খোঁজ মিলেছে পিয়াসাদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেলিংয়ে জড়িত আরও কয়েকজন নারীর
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অবৈধ কারবার পরিচালনার জন্য ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল রাজ, পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, মিশু হাসান, জিসানসহ ১০-১২ জন। তারা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও অফিসে নিয়মিত আসর বসান। এসব আসরে ধনিক শ্রেণির যুবক ও ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। তাদের চাহিদামতো সরবরাহ করা হতো সঙ্গী।
এসব সঙ্গীর অনেকেই শোবিজ জগতের অতিপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত মুখ। তাদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন চক্রের সদস্যরা। এমনকি দেশের বাইরেও পছন্দের সঙ্গীসহ আনন্দভ্রমণে পাঠাত এ চক্র। নিয়ন্ত্রণ করত মাদক ও চোরাচালান। এসবের মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন চক্রের সদস্যরা।
বুধবার এলিট ফোর্স র্যাবের হাতে গ্রেফতার রাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী নজরুল রাজ, নায়িকা পরীমণি; এর আগে গ্রেফতার মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, অস্ত্র ও সোনা চোরাকারবারি শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মিশুর সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানদের জিজ্ঞাসাবাদে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব তথ্য পেয়েছে।
এদিকে, মডেল পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সঙ্গে কাজ করেন এমন কয়েকজন নারী সদস্যের তালিকা পেয়েছে পুলিশ।
অভিযানে জব্দ করা মুঠোফোনের ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি দেখে তাদের আয়োজিত পার্টিতে অংশ নেওয়া প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে।
পিয়াসা ও মৌ-এর বিরুদ্ধে দায়ের মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বলেছে, লেটনাইট পার্টিতে ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি তুলে তারপর ব্ল্যাকমেলিংয়ে অংশ নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন অভিযুক্তরা। টাকা না দিলে ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, পিয়াসা ও মৌ ব্ল্যাকমেলিং সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের এই চক্রের অধিকাংশ সদস্য ঢাকার বাইরের নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মূলত তাদের মডেল হওয়ার ইচ্ছা ছিল।
কিন্তু মডেলিং ও অভিনয় জগতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে না পেরে তারা ব্ল্যাকমেলিংয়ে জড়িয়ে পড়েন।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় যখন করোনার কারণে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই তারা অভিজাত ফ্ল্যাটে পার্টির করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে পিয়াসার ফ্ল্যাটেও নিয়মিত পার্টি হতো। ইয়াবা ও মদ্যপানের সব আয়োজন থাকত সেখানে।
জানা গেছে, পিয়াসার একাধিক দামি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। তার বাবা ছিলেন শুল্ক বিভাগের একজন কর্মচারী। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। পিয়াসা রাজধানীর বারিধারা আবাসিক এলাকার ৯ নম্বর রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। এটি বিলাসবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্টে, যার সার্ভিস চার্জ ও সিকিউরিটি বিল বাদে শুধু ফ্ল্যাটভাড়াই দেড় লাখ টাকার মতো। বিশাল এই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকেন। তার বাসায় রান্না করাসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজের জন্য কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আছে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মডেল মৌ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ব্ল্যাকমেল করে বিভিন্ন বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, মৌ ক্লাবে পার্টির আয়োজন করতেন। সেখানে কৌশলে মুঠোফোন দিয়ে পার্টির বিভিন্ন দৃশ্য ভিডিও করতেন। কয়েক দিন পর সেই ভিডিও ওইসব ব্যক্তিদের পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। মানসম্মান ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে অনেকেই চক্রটিকে টাকা দিয়ে ভিডিও ডিলিট করাতেন। আর যারা টাকা দিতে রাজি হতেন না, তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওইসব ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। একপর্যায়ে তারাও টাকা দিতে বাধ্য হতেন।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পিয়াসা ও মৌয়ের সঙ্গে আরও অনেক নারী জড়িত। তাদেরকেও খুঁজে বের করা হচ্ছে। আর তাদেরকে যারা মদদ দিয়েছে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)