‘বাধ্য করা হচ্ছে না, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা’


কোন ভয় দেখিয়ে বা প্রভাবিত করে নয়, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নোয়াখালির ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে কম সংখ্যক রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। কিন্তু, কক্সবাজার থেকে সেখানে বসবাসের ভালো পরিবেশ এবং উন্নত জীবন পাওয়ার আশায় স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের আগ্রহ বাড়ছে।
বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
যেখানে, ভাসানচর ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া ঘিরে বিকৃত ও ভুল তথ্য প্রচার হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশের ভাল উদ্দেশ্যকে প্রশংসা করার পরিবর্তে কিছু মহল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে ভুল তথ্য প্রচারের পথ অবলম্বন করেছে বলেও জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এবং এনজিওর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই করা হচ্ছে। তারা কেউ জবরদস্তি বা বল প্রয়োগের প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। বরং রোহিঙ্গারা জানায়, তারা ভাসানচরের ইতিবাচক দিকগুলো দ্বীপে থাকা তাদের স্বজনদের কাছ থেকে শুনেই এখানে আসতে উৎসাহিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের মনোভাব জানিয়ে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে থাকার অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ ডিসেম্বর ১৬২০ জন এবং ২৯ ডিসেম্বর ১৮০৪ জনকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মূলত, স্বেচ্ছাসেবী নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে জিওবি’র প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই তাদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সরকার জোর দিয়ে বলে, ভাসানচর পুরোপুরি নিরাপদ এবং মানুষের আবাসনের জন্য উপযুক্ত। ৩০ বছরের পুরনো এই দ্বীপে স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকল্প, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই দ্বীপে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ইতোমধ্যে ভাসানচর ও নোয়াখালীর মধ্যে নিয়মিত সমুদ্র-ট্রাক সেবাও চালু করেছে বলেও জনানো হয়।
দ্বীপটির ভৌগলিক অবস্থানের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি সত্য যে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান দেশটিকে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার মতো নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি করেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে দেশের স্থিতিস্থাপকতা প্রশংসিত। কয়েক বছর ধরে কার্যকর দুর্যোগ পরিচালনার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ। ভাসানচরের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনেক বেশি অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংস্থা এইচআর ওয়ালিংফোর্ড দ্বীপের স্থিতিশীলতা জরিপের কাজ করেছে। মূলত, দ্বীপটিতে তাদের সুপারিশ এবং নকশা অনুযায়ী সব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। জোয়ার ভাটা এবং ঘুর্ণিঝড় থেকে দ্বীপ রক্ষায় তাদের পরামর্শে ১২.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পর্যাপ্ত উচ্চতর বাঁধ দিয়ে বন্যা এবং তীর সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আধুনিক হাইড্রোগ্রাফিক মনিটরিং এবং সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্কবার্তা আগেই পাওয়া যাবে এবং সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যাবে।
দ্বীপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। দ্বীপটি ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এছাড়া, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, মহিলা পুলিশ কর্মী, হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। যেখানে, চিকিৎসক, নার্সসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী এই দ্বীপের বাসিন্দাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া, প্রথম ধাপে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে ভাসানচরে তিনটি নতুন শিশুর জন্ম হয়েছিল। এই তিন নবজাতকের সাথে তাদের মায়েদের স্বাস্থ্যও ভাল আছে বলে জানানো হয়।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
