জুলাই-আগস্টে লেডি হিটলার হাসিনার নৃশং*স গণহ*ত্যা, বুলে*টে শহিদ ১৫৮১
![](https://kalaroanews.com/wp-content/uploads/2025/02/0.jpg)
![](https://kalaroanews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তার নেতাকর্মীদের বুলেটে ১৫৮১ জন শহিদ হয়েছেন। এর মধ্যে উলে্লখযোগ্যসংখ্যক ছিল শিশু। এছাড়া গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ছয়জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ১৯৯ জন নিহত ও ৬৯৭৯ জন আহত হয়। ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক আন্দোলন দমন ও ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য গুম-খুনকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। হাসিনার ক্ষমতার শেষ পাঁচ মাসেও অন্তত ২০ জনকে গুম করা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য। সোমবার সংগঠনটির ওয়েসাইটে ৫৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এদিকে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে নির্বিচারে হত্যা এবং ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের শিকার এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হতাহতের পরিবারের সদস্যরা হাসিনার এমন শাসনকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করছেন। হাসিনাকে ‘লেডি হিটলার’ আখ্যায়িত করে তারা বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা নিয়েই দেশ ধ্বংসের পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা হিটলারের চেয়েও বেশি অত্যাচার করেছে।’
উল্লেখ্য, অ্যাডলফ হিটলার ইতিহাসের এক ভয়ংকর একনায়কের নাম। তিনি ১৯৩৩ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন। তারই নির্দেশে দেশটির নাত্সি বাহিনী বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করে। প্রতিষ্ঠা করেন একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্বরোচিতভাবে নাত্সিরা ৬০ লাখের বেশি ইহুদিকে খুন করে, যা থেকে অবোধ শিশু ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পায়নি।
অধিকারের প্রতিবেদনটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে কর্তৃত্ববাদী শাসক হাসিনার ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের উলে্লখযোগ্য অংশ। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে ৯ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালের উল্লেখযোগ্য অংশ। আর তৃতীয় ভাগে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসিনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জোর করে ক্ষমতায় থাকতে হাসিনা সরকার সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। বিচার বিভাগেও অযোগ্য এবং দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করে। এই সময়ে হাসিনা নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অস্বচ্ছ, বিতর্কিত ও প্রহসনমূলক করার মধ্য দিয়ে কেড়ে নেয় জনগণের ভোটাধিকার।
এছাড়া নাগরিকদের বাক, চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে হাসিনার সময়ে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং দুবৃত্তদের হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিবর্তনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ : প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ৫ আগস্ট কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশ-র্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বহু নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। শিক্ষার্থীদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে তত্কালীন সরকার ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে এক পুলিশ সদস্য সরাসরি গুলি করে হত্যা করে।
আবু সাঈদকে হত্যার পর সারা দেশে ছাত্ররা রাস্তায় নামে। তাদের ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী দের একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। সরকার এই সময় পুলিশ, বিজিবি ও বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াতকে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে জাতিসংঘের নামযুক্ত সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির খসড়া তালিকা অনুযায়ী জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শিশুসহ ৮৩৪ জন নিহত হয়েছেন।
১০৫ জন শিশু নিহত হয় : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চরম আকার ধারণ করলে স্থানীয় সাধারণ জনগণ, এমনকি শ্রমিক ও রিকশাচালকরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের এই সময় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় হাসিনা সরকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে গুলি করে এবং তাদের হত্যা করে। গুলিবদ্ধি শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেওয়ার সময় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ বাধা দেয়। এতে আহত অনেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটে। ১৯ জুলাইয়ের পর নির্বিচার গুলিতে শিশু সামির, আবদুল আহাদ, রিয়া গোপ, মোহাম্মদ রাসেলসহ ১০৫ জন শিশু নিহত হয়।
সাড়ে পাঁচশ জনের চোখ নষ্ট : অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের হত্যা করার পর তাদের লাশগুলো ভ্যানে স্তূপ করে রেখে তা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নির্বিচার ও টার্গেট করে গুলিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শিশুসহ ৮৩৪ জন নিহত হন। এছাড়া গুলিবদ্ধি আহতদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, শ্রমিক ও দিনমজুর। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫৫০ জনের চোখ নষ্ট হয় গেছে। জীবন রক্ষার্থে তাদের কারও হাত-পা বা অন্য কোনো অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। এই আন্দোলন চলাকালে মোট ৪৪ জন পুলিশ নিহত হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ : প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে পতিত কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকার এবং তার দল আওয়ামী লীগ চরম নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল। এই সময় নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহত হয়েছে। এমনকি বিচার বিভাগও অযোগ্য এবং দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
একদলীয় প্রহসনমূলক নির্বাচন : পতিত হাসিনা সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়; যা ছিল সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অস্বচ্ছ, বিতর্কিত ও প্রহসনমূলক করার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এই অপকর্মে সরকারের তত্কালীন নির্বাচন কমিশনগুলো অংশীদার হয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। এছাড়া এক তরফা ও প্রহসনমূলক নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপি-জাময়াতসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা-মামলা ও নির্বাচন চালানো হয়।
