপপরিদর্শক অর্পন বিশ্বাস জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির পাশে ধানের খড় শুকাচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কৃষক ইন্দ্রজীত দাস বাড়ির পাশে হালালপুর হাওরে ধান কাটছিলেন। এসময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই কৃষক ইন্দ্রজীত দাসের মৃত্যু হয়। একই সময় উপজেলার খয়েরপুর হাওরে কৃষক স্বাধীন মিয়া ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন।
সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার (২২) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে বাড়ির পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে যান রিমন। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বজ্রপাতের শিকার হন। ঘটনাস্থলেই রিমন ও তার সঙ্গে থাকা গবাদিপশুর মৃত্যু হয়।
চাঁদপুর:
কালবৈশাখী ঝড়ে চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে বিশকা রানী সরকার (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাহারে গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বিশকা রানী সরকার চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের পূর্বপাড়া মন্দির ওয়ালা বাড়ির হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
নেত্রকোণা:
নেত্রকোণায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে মাদরাসা শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- কলমাকান্দার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধুনন্দ গ্রামের বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম। তিনি উপজেলার গোবিন্দপুর বাজার এলাকায় স্থানীয় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন।
অপরদিকে আরাফাত মিয়া (৯) মদন উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। সে নিজ গ্রামের বাইতুল জান্নাত হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]