রবিবার, জানুয়ারি ১২, ২০২৫

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

পর্ব-৩

আহকামে সিয়াম ও কিয়াম, পর্ব-৩

* আহকামে সিয়াম ও কিয়াম * -পর্ব-৩
******************

*” রামাদান মাসে দু প্রকারের ইবাদত বেশি বেশি পালন করতে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে |প্রথমত, দান,”সাদকা ” বা দান আল্লাহ তাআলার প্রিয়তম ইবাদত | রাসূল (স.) বলেছেন যে,সাদকার কারনে মুমিন অগণিত সাত্তয়াব লাভ ছাড়াও অতিরিক্ত দুটি পুরস্কার লাভ করেন : প্রথমত দানের কারনে গোনাহ ক্ষমা করা হয় এবং দ্বিতীয়ত দানের কারণে আল্লাহর বালা-মুসিবত দূর হয় | রাসূল (স.) বলেছেন যে,দুজন মানুষের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া , ন্যায় কর্মে নির্দেশ দেওয়া , অন্যায় থেকে নিষেধ করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক দ্রব্য বা বস্তু সরিয়ে দেওয়া, বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করা বা যে কোন ভাবে মানুষের উপকার করাই আল্লাহর নিকট সাদকা হিসাবে গণ্য | রাসূল (স.) সর্বদা বেশী বেশী দান করতে ভালোবাসতেন | আর রামাদান মাসে তার দান হতো সীমাহীন |কোনো প্রার্থীকে তিনি বিমুখ করতেন না |

*” রামাদান আসলেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায় | বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ | এদেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী মুসলমান | অধিকাংশ ব্যবসায়ী রোজা রাখেন এবং দান করেন | কিন্তু আমাদের দান হালাল উপার্জন থেকে হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে | গুদামজাত করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা বা স্বাভাবিকের বাইরে অতিরিক্ত দাম গ্রহণের মাধ্যমে ক্রেতাদের জুলুম করা নিষিদ্ধ | ! হারাম বা নিষিদ্ধ ভাবে লক্ষ টাকা আয় করে তার থেকে হাজার টাকা ব্যয় করার চেয়ে হালাল’ পদ্ধতিতে হাজার টাকা আয় করে তা থেকে দু-এক টাকা ব্যয় করা অনেক বেশি সওয়াব ও বরকতের কাজ | এছাড়া অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে ৷ আমরা জানি, মানুষের কল্যাণে ও সহমর্মিতায় যা কিছু করা হোক সবই দান | যদি কোনো সৎ ব্যবসায়ী রমাদানে ক্রেতা সাধারণের সুবিধার্থে তার প্রতিটি পণ্যে এক টাকা কম রাখেন বা ন্যায্যমূল্যে তা বিক্রয় করেন তাও আল্লাহর নিকট অত্যন্ত বড় সাদকা হিসেবে গণ্য হবে |

*” রামাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো কুরআন তিলাওয়াত | ! বিশেষত! রামাদানে দু’ভাবে কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে : প্রথমত কুরআন কারীম দেখে দেখে দিবসে ও রাতে তিলাওয়াত করতে হবে | সাহাবী-তাবিয়ীগণ রমাদানে এভাবে তিলাওয়াত করে কেউ ‘৩’ দিনে,কেউ ‘৭’ দিনে,বা কেউ ‘১০’ দিনে কুরআন খতম করতেন | আমাদের সকলকেই চেষ্টা করতে হবে রমাদানে কয়েক খতম কুরআন তিলাওয়াতের | তিলাওয়াতের সাথে তা বোঝার জন্য অর্থ পাঠ করতে হবে | কুরআনের অর্থ বুঝা, চিন্তা করা ও আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত যার জন্য অতিরিক্ত সাওয়াব, বরকত ও ঈমান বৃদ্ধির কথা কুরআন ও হাদীসে বলা হয়েছে | সম্ভব হলে অর্থসহ অন্তত একখতম কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে | যারা তিলাওয়াত করতে পারেন না তারা আল্লাহর ওয়াস্তে রামাদানে তিলাওয়াত শিখতে শুরু করুন | অবসর সময়ে তিলাওয়াতের বা অর্থসহ তিলাওয়াতের ক্যাসেট শুনুন | কুরআন তিলাওয়াতে যেমন সাওয়াব, তা শ্রবণে ও তেমনি সাওয়াব |
————————————————————————–

