এবছর পাটের দামে খুশি শার্শার কৃষকরা


এবছর পাটের ভালো দাম পেয়েছে শার্শার চাষীরা। তবে আবহাওয়া জনিত কারনে পাটের উৎপাদন আশানুপ হয়নি। তবে বাজার ভালো থাকায় দামে পুষিয়ে গেছে চাষীদের।
বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
পাটখড়ির দামও এবছর বেশী। প্রতি গল্লা পাটখড়ির মুল্য ৪০ টাকা। প্রতিবিঘায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার পাট পাটখড়ি বিক্রী করছে কৃষকরা।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে; পাট চাষের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর। যা থেকে পাট উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন।”
গত বছরও পাটের বাজার ভালো ছিলো। যে কারনে কৃষকরা পাটের আবাদ বেশি করেছে।
টেংরা গ্রামের পাটচাষি মোহাম্মদ আলি মিলন বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবার ভাল দামে পাট বিক্রি করিছি। মোটামুটি ভাল পাট ২০০০-২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায় ৫০০-৬০০ টাকা বেশি। এ বছর ভাল দাম পাচ্ছি তার জন্য ভাল লাগছে। পাটের সুদিন ফিরে এসেছে।
নাভারন বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবুজার বলেন, “নতুন পাট আমরা বিভিন্ন দামে কিনেছি। ধূসর-কালো রঙের পাট ১৮০০-২০০০টাকা, সোনালি রঙের পাট ২১০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে আমরা কিনেছি।
বারোপোতা গ্রামের পাটচাষি আব্দুল মোমিন বলেন, “পাটের পাশাপাশি পাটকাঠিরও এবার দাম ভাল। দেড় বিঘা জমিতে আবাদ করে ১২ মণ পাট পাইছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো।
“শুধু পাটকাঠি বিক্রি করিছি নয় হাজার টাকা।খরচ কম হইছে। দাম ভাল পাচ্ছি। এবারের পাটের দামে আমরা খুশি।“
বাগআচড়া বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা কৃষক মোজাম গাজি বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ২৫ মণ ফলন পেয়েছেন। প্রতিমণ পাট বিক্রি ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে বেশ ভাল লাভ হয়েছে।
“সরকারি পাটকলোগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলো চাষীরা। তবে এবছর বেসরকারী পাটকলগুলো পাট কেনার কারনে চাষীরা ভালো দাম পাচ্ছে।
জামতলা বাজারের আড়তদার লাল্টু গাজি বলেন, বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে পাটের দাম মণে এক হাজার টাকা বেড়েছে। আগে ১৮-১৯’শ টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।
টেংরা বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, পাট যখন প্রথম বাজারে উঠেল তখন প্রতিমণের দাম ছিল ১৮০০ টাকা; এখন দিন দিন দাম বেড়েই চলেছে। বুধবারও মানভেদে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে ২১-২৪’শ টাকা।
নাভারন বাজারের পাট ব্যবসায়ী কুরবান আলি জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিমণ দেশী পাট ১ হাজার ৮ থেকে ২ হাজার টাকা এবং তোষা পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় এবার পাটের ফলনও ভাল। এবার পাটের বাজারদর ও বিভিন্ন মিলে চাহিদা থাকায় চাষীর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
বাজারদর এভাবে থাকলে পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
আকিজ পাটকল, আহাদ পাটকল, আফিল উইভিং জুটমিলসহ খুলনাঞ্চলের বেসরকারি জুটমিলগুলো স্থানীয় বাজার থেকে ফড়িয়া এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সারা বছরের পাট সংগ্রহ করে থাকেন। আফিল গ্রুপের যশোরে আফিল উইভিং জুট মিলের চারটি ইউনিট রয়েছে।
গ্রুপের পরিচালক মাহবুব আলম লাভলু বলেন, “আমরা প্রতিবছর যশোর ও ফরিদপুর জেলা থেকে পাট সংগ্রহ করে থাকি। এখানকার উৎপাদিত পাটের মান ভাল; এবারও আমরা বিপুল পরিমাণ পাট কিনছি।”
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, “যশোরে এবার পাটের ভাল ফলন হয়েছে। কৃষক তার ক্ষেতের পাট বিক্রি করা শুরু করেছেন। দাম ভালো পাওয়ায় তারা দারুণ খুশি। আশা করছি আগামীতে আবাদ বাড়বে। “

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
