বান্দরবান সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলির সঙ্গে হেলিকপ্টার মহড়া
বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি ও ভারি অস্ত্রের ব্যবহারে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীমান্তবাসীরা। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার মহড়া দিতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার ভোররাতেও ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা গেছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে।
এদিকে অনুপ্রবেশের জন্য বাংলাদেশের সীমানার কাছে ও নাফ নদীতে অনেক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘাত আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই মিয়ানমার বাহিনীর চলমান সংঘাতের গুলি ও মর্টারশেলের গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকায়।
বুধবার মধ্যরাতে ও বৃহস্পতিবার ভোররাতে কয়েক দফায় দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলি ও ভারি অস্ত্রের ব্যবহারের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তবাসীরা। এ ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ফাত্রাঝিরি, রেজুআমতলী, গর্জবনিয়াসহ আশপাশের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলোর মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দার নূর মোহাম্মদ ও আব্দুর রশীদ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ১০টার দিকে মিয়ানমারের কয়েকটি হেলিকপ্টার তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজার থেকে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে সীমান্ত এলাকাগুলোতে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভারি অস্ত্রের কম্পনে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মাটির তৈরি কয়েকটি ঘরে ফাটল ধরেছে। ভয়ে আতঙ্কে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউই।
এদিকে মিয়ানমারের মংডু ও বলিবাজার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি অবস্থান করছে রোহিঙ্গারা। আবার কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা করে নাফ নদীতে অবস্থান করছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের কোনো বাধা দিচ্ছে না। এতে বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ সীমান্তবাসীর।
অপরদিকে গত মঙ্গল ও বুধবার ঘুমধুম বাইশফাঁড়ি বিওপির বিশেষ টহল দল অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের এক নারীসহ ৩ উপজাতি নাগরিককে আটক করে বিজিবি। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ঘুমধুম রেজুআমতলী সীমান্ত দিয়ে তাদের পুনরায় মিয়ানমারে পুশব্যাক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন- উখসওনো চাকমা, স্বামী অংখিও চাকমা এবং মংপ্রুচিং। তারা মিয়ানমারের মংডু জেলার বাসিন্দা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ফের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ। প্রতিদিনই গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবাসী। ইতোমধ্যে সীমান্তের অনেক মানুষ ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শুনেছি কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরা সর্বদা সজাগ রয়েছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরের ঘটনা। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)