*” কুরআনের দ্বিতীয় আসর হলো কিয়ামুল্লাইল | সালাতুল ইশার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে কোনো সময়ে নফল সালাত আদায় করাকে কিয়ামুল্লাইল, সালাতুল্লাইল বা রাতের সালাত বলা হয় | ‘ ‘তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল্লাইল ‘একটু ঘুমিয়ে উঠে কিয়ামুল্লাইল আদায় করলে তাকে তাহাজ্জুদ বলা হয় | সারা বৎসরই কিয়ামুল্লাইল করা দরকার | রমাদানের কিয়ামের বিষয়ে রাসুল (স.) বলেন:

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏”‏‏.‏ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ، ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلاَفَةِ أَبِي بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রামাদানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবীর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। হাদীসের রাবী ইব্‌নু শিহাব (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন এবং তারাবীর ব্যাপারটি এভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বকর (রাঃ)- এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ)- এর খিলাফতের প্রথমভাগে এরূপই ছিল।
‘বুখারী, আস-সহীহ, হাদিস -২০০৯’ |

——————————————————————–

*” রাসূল (স.) রমাদান ও গাইর রামাদান সর্বদা প্রতি রাতে মধ্য রাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ৪/৫-ঘন্টা ধরে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন | তিনি এত লম্বা কিরআত ও দীর্ঘ রুকু সাজদা করতেন যে, অনেক সময়-‘২ বা ৪’-রাকাতেই এ দীর্ঘ-৪/৫-ঘণ্টা শেষ হতো | সাধারণত তিনি-৪/৫- ঘণ্টা ধরে ! ৮ বা ১০ ! রাকাত সালাতুল্লাইল এবং ‘ ৩ ‘রাকাত বিতর আদায় করতেন | রামাদানে সাহাবীগণ তার সাথে জামাতে কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায় করতে আগ্রহী ছিলেন | কিন্তু কিয়ামুল্লাইল ফরয হওয়ার ভয়ে তিনি জামাতে আদায় না করে ঘরে পড়তে উপদেশ দেন | সে সময় অধিকাংশ সাহাবী কোরআনের পূর্ণ বা আংশিক হাফিজ ছিলেন এজন্য তারা প্রত্যেকে যার যার মতো ঘরে, বিশেষত শেষ রাতে রামাদানের কিয়াম আদায় করতেন

*” ওমর (রা)- এর সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে ৷ এরা কোরআনের হাফেজ না হওয়াতে হাফেজ দের পিছনে কিয়াম করতে চেষ্টা করতেন | এজন্য মসজিদে নববীতে সালাতুল ইশার পরে ছোট ছোট জামাত শুরু হতো | এ দেখে উমার (রা) উবাই ইবনু কাব (রা)-কে বলেন, মানুষেরা মানুষেরা দিবসে রোজা রাখে, কিন্তু তারা কুরআনের হাফেজ না হওয়াতে রাতের কিয়াম ভালভাবে আদায় করতে পারে না | এজন্য আপনি তাদেরকে নিয়ে সালাতুল ইশার পরে জামাতে কিয়াম বা তারাবীহ আদায় করেন | এছাড়া তিনি সোলাইমান ইবনু আবী হাসমাকে নির্দেশ দেন মহিলাদের নিয়ে পৃথক তারাবীহের জামাত করতে | উসমান (রা) ও আলী (রা)-এর সময়েও এভাবে জামাতে তারাবীহ আদায় করা হতো এবং মহিলাদের জন্য পৃথক তারাবীহের জামাত কায়েম করা হতো |-” বাইহাকী,আস-সুনানুল কুবরা,২/৪৯৩।


*وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ، أَنَّهُ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ، إِلَى الْمَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ‏.‏ ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ‏.‏ يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ‏.‏

‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল-ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি রামাদানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)- এর সাথে মসজিদে নাবাবীতে গিয়ে দেখি যে, লোকেরা এলোমেলোভাবে জামা’আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে জমা করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি ‘উবাই ইব্‌নু ‘কাব (রাঃ)- এর পিছনে সকলকে জমা করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘উমর (রাঃ)] সাথে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। ‘উমর (রাঃ) বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১০ |
———————————————————————

” উমার (রা) এর সময়ে-৮ ও ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হতো বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে |
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ أَنَّهُ قَالَ، كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً.

