টিকটক অসুস্থ মানসিক বিকাশের রূপকার
অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহনযোগ্য ও অাকর্ষণীয় করে তুলতে চাওয়া স্বকীয় ব্যক্তি হিসাবে প্রত্যেক মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। অাগেকার দিনে মানুষ মেধা, বুদ্ধি, তার অাচার-অাচরণ, ব্যক্তিত্ব বা দর্শনগত বাহ্যিক উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের এই গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির চেষ্টা করতো। কিন্তু যুগ পাল্টে গেছে। প্রযুক্তির অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে নতুন প্রজন্ম এই গ্রহনযোগ্যতা অর্জন বা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রযুক্তিগত পন্থা। পর্যায়ক্রমিকভাবে এটি বেড়ে যাচ্ছে এবং সর্বত্র অালোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে টিকটক মোবাইল অ্যাপসটি অন্যতম যার ফলে নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তির করাল গ্রাসে পতিত হচ্ছে।
সম্প্রতি মানুষের মাঝে বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মাঝে চীনের তৈরি এমনই একটি স্যোসাল অ্যাপস অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। যার নাম টিকটক। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের এই অ্যাপসটি বাজারে উন্মুক্ত করা হয়। এই অ্যাপসের মাধ্যমে নিজের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে তা সহজেই শেয়ার করা যায় অন্য যেকোনো সামাজিক মাধ্যমে। অনেকের মতে গান ও বিভিন্ন সংলাপের সঙ্গে ঠোট মেলানোর মাধ্যমে নিজের অভিনয়শৈলীর প্রকাশ ঘটানোর পথ করে দিয়েছে টিকটক। কিন্তু আসল সত্যটি হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট বয়সের বিশেষত নতুন প্রজন্মকে বাস্তবতা থেকে বহু দূরে ঠেলে দিচ্ছে এটি। শুধু তাই নয়, তাদের মাঝে সংক্রমিত করছে উগ্রতা ও অশালীনতার। এর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ছে অশ্লীলতা, কল্পনাপ্রবণতা ও বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনই সানন্দে ও স্বেচ্ছায় এমন কোনো কাল্পনিক অভিনয় বা মনগড়া বিষয়ে নিজের উপস্থাপন প্রকাশ্যে আনতে পারে না। যারা ক্রমাগত এই অ্যাপস ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের মাঝে একটি মানসিক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, আর সেটি ভয়াবহ।
টিকটক অ্যাপস ব্যবহারকারীদের উপর চালানো দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে এর ধারাবাহিক ব্যবহারের ফলে মানুষের মাঝে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, স্বভাব ও আচরণে কৃত্রিমতা সৃষ্টি, বাস্তবতার প্রতি বিমুখতা, ব্যক্তিত্বহীনতা, অশালীনতা, কল্পনাপ্রবণ মানসিক বৈকল্যতা, মনস্তাত্বিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবনতির মতো ভয়ঙ্কর সব জটিল সমস্যা বৃদ্ধি করছে। সামগ্রিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক প্রেক্ষাপটে।
সম্প্রতি ভাইরাল যে টিকটকারদের দেখা যাচ্ছে, তাদের হেয়ারস্টাইল, পোশাক এবং অশ্লীল বাচনভঙ্গি দেখে সন্দিহান হয়ে পড়তে হয়, যে তারা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী কি না? অথচ এদেরকে অনুসরণ করে প্রযুক্তির ভয়াল থাবা বিধে যাচ্ছে প্রজন্মের বুকে। প্রযুক্তির করাল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা করা যেতে পারে সৃজনশীল মেধা ও মনন বিকাশের মাধ্যমে। অন্যথায়, বর্তমান প্রজন্ম কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।
লেখক
মেহেদী হাসান সবুজ
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)