প্রেমের ফাঁদ পেতে রিয়াদের প্রতারণা : হাতিয়ে নেয় ৬০ তরুণীর ৪০ লাখ


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া পরিচয় দিয়ে তরুণীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়াই তার পেশা। এরপর মোবাইলে কথোপকথনের অডিও/ভিডিও রেকর্ড করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রতারণা করতেন।
এভাবে গত দুই বছরে কমপক্ষে ৬০ তরুণীর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়েছেন মো. মেহমুদ হাসান রিয়াদ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি জব্দ করা হয়েছে। ডিবি বলছে, ৩১ বছর বয়সী রিয়াদ নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতেন। তারপর কৌশলে কথার জালে ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে আপত্তিকর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিতেন। তাছাড়া কথা বলার সময় অশ্লীল বিষয়ের অডিও রেকর্ড করে রাখতেন।
ভিডিও কলে কথা বলে সেগুলো স্ক্রিন রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করতেন। তারপর বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী দাবি করতেন। ভিকটিম প্রতারকের ফাঁদ বুঝতে পেরে যখন সম্পর্ক রাখতে চাইতেন না তখন ধারণ করা ওই অডিও/ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করতেন। রিয়াদের প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন সালমা (ছদ্মনাম) নামে এক তরুণী। তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন রিয়াদ।
বুধবার সালমা ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, রিয়াদের সঙ্গে সালমার ছয়-সাত মাস আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। তখন রিয়াদ নিজেকে ঢাবির সিএসই বিভাগের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন। একপর্যায়ে রিয়াদের সঙ্গে সালমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এ সময় মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা হতো। এ সময় সালমার অজান্তেই রিয়াদ সব অডিও ও ভিডিও কথোপকথন রেকর্ড করে রাখতেন। পরবর্তীতে সালমা জানতে পারেন, রিয়াদ ঢাবির ছাত্র নন, ভুয়া পরিচয় দিয়েছেন। এ কারণে তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সালমা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিয়াদ ওয়াটসআপে হুমকিমূলক বার্তা পাঠান এবং সালমার ক্ষতি করতে রেকর্ড করা অডিও/ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ক্ষতি না করার জন্য রিয়াদকে সালমা অনুরোধ করলে, মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।
এ বিষয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের এডিসি মো. নাজমুল হক বলেন, ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্তে নেমে রিয়াদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদ ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অর্ধশতাধিক মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতেন বলে স্বীকার করেছেন। তার মোবাইল ফোনেও এ ধরনের প্রতারণার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। সাইবার প্রতারক রিয়াদকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষায় ‘ভার্চুয়াল জগতে কাউকে না জেনেশুনে সম্পর্ক তৈরি না করা, আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে কথা না বলা, অডিও কলে আপত্তিকর কথাবার্তা না বলা, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও কারও সঙ্গে শেয়ার না করা, এমনকি নিজের বা পরিবারের আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ না করার পরামর্শ দেন ডিবি কর্মকর্তা নাজমুল।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