ইয়াযিদ ইবনু রুমান (র) থেকে বর্ণিতঃ:

মালিক (র) ইয়াযিদ ইবনু রুমান (র) হতে বর্ণনা করেন- তিনি বলেছেন, লোকজন উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে রমাদানে ” তেইশ রাক’আত ” তারাবীহ পড়াতেন'” তিন রাক’আত বিতর ” এবং” বিশ রাক’আত তারাবীহ”। এটাই উমার (রা) শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস- ২৪৪ |
———————————————————————

* এছাড়া বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় যে, সাহাবী-তাবিয়ীদের সময়ে ইশার পর থেকে মধ্য রাত বা শেষ রাত পর্যন্ত তারাবীহের জামাত চলত এবং তারা প্রত্যেক রাকাআতে-১/২ পারা কুরআন পাঠ করতেন | এর থেকে বোঝা যায় যে, প্রথম দিকে-৮ রাকাত তারাবীহ আদায় করা হতো | প্রত্যেক রাকাতে তারা-১/২ পারা কুরআন পাঠ করতেন এবং ইশার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত প্রায়-৫ /৬ ঘন্টা তারা এভাবে সালাত আদায় করতেন | প্রতি রাকাতে আধা ঘন্টা বা তার বেশি দাঁড়াতে কষ্ট বেশি | এজন্য পরে তারা এরূপ-৫/৬ ঘণ্টা ধরে ২০ রাকাত পাঠ করতেন | রাকাতের সংখ্যা বাড়াতে দাঁড়ানো কষ্ট কিছুটা কম হতো |

* حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُتَوَكِّلِ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، – قَالَ الْحَسَنُ فِي حَدِيثِهِ وَمَالِكُ بْنُ أَنَسٍ – عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُرَغِّبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ بِعَزِيمَةٍ ثُمَّ يَقُولُ ‏”‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏”‏ ‏.‏ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلاَفَةِ أَبِي بَكْرٍ – رضى الله عنه – وَصَدْرًا مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ رضى الله عنه ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَا رَوَاهُ عُقَيْلٌ وَيُونُسُ وَأَبُو أُوَيْسٍ ‏”‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ ‏”‏ ‏.‏ وَرَوَى عُقَيْلٌ ‏”‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ وَقَامَهُ ‏”‏ ‏.‏

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাদান মাসের ক্বিয়ামে খুবই উৎসাহী ছিলেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে লোকদের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদানের রাতে সলাতে দাঁড়ায়, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল পর্যন্ত এর বিধান এরূপই থাকলো। অতঃপর আবূ বাকর (রাঃ) এর পূর্ণ খিলাফাত ও ‘উমার (রাঃ) এর খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ নিয়ম চালূ থাকে।

সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। কিন্তু বুখারীতে “রসূলুল্লাহর ইন্তিকাল পর্যন্ত…” অংশটুকু যুহরীর বক্তব্য হিসেবে এসেছে।

ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ‘উক্বাইল, ইউনুস ও আবূ উওয়ায়স। তবে তাতে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রামাদানের সওম পালন ও ক্বিয়াম করে’।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩৭১ |

*” যদি কেউ ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে তবে সে সারারাত কিয়ামুল্লাইলের সাওয়াব লাভ করবে | – তিরমিযী,আস-সুনান ৩/১৬৯ -নাসাঈ, আস-সুনান ৩/২০২ |

*” পূর্ববর্তী যামানার মানুষেরা প্রায় এক ঘন্টা ধরে চার রাকাত তারাবি আদায় করে এরপর কিছু সময় বিশ্রাম করতেন | আমরা ৮/১০ মিনিটে 8 রাকাত আদায় করেই বিশ্রাম করি | এ সময়ে নীরবে বিশ্রাম করা যায়, বা কুরআন পাঠ ,যিকর ,দরুদ পাঠ বা অন্য যে কোন আমল করা যায় |এ বিশ্রামের সময়ে আমাদের সমাজে যে দুআ ও মোনাজাত প্রচলিত আছে তা কোনো হাদীসে বা পূর্ববর্তী ফিকহের গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায় না | পরবর্তী আলিমগণ দুআ ও মোনাজাতটি বানিয়েছেন | এর অর্থে কোন দোষ নেই । তবে অনেকে মনে করেন যে, দুআ ও মোনাজাত টি বোধহয় তারাবীর অংশ বা তা না হলে তারাবীহের সাওয়াব কম হবে | এমনকি অনেকে দুআ-মুনাজাত না জানার কারনে তারাবীহ পড়েন না | এগুলি সবই ভিত্তিহীন ধারণা | এ সময়ে তাসবীহ-তাহলীল, মাসনূন দোয়া- ফিকর অথবা দুরুদ পাঠ করাই উত্তম |

