রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ পেলো ২০ শিল্প প্রতিষ্ঠান
বর্তমান সরকার উন্নয়নের যে গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধীরা তা বাধাগ্রস্ত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অবদানের ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন তথা দেশের উন্নয়ন হয়েছে এবং সামনেও এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের বিকল্প নেই।
আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এবং এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জনাব মো: জসিম উদ্দিন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী, পুরস্কার প্রাপ্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
শিল্পমন্ত্রী এ ধরনের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান/উদ্যোক্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এই স্বীকৃতি দেশে শিল্পখাত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। বাঙালি জাতিকে আত্মনির্ভরশীল ও শিল্পসমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি সব সময় বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর লক্ষ্যে তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এ অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় তাদের এ ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। অসীম দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার সাথে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপায়নের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরাধিকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে জাতির পিতার অজেয় স্বপ্ন। গত এক দশকে দেশে অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছেন। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি যা গত বছর ২৫ জুন তারিখে গাড়ী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা আরেকটি মাইলফক অর্জন করেছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকেট কেটে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমন করেছেন। আমরাও সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তে তাঁর সাথে ছিলাম। এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার মতো স্থাপনার সুফল অচিরেই মানুষ ভোগ করবে। রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে আমাদের সরকার পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আমাদের জিডিপি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মধ্যম আয়ের এই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগাতে হবে এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহ প্রদান করে বর্তমান সরকার বরাবরের মতই সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছে। এ শিল্প পুরষ্কারের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদানসহ জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।
উল্লেখ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ছয় ক্যাটাগরির জন্য মোট ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান/উদ্যোক্তাকে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হলো। এগুলো হচ্ছে- বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৫টি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৫টি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৪টি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ০১টি, কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ০২টি এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি। বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম হয়েছে রানার অটোমোবাইলস লি: এবং ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লি:, যৌথভাবে ২য় হয়েছে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি: এবং ফারিহা স্পিনিং মিলস্ লি:, ৩য় হয়েছে এনভয় টেক্সটাইল লি:। মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে নোমান টেরি টাওয়াল মিলস লি:, যৌথভাবে ২য় হয়েছে মাসকোটেক্স লিমিটেড এবং এপিএস ডিজাইন ওয়ার্কস লি:, যৌথভাবে ৩য় হয়েছে বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস্ লি: এবং অকো-টেক্স লি:। ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে মাসকো ওভারসিজ লি:, যৌথভাবে ২য় হয়েছে আব্দুল জলিল লি: এবং প্যাসিফিক সী ফুডস লি:, ৩য় হয়েছে মাধবদী ডাইং ফিনিশিং মিলস্ লি:। মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে শুধুমাত্র ১টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে, মাসকো ডেইরী এন্টারপ্রাইজ। কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ইন্টেলিজেন্ট কার্ড লি: এবং ২য় হয়েছে রং মেলা নারী কল্যাণ সংস্থা (আর এন কে এস)। হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লি:, ২য় হয়েছে মীর টেলিকম লি: এবং ৩য় হয়েছে সার্ভিস ইঞ্জিন লি:।
শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী ২০১৩’ অনুযায়ী ২০১৪ সালে ১ম বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ৬ষ্ঠ বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হলো। সম্প্রতি সরকার ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান নীতিমালা ২০২০’ প্রণয়ন করেছে। এতে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্য, ক্ষেত্র নির্ধারণ, পুরস্কার প্রাপকের সংখ্যা নির্ধারণ ও বিবেচনাসূত্র, মনোনয়ন যোগ্যতা, প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুতকরণ কমিটি, আবেদনপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ কমিটি গঠন ও কার্যপরিধি ইত্যাদি বর্ণিত আছে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পুরস্কার প্রাপ্তির পরবর্তী একবছর বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)