আশাশুনি উপজেলা নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর বিরামহীন প্রচারণায় উৎতপ্ত ভোটের মাঠ
আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর বিরামহীন প্রচার প্রচারণা উৎতপ্ত ভোটের মাঠ \ সংঘাতের শঙ্কা \ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শেষ।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আশাশুনি উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডে ৮৭ ভোটকেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে সর্বমোট ২,৩৯,২৩৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ উপজেলায় মোট ভোটারের ১,২১,৯৭৯ জন পুরুষ, ১,১৭,২৩০ জন নারী ও ১ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে এ উপজেলা থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ৪জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৫জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী অর্থাৎ ৩টি পদের বিপরীতে সর্বমোট ১৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন।
যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম চিংড়ী মাছ প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম ঘোড়া প্রতীক এবং শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে মাঠের লড়াইয়ে রয়েছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী টিউবওয়েল প্রতীক, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিএম আল ফারুক টিয়া পাখি প্রতীক, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এনএমবি রাশেদ সারোয়ার শেলী চশমা প্রতীক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসমাউল হোসাইন মাইক প্রতীক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সাহেব আলী তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেমা খাতুন মিলি কলস প্রতীক, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সীমা পারভীন হাঁস প্রতীক, জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহেরুন্নেছা ফুটবল প্রতীক ও সদ্য সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মারুফা খাতুন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
এসব প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট এবং দোয়া চেয়ে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ পথসভা উঠান বৈঠক এবং নির্বাচনী সভা করে চলেছেন।
(রবিবার) রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টল, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় আর রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখেও চলছে আগামী ২১মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা। কখনো কখনো আবার চায়ের আড্ডায় বা রাজনৈতিক পরিচয় এর সূত্র ধরে প্রার্থীদের ভালো-মন্দ দিক, জনসেবা, যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এদিকে, এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা বিরাজ করছে স্বয়ং প্রার্থীদের মাঝে।
এছাড়াও প্রার্থী থেকে কর্মী সমর্থকদের মাঝে বাক যুদ্ধ যেন কোনভাবেই থামছেনা। চলমান এ বাকযুদ্ধ যে কোনো সময় রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই উৎতপ্ত হচ্ছে ভোটের মাঠ। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা তিনজন ও স্বতন্ত্র এক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তবে বিএনপি ও জামায়াত অংশগ্রহণ না করায় যেমন কমতে পারে ভোটার উপস্থিতি তেমনি সংঘর্ষে জড়াতে পারে আওয়ামী লীগের ঘরোয়া প্রার্থীরা।
এ উপজেলায় বিগত ৩টি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও সর্বশেষ নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। মোস্তাকিমের দুর্গে হানা দিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠে নেমেছেন আলহাজ্ব এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম ছিলেন খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তী দুবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। বর্তমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক নিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন মাঠে। অ্যাড. শহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবী।
অপরদিকে, এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চমক দেখানোর প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের। দলীয় কোনো ব্যানার, পদপদবি বা প্রতীকের ব্যবহার না থাকলেও সরকার দলীয় দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম এ দুই প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে একধরনের স্নায়ু যুদ্ধ। যে কোনো সময় এই টানটান স্নায়ু যুদ্ধ রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে।
আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেনুজ্জামান হোসেন জানান, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম টানা তিনবার উপজেলা পরিষদের চেয়ার দখল করলেও তেমন কোন উন্নয়ন না করায় ভোটারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সাধারণ ভোটারা চায় নতুন মুখ। সে ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী।
কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর সাকি পলাশ অভিযোগ করে বলেন, কুল্যার চিংড়ি মাছ সমার্থক সাজ্জাদুল হক টিটুল ও তেতুলিয়ার মন্টুর নেতৃত্বে ইউপি সদস্য বশির আহমেদ টুকু, রিপন, রায়হান,শুভ,বাবলু,তুহিনসহ একটি বাহিনী হিন্দু বসবাস এলাকায় গিয়ে চিংড়ি মাছ প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য হমকী দিচ্ছে। এমনকি ঘোড়া প্রতীকের পথসভা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
আনারস প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাড.শহিদুল ইসলাম পিন্টু জানান, ২৪টি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপ‚র্ণ। তাই তিনি স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।
সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম জানান, প্রতাপনগর ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্র, দরগাহপুর ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্র, বুধহাটা ইউনিয়নের ৪টি কেন্দ্র,শোভনালী ইউনিয়নের ৪টি কেন্দ্র,আনুলিয়া ইউনিয়নের ১টি কেন্দ্র, কাদাকাটি ্ইউনিয়নের ৪টি কেন্দ্র, শ্রীউলা ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্র, বড়দল ইউনিয়নের৩টি কেন্দ্র ও কুল্যা ইউনিয়নে ৩টি কেন্দ্র কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নেওয়ার আশঙ্কা করছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন আমার ঘোড়া প্রতীকের নেতাকর্মীদের হুমকী দেওয়া হচ্ছে। তিনি সকলের গ্রহন যোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী জানান, এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ১১ টি ইউনিয়নে ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়ন থাকবে।
এদিকে, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা নিরবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তবে সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
এখন দেখার বিষয় আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহন শেষে তিন পদের বিপরীতে কোন তিন প্রার্থী বিজয়ের শেষ হাসিটা হাসতে পারেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)