যৌনতা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেন যে নারী
ভারতীয় স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের যৌনতা বিষয়ক শিক্ষা একদমই দেওয়া হয় না। এ সংক্রান্ত শিক্ষার দায়িত্ব পরিবারের ওপরই ছেড়ে দেয় স্কুল কৃর্তপক্ষ। তবে অনেক সময় মা-বাবাও সন্তানকে কী এ ব্যাপারে সন্তানকে ঠিক কী শেখাবেন না নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তাদের জন্য মুসকিল আসান হতে পারে পল্লবী বারনওয়ান নামে এক নারী। সম্প্রতি বিবিসির সাথে আলাপচারিতায় পল্লবী তুলে ধরেছেন তার কাজ সম্পর্কে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তিন বছর আগে যৌনশিক্ষাকে স্কুলপাঠ্যের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা জারি করে।তবে সেই নির্দেশ এখনও পালন করেনি দেশের অর্ধেকের বেশি রাজ্য। যৌনশিক্ষা নিয়ে এই অন্ধকারে থাকা এবং রাখার মনোভাবকেই বদলাতে চান পল্লবী।
দিল্লির বাসিন্দা পল্লবী জানান, ভারতে যৌনতা নিয়ে আলোচনাতেও এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। অথচ আন্তর্জাতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতেই পর্নোগ্রাফির দর্শক সবচেয়ে বেশি। ভারত সরকার আইন করে এই ধরনের প্রাপ্তবয়স্ক ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার পরও দেশটিতে এধরনের ছবি দেখা হয় সবচেয়ে বেশি।
ভারতীয়দের এই অপরাধবোধের অন্ধকার থেকেই টেনে বার করতে চান পল্লবী। তিনি মনে করেন শরীর নিয়ে বা শারীরিক চাহিদা নিয়ে ভারতীয়দের সীমিত জ্ঞানই এই অপরাধবোধের কারণ, যা থেকে অপরাধেরও জন্ম নেয়।
যৌন অপরাধের সংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর অন্যতম ভারত। অথচ এ দেশেই যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় লজ্জার শেষ নেই। যেখানে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে সাত বছর বয়স থেকেই যৌন শিক্ষার পাঠ শুরু হয় সেখানে ভারতে এখনও স্কুলশিক্ষায় যৌনতার পাঠ্যক্রম নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গেছে।
পল্লবী নিজের পরিচয় দেন ‘সেক্স কোচ’ বা ‘যৌন প্রশিক্ষক’ হিসেবে। তিনি মনে করেন, যৌনতাকে অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে যায় শরীর নিয়ে আমাদের অজ্ঞানতা। দেশে বাড়তে থাকা যৌন অপরাধের একটা বড় কারণও এই মনোভাবই। পল্লবী নিজেও সেই অপরাধবোধের শিকার হয়েছেন বহু বার।
কিভাবে এই পেশা বেছে নিলেন জানতে চাইলে পল্লবী বলেন, ২০১২ সালে দিল্লির বাসে নির্ভয়ার গণধর্ষণের ঘটনা তার চোখ খুলে দেয়। তখন থেকেই যৌন প্রশিক্ষক হওয়ার যাত্রা শুরু পল্লবীর। এর আগে বিপনন বিভাগে কাজ করতেন তিনি। নির্ভয়ার ঘটনার পর ক্যারিয়ার বদলালোর কথা ভাবেন সিঙ্গেল মা পল্লবী। তার মনে হয়েছিল এ দেশ একটা মুক্ত মঞ্চ থাকা দরকার যেখানে মানুষ তাদের শারীরিক চাহিদা ও যৌনতা নিয়ে নানা সংশয়ের কথা খেলা মনে আলোচনা করতে পারবেন। সময় নিয়ে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নেন পল্লবী। বিশদে পড়াশোনা করেন।
কিন্তু যৌনতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে গেলে বাধা আসবে, তা পল্লবী জানতেন। তাই তিনি একটা ইনস্টাগ্রাম পেজ তৈরি করে সেখানে তাকে প্রশ্ন করতে বলেন। সেখানেই নিজের নানা অভিজ্ঞতা নিয়েও কথা বলতে শুরু করেন পল্লবী। তাতে কাজ হয়। মানুষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন।
বছর দুয়েক আগে টেড টকে কথা বলার জন্যও ডাকা হয় তাকে। পল্লবী জানিয়েছেন, টেড টকে শা়ড়ি পড়ে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। যৌনতা নিয়ে কথা বলায় যে কোনো পাশ্চাত্য ভাবনার দরকার হয় না, একজন ভারতীয় নারীও তার ইচ্ছের কথা সহজে বলতে পারেন, এটা বোঝানোই লক্ষ্য ছিল তার।
এর পর থেকে বহু মানুষ যোগাযোগ করেছেন পল্লবীর সঙ্গে। দিনে গড়ে অন্তত ৩০টি প্রশিক্ষণের অনুরোধ আসতে শুরু করেছিল তার কাছে। এরপর পল্লবীকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
পল্লবীর ছেলের বয়স আট বছর। ছেলেকে সহজ ভাবেই বড় করছেন। সময় মতো যৌনতার শিক্ষা তিনিই দেবেন ছেলেকে। কারণ তিনি মনে করেন, ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের থেকেই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল প্রাথমিক শিক্ষা নিতে পারে। তাদের অভিজ্ঞতাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখে তার সঙ্গে মানসিক যোগ স্থাপন করতে পারে তারা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)