কোটি টাকায় বিক্রি হল সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ
ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চারজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই (১২ মে) রবিবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী ঘোষিত হতে যাচ্ছেন শামস ইশতিয়াক শোভন।
অপরদিকে সোনিয়া পারভীন শাপলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় সদ্য সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলামও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ঋণ খেলাপের দায়ে প্রার্থীতা বাতিল হয় অ্যাড. তামিম আহমেদ সোহাগের। পরে তিনি আপিলে টিকে যান।
সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতদ্বন্দ্বিতায় আছেন মাঠে আছেন পাঁচজন প্রার্থী। যথাক্রমে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন, অ্যাড. তামিম আহমেদ সোহাগ, গোলাম মোরশেদ, সুশান্ত মন্ডল ও জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান বাবু।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন যথাক্রমে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ তানভীর হুসাইন সুজন, ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা, জাতীয় পার্টির মো: বদরুজ্জামান এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসন থেকে ট্রাক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকালী শেখ আফসার আলীর ছেলে শামস ইশতিয়াক শোভন।
(১২ মে) রবিবার শামস ইশতিয়াক ছাড়া বাকি তিনজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে শামস ইশতিয়াক শোভন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
এদিকে, ছাত্রলীগের সাবেক দুই শীর্ষনেতাসহ তিনজনের মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
টাকার বিনিময়ে দুই ছাত্রনেতাসহ তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের আগের দিন ১১ মে শনিবার থেকেই অভিযোগ ওঠে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চারজন প্রার্থীর মধ্যে একজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে তিনজন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি। যা এখন শহরে টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে। জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনার।
অভিযোগ উঠেছে, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে শামস ইসতিয়াক শোভন অপর তিন প্রার্থী তানভীর হোসাইন সুজনকে (সর্বশেষ ভাইস চেয়ারম্যান) ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা ১৫ লক্ষ ও বদরুজ্জামান বদুকে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করিয়েছেন।
অন্যদিকে, রবিবার সকাল থেকে জেলার সদরের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অসহযোগিতার জন্য’। উদাহরণ হিসেবে রেজা বলেন, ‘‘ধুলিহরে একটি অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম।
সেই জনসভায় আমাকে প্রকাশ্য বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীষ নেতৃবৃন্দ’।’ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থীর বিষয়টি সমম্বয় করা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছিল বলে মন্তব্য করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাা।।
এদিকে শনিবার ১১ মে সন্ধ্যা থেকে জেলা সদরে তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রাথীর মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে ব্যাপক শোরগোল, আলোচনা, সমালোচনা চলছে দিনভর। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মারুফ তানভীর হুসাইন সুজন ১২ মে রবিবার বেলা ১টায় নিজের ফেসবুক পেজে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন মর্মে লম্বা স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন। তানভীর হুসাইন সুজন সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক।
তানভীর হুসাইন সুজনের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বও বন্ধ পাওয়া যায়।
সামগ্রিক বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘সামস ইশতিয়াক শোভন বিএনপি ঘরানার লোক। অথচ তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। বিষয়টি দুঃখজনক’।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া শামস ইশতিয়াক শোভনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে টাকা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)