বেনাপোলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ভারতীয়রা!, বাড়ছে ঝুঁকি
ভারতে শনাক্ত হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। করোনা সংক্রমণ রোধে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দরে বাড়তি সতর্কতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে চার দিন অতিবাহিত হলেও দেশের সবচেয়ে বড় এই স্থলবন্দরে চোখে পড়েনি কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া মাস্ক, পিপি ছাড়াও ভারতীয় ট্রাকচালকরা অবাধে ঢুকছে বন্দরে। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্যানারে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা আর করোনা নেগেটিভ সনদ গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম। তবে সংক্রমিত দেশ থেকে কেউ এলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা গেছে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা সংক্রমণের নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে যখন জনজীবন আর বাণিজ্যিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের পথে, তখন নতুন করে আবারও সব মহলে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২৯টি দেশে ছড়িয়েছে ওমিক্রন। সব শেষে সংক্রমিত হয়েছে ভারত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বেনাপোল বন্দরের রেল ও সড়কপথে বড় ধরনের বাণিজ্য কার্যক্রম আর পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত।
প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে। এছাড়া এ রুটে বছরে প্রায় ১৮ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে। আমদানি পণ্য নিয়ে প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রায় সহস্রাধিক ট্রাকচালক আসছে বেনাপোল বন্দরে। বেনাপোল বন্দর থেকে ৩ শতাধিক ট্রাকচালক রপ্তানি পণ্য নিয়ে যাচ্ছে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে। পণ্য খালাসে শ্রমিক, ট্রাকচালকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন সমাগম হয় বেনাপোল বন্দরে।
তবে এখানে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে ওমিক্রন সংক্রমণের। গত তিন মাস আগেও বেনাপোল বন্দরে করোনা সংক্রমণ রোধে জোরদার ছিল সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। তবে মাঝে সংক্রমণ কমে আসায় সুরক্ষা ব্যবস্থা গুটিয়ে ফেলে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাও তুলে দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
বর্তমানে ভারত যাতায়াত কালে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানারে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় আর করোনা নেগেটিভ সনদ পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বছর করোনায় ৩ মাস আমদানি-রপ্তানি ও ৬ মাস পাসপোর্টধারী যাতায়াত বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয় দুই খাতে। ভয়াবহ করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে তাই দ্রুত সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা জানান, ওমিক্রন ঝুঁকিতে রয়েছে বেনাপোল বন্দর। তবে কোনো ধরনের সতর্কতা ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি। গত বছর করোনা শুরু হলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ও পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত বন্ধ থাকায় বাণিজ্য ও ভ্রমণ খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। তাই ক্ষতি এড়াতে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশি এক ট্রাক চালক জানান, মাস্ক বা পিপি কিনতে কেউ তাদের সহযোগিতা করেন না। এ খরচ একজন ট্রাকচালকের পক্ষে ব্যয় করা কঠিন। তবে নিরাপদ থাকবে স্বাস্থ্যবিধি সবার মানা উচিত।
ভারতীয় এক ট্রাকচালক জানান, আগে পিপি ছাড়া বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করা যেত না। এখন কেউ পিপি বা মাস্ক পরতে বলে না তাই পরা হয়নি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আবু তাহের বলেন, করোনা সংক্রমিত দেশ থেকে ফিরলেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে যাত্রীদের। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় ও করোনা সনদ পরীক্ষা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যান্য কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শিথিল রয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে আসায় বন্দরে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছিল। আবারও জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)