দুর্নীতির ব্যাপকতা : প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সদস্য, তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সরকার সমর্থক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ অবৈধভাবে লুটপাট করে ও বিদেশে পাচার করেছে।
বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন : ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতাকর্মী, ভিন্ন মতাবলম্বী ও ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকার। প্রতিটি প্রহসনমূলক নির্বাচন কেন্দ্র করে হাসিনা সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গণগ্রেফতার করে, যাতে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। এ সময় পুলিশ নির্যাতন করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছে অধিকার। পুলিশের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ৭ জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের এক হাজার ৮০০ নেতা-কর্মীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তয়ান ও সহিংসতা : হাসিনার শাসনামলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ১৯৯ জন নিহত ও ৬৯৭৯ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর তাদের নেতা-কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ পেয়েছে অধিকার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকলেও অধিকাংশই দায়মুক্তি ভোগ করে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে টর্চার সেল বানানোর অভিযোগ রয়েছে বলেও এতে বলা হয়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মানবাধিকার লংঘন : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃত্বক বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত একটি রক্তাক্ত সীমান্তে পরিণত হয়েছে প্রতিবেদনে বলা হয়। ২০২৪ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ২৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা এবং ২৯ জনকে আহত করেছে। নিহত ২৪ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২১ জনকে গুলি করে এবং তিনজনকে নির্যাতন করে বিএসএফ হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আহত ২৯ জনের মধ্যে ২৬ জন গুলিতে, ২ জন নির্যাতনে এবং একজন বিএসএফের ছোড়া গ্রেনেডে আহত হন।
ভারতের আগ্রাসী নীতি : প্রতিবেদনে বলা হয়∏বাংলাদেশে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্কালীন সরকারকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দেয়। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়াসহ দেশে যে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় তার জন্য ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীও অনেকাংশে দায়ী বলে এতে দাবি করা হয়। হাসিনা সরকার বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বহু গোপন চুক্তি সম্পাদন করে দিল্লীর সঙ্গে বলেও প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রতিবেদনে ৯ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অর্ন্তবর্তী সরকারের সময়কালের অংশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে বিগত ১৫ বছর সময়কালে হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলের মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগ দায়েরের কার্যক্রম শুরু হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলের কোন্দলে ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বেতন বৃদ্ধি, বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও রাস্তা অবরোধ করেন। বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত হন।
১০ সুপারিশ : প্রতিবেদনে উল্লেখ করা গণহত্যা ও গুম খুনের বিচারসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:
১. গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন এবং অমানবিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সম্মুখীন করতে হবে। ২. নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ বাস্তবায়ন করা এবং রিমান্ডের নামে নির্যাতন বন্ধের জন্য ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপসোনাল প্রটোকল অনুমোদন করতে হবে। ৩. গুম থেকে সব ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘের কনভেনশন অনুসারে গুমকে অবিলম্বে অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে। গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সশস্ত্র বাহিনী বা সরকারে তাদের পেশাদারি বা রাজনৈতিক অবস্থন নির্বিশেষে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। এছাড়া গুমের শিকার যাদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। গুমের শিকার ব্যক্তিরা যারা ইতোমধ্যেই ফিরে এসেছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৪. জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইনকে প্যারিস নীতিমালা অনুযায়ী সংস্কার করতে হবে। ৫. কারা কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা নির্বিশেষে তাদের শৃঙ্খলাভঙ্গ, অবহেলা, দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করতে হবে। ৬. সর্বস্তরে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিকসহ সব মানবাধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। ৭. বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬, সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এবং সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৪সহ সব নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল করা। ৮. নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য সালিশ বন্ধ করতে হবে এবং ভুক্তভোগী নারীর বিচার প্রাপ্তির জন্য ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। ৯. সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক হত্যা, নির্যাতনসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিটি হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সরকারকে ভারতের শাসক গোষ্ঠীর ওপর চাপ প্রয়োগ করা জরুরি। ১০. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিশনগুলোকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট, টেকশই এবং কার্যকর সুপারিশ পেশ করতে হবে, যা পরবর্তী নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
![](https://kalaroanews.com/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
![](https://kalaroanews.com/wp-content/uploads/2023/09/kalaroa-homio-hall-1024x549.jpeg)