শেখ হাসিনাকে রাখতে চাইছে না ভারতও!
মাত্র ২২ দিন আগেও শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তার সরকারের পতনের পর তিনি পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেন। চরম গোপনীয়তা ও কড়া সুরক্ষার মধ্যে ভারত সরকার আপাতত তার (সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানার) থাকার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই– কিন্তু তার সম্বন্ধে কী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছুই জানানো হয়নি। তবে সংম্লিস্ট সূত্রে জানিয়েছে, ভারত সরকারও আর চাইছে না এই মুহুর্তে শেখ হাসিনা ভারতে থাকুক। কারণ শেখ হাসিনাকে নিয়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক ধরে রাখা কঠিন হবে।
এদিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
এই পটভূমিতে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি যেটা আভাস পেয়েছে, তা হলো এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি ‘অপশন’ বা রাস্তা খোলা আছে।
প্রথম রাস্তাটা হলো, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনও দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।
দ্বিতীয় অপশনটা হলো, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’) দিয়ে ভারতেই এখনকার মতো রেখে দেওয়া।
তৃতীয় পথটার হয়তো এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়– কিন্তু ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে– কারণ দল বা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে তিনি দেশে ফিরে সংগঠনের হাল ধরতেই পারেন!
এর মধ্যে ভারতের কাছে অপশন হিসেবে প্রথমটাই যে ‘সেরা’– তা নিয়েও অবশ্য কূটনৈতিক বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, তিনি ভারতেই রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
এর পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনও অনুরোধ আসে– সেটা যে কোনও না কোনও যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত।
কাজেই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে ভারতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।
সুতরাং অন্যভাবে বললে– শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের সামনে উপরে উল্লিখিত তিনটে রাস্তাই খোলা থাকছে। এই প্রতিটি অপশনের ভালোমন্দ, গুণাগণ বা সম্ভাব্যতা কী বা কতটা– এই প্রতিবেদনে সে দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে।
ভারতের সর্বশেষ সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার এবারের ভারতে আসাটা ছিল ‘সাময়িক’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত ৬ই অগাস্ট দেশের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে ‘ফর দ্য মোমেন্ট’ (তখনকার মতো) কথাটা ব্যবহার করেছিলেন – এবং তারপর থেকে সরকার আর এ বিষয়ে নতুন করে কোনও ভাষ্য দেয়নি।
তার কারণ হলো, শেখ হাসিনাকে নিরাপদ কোনও তৃতীয় দেশে পাঠানোর চেষ্টা এখনও পুরোদস্তুর অব্যাহত আছে। তবে সেটা যদি চট করে সফল না-ও হয়, তাহলে দিল্লিও তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে ‘যতদিন খুশি’ ভারতে রাখতে কোনও দ্বিধা করবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, উই আর হোপিং ফর দ্য বেস্ট, প্রিপেয়ারিং ফর দ্য ওয়র্স্ট!
অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ভারত এখনও আশা করছে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালোটাই ঘটবে (তৃতীয় কোনও বন্ধু দেশে তিনি গিয়ে থাকতে পারবেন), কিন্তু সেটা যদি কোনও কারণে সম্ভব না হয় তাহলে সবচেয়ে খারাপটার জন্যও (শেখ হাসিনাকে লম্বা সময়ের জন্য ভারতেই রেখে দিতে হবে) দিল্লি প্রস্তুত থাকবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)