জীবন যুদ্ধে পরাজিত মুক্তিযোদ্ধা নড়াইলের মীরা রাণী সরকার


যশোর উপশহর এলাকার এফ ব্লকে (বাসা নং-২০৩) তার স্বামীর বাড়ি। ২ বছর আগে স্বামী পশুপতি মারা গেলে সতীনের সন্তানদের কারণে ওই বাসা ছেড়ে চলে আসতে হয় নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীরা রানীকে। তখন থেকে তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পাইকড়া গ্রামে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেই থেকে মেয়ের বাড়িতেই থাকেন। মেয়ে কবিতা সরকার ও জামাই গৌতম সরকার সাধ্যমত তাঁর সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। বর্তমানে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত।
রোগাক্রান্ত মীরা রানীকে দেখতে গেলে জীবন স্মৃতির নানা কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একবার যশোরে রওশন সাহেব এর বাড়ী এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু’র মেয়ে শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি তাঁর মাথার চুল আঁচড়িয়ে দিয়েছিলেন পরম মমতার সাথে। বঙ্গবন্ধু মারা গেলে ২ দিন কিছুই খেতে পারেননি।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু ডেকে নিয়ে ১ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন।
এমন নানা স্মৃতির কথা বলতে বলতে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, চৌগাছা সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে তিনি যুদ্ধ করেন। সেই যুদ্ধে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী নিহত হন। তার বাড়ি মাগুরায় ছিল।
তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তার নিকট হতে বাড়ির অংশ লিখে নেয় সতীনের পুত্ররা। তার একমাত্র মেয়ে কবিতা রানী সরকারকে নড়াইলের পাইকড়া গ্রামে বিয়ে দেয়া হয়। মন চাইলেও স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার মত কোন পরিবেশ নেই। তাই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি পাইকড়া গ্রামে কাটাতে চান।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মেয়ের বাড়িতে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি কেবলমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পান। এছাড়া আর কোন সুযোগ সুবিধা পাননি বলে জানান তিনি।
অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসা নিতে না পারার কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তার জামাই সেলুন দোকানী গৌতম কুমার সরকার বলেন, অভাবের সংসারে শ্বাশুড়ির চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে কষ্ট হলেও শ্বাশুড়ির সেবা করার মধ্যে তিনি আনন্দ খুজে পান।
তাঁর মেয়ে কবিতা রানী সরকার দুঃখের সাথে বলেন, সন্তান হিসেবে মায়ের সুচিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তাদের কাছে নেই। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মায়ের জন্য সকলের আশির্বাদ ও সুস্থতা কামনা করেছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হলেও আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক নারী মুক্তিযোদ্ধা মীরা রাণী সরকার (৬৮)। তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় ঠিকমত চিকিৎসা নিতে পারছেন না তিনি। তার মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ম-১১৪৭৭৬।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