*” সাহাবী-তাবিয়ীগণ প্রতি ৩ দিন বা ১০ দিনে তারাবীহের জামাতে কোরআন খতম করতেন | আর আমরা পুরো রামাদানে এক খতম করতেও কষ্ট পাই | তারা-৫/৬ ঘন্টা ধরে তারাবীহ পড়তেন । আমরা এক ঘন্টাও দাঁড়াতে চাই না| হাফেজ সাহেব একটু সহীহ তারতীলের সাথে পড়লে আমরা রাগ করি | কুরআনের সাথে এর চেয়ে বেশি বেয়াদবি আর কি হতে পারে | কুরআন শ্রবণের আগ্রহ নিয়ে ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত তারাবীহ আদায় করুন | ইমামের সাথে সাথেই নিয়্যাত করুন এবং পুরো কুরআন মহব্বতের সাথে শুনুন | সময় তো চলেই যাবে | হয়তো এভাবে পুরো কুরআন মহব্বতের সাথে শোনার সময় আর পাব না | আল্লাহ আমাদের সিয়াম ও কিয়াম কবুল করুন |আমীন |

*” পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো,-৭-বছর থেকে ছেলে মেয়েদের নামায, রোযা,তারাবীহ ইত্যাদিতে অভ্যস্ত করা | তাদের বয়স-১০- বৎসর হলে এ বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা ফরয | নিজের মামায রোযা যেমন ফরয, ছেলে মেয়েদের নামায রোযা আদায় করানো ও তেমনি ফরয | ছেলেমেয়েরা নামায পড়লে, রোযা রাখলে, তারাবীহতে শরীক হলে তারা যেমন সওয়াব ও বরকত লাভ করবেন | এছাড়া ছেলেমেয়েরা আজীবন যত নামায, রোযা, তারাবীহ ,কুরআন, যিকর, দান ও অন্যান্য ইবাদাত করবে সকল ইবাদতের সমপরিমাণ সাওয়াব পিতামাতা লাভ করবেন | ছেলেমেয়েরা আমাদের হৃদরের শান্তি। তাদেরেকে সালাত আদায় করতে,কুরআন পাঠ করতে রোযা রাখতে উৎসাহিত করি | তাহলে ছেলেমেয়েরা দুনিয়াতে আমাদের হৃদয়ের শান্তি হবে, জান্নাতে ও তেমনি আমাদের হৃদয়ের শান্তি হবে | আল্লাহ কবুল করুন | আল্লাহ আমাদেরকে মহামারীর গযব থেকে হেফাজত করুন | আমীন |

* দোয়ার মুহতাজ *
মাওলানা জিয়াউল ইসলাম যুক্তিবাদী
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক
কলারোয়া সাতক্ষীরা।

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘অমর গাঁথা মহান বিজয় দিবস’

‘অমর গাঁথা মহান বিজয় দিবস’ প্রফেসর মো. আবু নসর ১৯৭১ সালের ১৬বিস্তারিত পড়ুন

শিথিলতার সুযোগে সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা হচ্ছে: ডয়চে ভেলেকে ফরহাদ মজহার

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহুাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের সংলাপে উপস্থিত ছিলেনবিস্তারিত পড়ুন

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও আমাদের ভাবনা

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও আমাদের ভাবনা মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকবিস্তারিত পড়ুন

  • ৫ আগস্ট বঙ্গভবনে কে কী করেছিলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
  • তারা দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছিল, তবে সফল হয়নি: সলিমুল্লাহ খান
  • অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বেড়েছে : ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ
  • ‘খুনি হাসিনার কথায় আবার প্রতারিত হবে এমন গর্দভও আছে?’ : মারুফ কামাল খান
  • অবিলম্বে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা দরকার: ফরহাদ মজহার
  • মহররমের আশুরার দিনে যত ঘটনাবলী ও ফজিলত
  • সাতক্ষীরার মুক্তিযুদ্ধ ও শাহজাহান মাস্টার
  • জনগণের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর প্লাটিনাম জুবিলি
  • কোরবানীর শিক্ষা: প্রকৃত সুখ ও আনন্দ ভোগে নয়, ত্যাগে
  • দীপশিখার আলোকবর্তিকা: কলাপাড়ার পাখীমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • কলারোয়ার আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ: উন্নয়নের সংযুক্তি পথ
  • ইন্টারনেট হোক অশ্লীলতা মুক্ত