সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে কথিত নির্বাচন ও ভোটার তালিকা প্রত্যাখ্যান
অগঠনতান্ত্রিকভাবে প্রেসক্লাব নির্বাচন করার লক্ষ্যে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বাধীন কমিটির সকল প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করেছে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। কথিত নির্বাচনের নামে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবকে সাংবাদিকশূন্য করে অসাংবাদিক এবং বেশ কিছু সংখ্যক জামায়াত ও জঙ্গি সদস্যদের ঢুকিয়ে মূলধারার সাংবাদিকদের অমর্যাদা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে প্রেসক্লাব এসকল কার্যক্রম প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে।
তারা এসবের প্রতিবাদে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে জানিয়েছেন, প্রেসক্লাবের ওপর থেকে হাত ওঠাও পুলিশ, প্রেসক্লাবকে নিজস্ব গতিতে চলতে দাও।
সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপীর সঞ্চালনায় প্রেসক্লাব হলরুমে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রেসক্লাব নিয়ে এখন পর্যন্ত উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর এই মামলার ওপর শুনানি হবার কথা আছে। এমন অবস্থায় প্রেসক্লাবের নির্বাচন করার যেকোন প্রক্রিয়া এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন আইনসঙ্গত নয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বলা হয়, মূলধারার সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে এমন কিছু লোককে এই প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে যারা সাংবাদিক নন, যারা ভিন্ন পেশার মানুষ এমনকি যাদের কেউ কেউ ১৮টি নাশকতা মামলার আসামী ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামীও রয়েছেন। অপরদিকে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করছেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং কর্মরত অনেক সাংবাদিককে বাদ দিয়ে একটি বিতর্কিত তালিকা তৈরী করা হয়েছে। সমাবেশে সাংবাদিক বক্তারা দৃঢ়তার সাথে এই প্রক্রিয়া বর্জন এবং প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হবে এবং প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। একই সাথে সম্মিলিত ও পৃথকভাবে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সাংবাদিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম মিনি, প্রেসক্লাব সহসভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সেলিম রেজা মুকুল, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাবেক সহসভাপতি কালিদাস রায়, ইয়ারব হোসেন, এম জিল্লুর রহমান, শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, আশরাফুল ইসলাম খোকন, গোলাম সরোয়ার, কাজী শওকত হোসেন ময়না, মোঃ আসাদুজ্জামান, আব্দুল জলিল, ফরিদ আহমেদ ময়না, মোঃ আমিরুজ্জামান বাবু, মোঃ রবিউল ইসলাম, আবুল কাশেম, শেখ মাসুদ হোসেন, ইব্রাহিম প্রমুখ।
সুভাষ চৌধুরী বলেন, পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলছে তা বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করছি। প্রেসক্লাবকে নিজের গতিতে হাটতে দিতে হবে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রেসক্লাবকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়েছে। এর জন্য দায়ী পুলিশ। আমরা মূল ধারার সাংবাদিকরা এই কার্যক্রমের সাথে থাকছি না।
অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, প্রেসক্লাব থেকে মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিকদের বাদ দিলে কে থাকবে সেখানে? পুলিশ সুপারের সকল সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।
মনিরুল ইসলাম মিনি বলেন, পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অসাংবাদিক ঢোকানোর মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এতে প্রেসক্লাব সাংবাদিকশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া বর্জন করলাম।
অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
কল্যাণ ব্যানার্জী বলেন, যে ভোটার তালিকা করা হয়েছে তা মানি না। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব গভীর সংকটে।
সকল সাংবাদিককে এককাতারে আনতে হবে।
আব্দুল বারী বলেন, মামলাটি শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া আইনসম্মত নয়।
মিজানুর রহমান বলেন, প্রেসক্লাব নিয়ে এ অশুভ খেলা মেনে নেওয়া হবে না। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমরা সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
এম কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশের নেতৃত্বে কার্যক্রমটি প্রত্যাহার করছি। তার ডাকে কোন মিটিংয়ে যোগদান করা হবে না।
সেলিম রেজা মুকুল বলেন, প্রেসক্লাবে হামলা করে যারা রক্ত ঝরিয়েছিল তাদের সদস্যপদ দিয়ে পুলিশ কলূষিত করেছে। আমরা রাজপথে আন্দোলন করবো।
রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী যার জন্য কালিগঞ্জের ফতেপুরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল তার কথামতো পুলিশ প্রেসক্লাবের বিতর্কিত তালিকা করেছে।
আমরা মানববন্ধন করে পুলিশের এই কার্যক্রমের প্রতিবাদ করবো।
কালিদাস রায় বলেন, পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে চলেছেন। তার কার্যক্রম আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
ইয়ারব হোসেন বলেন, নাশকতা বহু মামলার আসামীকে প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দিয়ে পুলিশ প্রেসক্লাবকে কলঙ্কিত করেছেন।
এম জিল্লুর রহমান বলেন, তালিকা গঠনতন্ত্র বিরোধী হয়েছে। এই তালিকা বয়কট করছি।
শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব চলবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। কারো ভয়ভীতি, চোখরাঙানি ও অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব চলতে পারে না।
আশরাফুল ইসলাম খোকন বলেন, যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা নিরপেক্ষ নয়।
গোলাম সরোয়ার বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেসক্লাব চলবে। কারো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না।
কাজী শওকত হোসেন ময়না বলেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
এ্যাকশন কমিটি করে এর প্রতিবাদ জানাতে হবে।
মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রেসক্লাব থাকবে সাংবাদিকদের হাতে, আর কারো নয়।
ইব্রাহিম হোসেন বলেন, প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকদের হাতে থাকতে হবে।
ফরিদ আহমেদ ময়না বলেন, প্রেসক্লাব নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না।
আব্দুল জলিল বলেন, প্রেসক্লাবে যারা হামলা করে তাদের সাথে মূলধারার সাংবাদিকরা বসতে পারেন না। প্রেসক্লাবের ওপর একটি মহল ভর করেছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
আমিরুজ্জামান বাবু বলেন, প্রেসক্লাবকে গঠনতান্ত্রিক পন্থায় চলতে হবে।
রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আবুল কাশেম বলেন, প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকদের সিদ্ধান্তই মূল সিদ্ধান্ত, এর দায়িত্ব আর কারো নয়।
শেখ মাসুদ হোসেন বলেন, প্রেসক্লাবকে অসাংবাদিকদের দিয়ে ভরে তোলার প্রতিবাদ করছি।
শহিদুল ইসলাম বলেন, সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
এসময় আরও অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
হলরুমে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। এতে স্পষ্ট ভাষায় সাংবাদিকরা স্লোগান দিয়ে বলেন, প্রেসক্লাবের ওপর থেকে হাত ওঠাও পুলিশ, প্রেসক্লাবকে নিজস্ব গতিতে চলতে দাও।
অধ্যক্ষ আবু আহমেদের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সুভাষ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, কল্যাণ ব্যানার্জী, এম কামরুজ্জামান, অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, আব্দুল বারী, অসীম চক্রবর্তী, শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, ইয়ারব হোসেন, মমতাজ আহমেদ বাপী প্রমুখ সাংবাদিক।
মানববন্ধনকালে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
সৌজন্যে: পত্রদূত
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)