নড়াইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষা চাষ
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল: নড়াইলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষা চাষ। নড়াইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘রিলে’ পদ্ধতির সরিষা চাষ।রিলে’ বা ‘সাথী’ পদ্ধতির ফলে দুই ফসলি জমি এখন তিন ফসলিতে রূপান্তর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নড়াইল জেলাতেও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ বেড়েছে।
‘রিলে’ পদ্ধতিতে মূলত আমন ধানের সঙ্গে উন্নত জাতের সরিষা চাষাবাদ করা হয়। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, ‘রিলে’ পদ্ধতি অনেকের কাছে শুনতে নতুন মনে হলেও দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কম খরচে ভালো উৎপাদন হওয়ায় কৃষকেরা এ পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় রিলে পদ্ধতিতে এবার দ্বিগুণ সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। তাই ভালো ফলনেরও স্বপ্ন বুনছেন কৃষক।
নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের টুকু মিয়া বলেন, আমরা আমন ধান কাটার আগেই সরিষার বীজ বুনি। তবে এই পদ্ধতিতে বীজ বুনতে দেখে অনেকের সন্দেহ ছিল, সরিষা হবে কিনা, এ কাজে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সহযোগিতা করেন। এখন ভালো সরিষা দেখে মন ভরে যায়। রিলে পদ্ধতিতে সরিষার ভালো ফলন দেখে এলাকার অনেকে উদ্বুদ্ব হয়েছেন।
একই গ্রামের দীপক কুমার রায় জানান, তারা আমন ধান কাটার আগেই বারি-১৪ জাতের সরিষার বীজ বপন করেন। সরিষা ঘরে তোলার পরই এ জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। রিলে পদ্ধতির ফলে জমিতে এখন তিন ফসলের চাষাবাদ করা যাচ্ছে। তারা আগামিতে মাঠ ভরে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বগুড়া গ্রামের সিদ্দিক শেখ বলেন, ৩৬ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। তবে গত ৭ ডিসেম্বরের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন অবস্থা বেশ ভালো। সরিষা উঠে গেলে ধান চাষ করব।
শহিদুল ইসলাম বলেন, সরিষা খুব লাভজনক। ১২০ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি ভালো ফলন পাব। সুধান বিশ্বাস বলেন, সরিষার দাম বেশ ভালো। প্রতিমণ চার হাজার টাকা। আমি ২৮ শতক জমিতে সরিষা বুনেছি।
এ ব্যাপারে নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প’ এর আওতায় রিলে পদ্ধতিতে উন্নত জাতের বারি সরিষা-১৪ চাষাবাদ নড়াইলে বেশ সাড়া ফেলেছে। এতে করে একই জমিতে রোপা আমন ধানের পাশাপাশি সরিষা চাষ হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমন ধান ধানকাটার আগ মুহূর্তে নাড়া বা বিছালীর মধ্যেই উন্নত জাতের সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ধানকাটা শেষ হলে সরিষা গাছ বড় হয়ে যায়। এতে নতুন করে জমি যেমন চাষাবাদ প্রয়োজন হয় না, তেমনি সাধারণভাবে সরিষা চাষাবাদের চেয়ে রিলে পদ্ধতির সরিষা আগে ঘরে তুলতে পারেন কৃষকেরা। ফলে রিলে পদ্ধতির সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, সরিষা উঠে গেলে এ জমিতেই বোরো ধান চাষাবাদ করা হবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সদর উপজেলা কৃষি অফিস রিলে চাষাবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকলে সদরের বাঁশগ্রাম ও গোপালপুর বিলে গিয়ে রিলে চাষাবাদের সাফল্য দেখে এসেছি।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, এ মৌসুমে নড়াইল জেলায় ১২ হাজার ৮৮৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। গত বছর এ পদ্ধতিতে আবাদ হয়েছিল দেড় হাজার হেক্টরে। রিলে এবং সাধারণ পদ্ধতি মিলে গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে মোট আবাদ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে।
তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন সবাই। আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা সম্পন্ন হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি জমি কাজে লাগাতে চাই। ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই। এছাড়া এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে, সেই লক্ষে নড়াইল কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)