গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুলিশের থানা, ফাঁড়িসহ রেঞ্জ কার্যালয়গুলোতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা থেকে বাদ যায়নি পুলিশ সদর দপ্তরও। ঢাকার ৪৭টি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এইসব স্থানে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি অস্ত্র লুটও চলে। এতে নিহত ও আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তার অভাবে অনেক পুলিশ সদস্য আর কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাননি। একই সঙ্গে ফিরে আসেনি ট্রাফিক পুলিশও। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে।
পরে গত ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যারা ১২ আগস্টের মধ্যে কাজে যোগ দেবেন না, মনে করব তারা আর চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সড়কে ফিরে আসেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তবে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের (এইচআরএম) এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ঢাকাসহ সারা দেশের থানাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। তবে এখনো প্রায় ৯ শতাংশ পুলিশ কাজে যোগ দেননি। এসব পুলিশের অধিকাংশই বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন।
সারাদেশে বর্তমানে পুলিশের সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৪ জন। ৯ শতাংশের অনুপস্থিতির হিসাবে ১৯ হাজার ২২৯ জন পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। তবে এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত হতে পারেননি পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি জানান, ‘প্রায় ৯৯ শতাংশ কাজে যোগ দিয়েছেন। আশা করি বাকি ১ শতাংশ দ্রুতই কাজে যোগ দেবেন।’
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরই পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার বিভিন্ন ফিরিস্তি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসে। এতে ওই সব কর্মকর্তাদের নিয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সহিংসতা দমনে পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডও নজরে আসে সবার।
এসব কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের নানাভাবে প্ররোচিত করেছেন। তারা সরকার পতনের পর নানামুখী চাপে পড়েন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা আর স্ব-স্ব কর্মে ফিরে যাননি। তারা এখন কোথায় রয়েছেন তা অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জানেন না। তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে অপেশাদারত্ব প্রদর্শন করেছেন। কেউ আবার ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ডে পুরো পুলিশ বাহিনীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাতে আধিপত্য ছিল অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) বিপ্লব কুমার সরকার ও যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) খন্দকার নূরনবীর। তারা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অপারেশন ও পুলিশি কার্যক্রমে প্রভাব দেখাতেন। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলতে গেলে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে নিষেধ করতেন বলে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এই তিন কর্মকর্তাকে বদলি করে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে তারা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে জানান, তারা অফিসে আসেন না। তিনজনই দেশেই আছেন। কেউ দেশ ছেড়ে যাননি। হারুন ও বিপ্লবের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের সম্ভাবনা খুব কম। তবে খন্দকার নূরনবী যোগদান করতে পারেন।
সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পুলিশের মধ্যে বদলির হিড়িক পড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৮ দফায় কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। আরও অনেক কর্মকর্তা বদলি হবেন বলে জানা গেছে। এতে অনেকে বদলির আতঙ্কে রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৯ আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার ৩ হাজার ৩০৪টি। গুলি উদ্ধার হয়েছে ২৫ হাজার ৯৭৪টি। টিয়ারশেল ২১ হাজার ৩৯৫টি। এ ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৯৩৯টি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]