আম্পানের ৫০ দিন পরও পানিবন্দি আশাশুনির ৫০ হাজার মানুষ
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো। আম্পানের ৫০ দিন পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তিন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়নি। ফলে এখনও এখানকার মানুষের বাড়ির উঠানে চলছে জোয়ার-ভাটা। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠী। বাঁধ ভেঙে পানির আধারগুলো নষ্ট হওয়ায় সুপেয় পানির জন্য চলছে হাহাকার।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন, শ্রীউলা ইউনিয়ন এবং সদরের দয়ারঘাট এলাকার ১২৯০ মিটার ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় ৫০হাজারের বেশি মানুষ এখনও পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। এদিকে নদীর পানি প্রবেশ না করলেও স্যানিটেশন সমস্যা ভুগছেন শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ আম্পানে ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া, হরিষখালী, চাকলা, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি এবং আশাশুনির সদরের দয়ারঘাট এলাকায় প্রবল জোয়ারে ৩০-৪০ ফুট গভীর খাল সৃষ্টি হওয়ায় বাঁধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নদীর লোনা পানি প্রবেশের ফলে বাথরুম, গোসল ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়ে চলছে চর্মরোগ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সেনাবাহিনী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মাঝে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। তারপরও মানুষের হাহাকার কমছে না। সবচেয়ে সমস্যায় আছে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা। নারীদের বাথরুম করার জন্য সন্ধ্যা বা অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
শ্রীউলা ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, আম্পানের ৫০ দিন পরও আমাদের দিকে কারও নজর নেই। আমার বাড়ির উঠানে জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। খাওয়ার কষ্ট, পানির কষ্ট। শুধু মানুষ নয়, গরু-ছাগলসহ গবাদিপশুরাও কষ্টে আছে। প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয় এলাকার বাসিন্দা ছলেমা বিবি বলেন, চারিদিকে পানি। কিন্তু কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে পারছি না, বাথরুম করতে পারছি না। বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে খাওয়ার পানি দিচ্ছে তা খেয়েই শেষ। দেখা দিচ্ছে নানান পানি বাহিত রোগ।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, আম্পানে ইউনিয়নের ৪ টি পয়েন্টের ১০ জায়গা ভেঙে ৪০কিলোমিটার বাঁধ নষ্ট হয়ে গেছে। খোলপেটুয়া নদীর চাকলা, দিঘলারআইট, সুভদ্রাকাটি, রুইয়ারবিল, কুড়িকাহুনিয়া, হিজলিয়া কোলাসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। রিং বাঁধ দেওয়ায় অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু নদীর প্রবল জোয়ারে চাকলা, কুড়িকাহুনিয়া এবং হরিষখালী পয়েন্টে ৩০-৪০ ফুট গভীর খাল সৃষ্টি হওয়ায় বাঁধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব পয়েন্টে বড় বড় ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। তার কাজ করছে। তবে খুব ধীরগতি। এখনও ইউনিয়নের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। দ্রুত স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করা হলে এই স্থান বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল বলেন, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার গাছপালা, গবাদি পশু। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ। আমার ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের ২৭ হাজার মানুষ আজও পানিবন্দি। কাজ নেই, খাবার নেই। কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ার পর্যন্ত জায়গা নেই। এসব এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বহু মানুষ।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়ন। প্রতাপনগরের চাকলা, শুভদ্রাকাটি, কুড়িকাহুনিয়া, কোলা, হরিষখালি, হিজলাসহ ৬টি পয়েন্ট ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় রিং বাঁধ দেওয়া হলেও কিছু এলাকায় পানির প্রবল চাপে বাঁধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে। উপজেলার ২০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা উপকূলের অনেক এলাকায় রিং বাঁধ দেওয়া গেলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া, হরিষখালী, চাকলা, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি এবং আশাশুনির সদরের দয়ারঘাট এলাকায় প্রবল জোয়ারে ৩০-৪০ ফুট গভীর খাল সৃষ্টি হওয়ায় ১২৯০ মিটার বাঁধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে কুড়িকাহুনিয়া ৬০০ মিটার, হরিষখালী ৩৬০ মিটার, হাজরাখালিতে ২৩০, দয়ারঘাটে ৬০ মিটার এবং চাকলা ৪০ মিটার। সেনাবাহিনীসহ আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)