নড়াইলে গ্রামবাংলার ভাঁটি ফুল প্রাকৃতিকভাবে সেজেছে বর্ণিল সাজে


নড়াইলে গ্রামবাংলার ভাঁটি ফুল প্রাকৃতিকভাবে
সেজেছে বর্ণিল সাজে। ভ কাছে সুপরিচিত একটি উদ্ভিদ। সারা দেশে ভাঁট উদ্ভিদ জম্মে থাকে।
বিশেষ করে নড়াইলের গ্রামঞ্চলে মেঠোপথের ধারে, জঙ্গলে, রাস্তার দুইধারে ও পতিত জমিতে। এদের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষনীয়। এই উদ্ভিদ অবহেলায় ও অযন্তে চাষ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি গ্রামবাংলার অতিপরিচিত একটি বুনো উদ্ভিদ। কবি জীবনান্দ দাশ তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘ভাঁটি আশঁ শ্যাওড়ার বন বাতাসে কী কথা কয় বুঝি নাকো, বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে; পৃথিবীর কোন পথে দেখি নাই হায়, এমন বিজন’ পথের ধারে দুপ্রান্তে প্রাকৃতিকভাবে জম্ম গ্রহন করে থাকে। যখন পথের ধারে এই ভাঁটফুল ফুটতে থাকে তখন পথের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ঋতু চক্রের আবর্তনে নয়নাভিরাম ভাঁট ফুলের এক বর্ণিল আয়োজন নিয়ে এখন সেজেছে প্রকৃতি। সড়কের পাশে, দিঘীর ধারে কিংবা বনে-বাদাড়ে এখন সারি সারি ভাঁট গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে বসন্তে ফোটা ভাঁট ফুল। এই ভাঁট ফুল কিছুটা হলেও প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এখন ভাঁট ফুল সেজেছে বর্ণিল সাজে প্রকৃতিতে। চোখ জুড়ানো বর্ণিল ফুল সবার মনকে নাড়া দেয় খুব গভীরভাবে।
গ্রামীণ প্রকৃতির কাছে গেলেই চোখে পড়বে এই বর্ণিল ভাঁট ফুল। যে কোন প্রকৃতি ও ফুল প্রেমী মানুষ এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে। পথের ধারে ভাঁট ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ,পদচারীরাও থমকে দাঁড়ায়। প্রতি বছর বসন্তে সাদা পরী হয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় ভাঁট ফুল। ভাঁট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান, সাধারণত ২-৪ মি.লম্বা হয়। পাতা ৪-৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ভাঁট পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদন্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশেল আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোটে।
এই ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। ফুল ফোটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে। ভাট গাছ শখের বশে বাগানে বা ফুলের টবে কেউ লাগায় না। বসন্ত এলেই ফুল ফুটে। সাদা-লাল ফুলের সমাহার বন প্রান্তর আলোকিত করে তোলে। অপরুপ মোহনীয় সৌন্দর্যে সকলের নজর কেড়ে নেয়। ভাঁট ফুল বা বনজুঁই এলাকা ভিত্তিক ভাইটা ফুল,ঘেটুফুল,ভাতফুল নামেও পরিচিত। ফুলের চারটি পাঁপড়ি সমন্বয়ে গোড়ার দিকটা হালকা বেগুনি রঙের। প্রতিটি ফুলে চারটি করে পুংর্কেশর সামনের দিকে বেড়িয়ে আসে।
বসন্তকাল ভাঁট ফুলের ভরা মৌসুম। অনাদরে ফুটলেও এর রুপে মুগ্ধ সকলেই। পলাশ, কৃষ্ণ, মান্দার বসন্তে মানুষের মন রাঙ্গিয়ে মাতোয়ারা করে তোলে আর ভাঁটফুল এনে দেয় সরলতা ও শুভ্যতা। বুনো সৌন্দর্য ছড়িয়ে গ্রামবাংলার মাঠ প্রান্তর শুভ্রতার আলোয় আলোকিত করে। এর ফুলের থোকা দিয়ে গ্রামের কিশোর ও কিশোরি পাতা দিয়ে তৈরী মুকুটের শোভা বাড়ায় ও খেলার ঘর সাজায়। বাড়ীর আনাচে – কানাচে ফুটে থাকা ভাঁটফুল গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েদের খেলার উপকরণ। তেতো স্বাদের ভাঁটগাছের আছে অনেক ঔষধি গুন। ছোট মণিদের মুখের অরুচি ও পেটফাপা সারাতে গ্রামের মায়েরা ভাঁটপাতার রস পান করান। ক্ষত সারাতে,লিভার ভালো রাখতে,জ্বর প্রতিরোধে ও মাংস পেশির ব্যাথা সারাতে ইহা ব্যবহার করা হয়। যৌন রোগ সারাতে গ্রামের কবিরাজরা ভাঁটগাছের মূল ব্যবহার করেন। বসন্ত শেষে ইহার ঝোপ কেটে গ্রামের দরিদ্র মেয়েরা লাকড়ি হিসাবে ব্যবহার করেন। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি,ঘরবাড়ী তৈরীসহ বিভিন্ন কারণে উজার হচ্ছে ভাঁট গাছ। ঔষধি গুন ও বুনো সৌন্দর্য উপভোগে ভাঁটফুল রক্ষা করা জরুরি। কেননা সৌন্দর্য মানুষের মনকে আলোকিত করে তোলে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
