‘ন্যায়বিচারের মধ্যেই ধর্মের গ্যারান্টি’
তারা দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছিল, তবে সফল হয়নি: সলিমুল্লাহ খান
প্রথিতযশা চিন্তক ও লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, চট্টগ্রামে আইনজীবি সাইফুল ইসলামকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এটি একেবারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল এটি যদি চট্টগ্রাম থেকে আগুন শুরু হয়, তাহলে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না। তারা দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছিল। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষের অসীম ধৈর্যের ফলে তারা সফল হতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ভবিষ্যতে যে তারা এ প্রক্রিয়া আবার শুরু করবে না তা বলা যায় না। সম্প্রতি ছাত্রদের মধ্যে যে কলেজ-কলেজে সংঘর্ষ হয়েছে, এসবকে ভারতীয় মিডিয়াগুলো দেখিয়েছি হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ হিসেবে। বর্তমানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য সাম্প্রদায়িক উস্কানিকেই মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে একটি দেশের ভেতরের পরিস্থিতি আরেকটি দেশে প্রভাব বিস্তার করে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলছে- তারা পাশের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলবেন না; তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সাথে একমত। এটি বাংলাদেশের সীমা পার হয়ে এখন বাহিরে চলে গেছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই ইস্যুকে তারা আন্তর্জাতিক রূপ দিবে।
এই গণবুদ্ধিজীবী বলেন, ‘ইসকন’ জিনিসটা কি? সেটি দেখতে হবে। ইসকন জিনিসটা ইউরোপে শুরু হয়েছে। ইসকন আমেরিকায় আছে এবং পৃথিবীর বহু দেশে আছে। সিঙ্গাপুর, কানাডায় ইসকন নিষিদ্ধ হয়েছে। কেন হয়েছে? এটি অনেকেই জানেন। ইসকনকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ নামে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। যা ইংরেজীতে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস। এর পেছনে ভারতের যে আদর্শ, হিন্দুত্ববাদী আদর্শ; বলা হচ্ছে এটি ফ্যাসিবাদের সাথে সম্পৃক্ত। এটি যদি শ্রীকৃষ্ণের নামে প্রচার করা হয়, তাহলে তো এটি গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। এই যে চীন্ময় কৃষ্ণ; একজন মানুষ কোন সংগঠন থেকে কোন সংগঠনে যাচ্ছে সেটি বড় ব্যাপার নয়। বড় ব্যাপার হচ্ছে তার ভাবনা ও আদর্শটা কি। বাংলাদেশে খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ঐক্য পরিষদ আছে; তারা তো দীর্ঘদিন সংখ্যালঘুদের জন্য আন্দোলন করছেন।
তিনি বলেন, দেশে চিন্ময় ছাড়াও বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে ডিম ছোড়া হয়েছে, বিষয়টি দুঃখজনক। ছাত্রসহ যারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রতিনিধিরাই সরকারে এসেছে। সরকারের অনেক দুর্বলতা আছে। তবে, সরকার চলতে পারে না যদি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা না পায়, আমলাতন্ত্রের সহায়তা না পায়। এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি চলছে। কারণ, সংঘবদ্ধভাবে একজন সরকারি কৌসুলীকে দা দিয়ে কুপিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয়েছে। এটি সরকারের ব্যর্থতা। এটির জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য কি আপনি সরকারকে ফাঁসি দেবেন?
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানের যে প্রধান ত্রুটি তা হলো এটি মিথ্যা প্রিয়াম্বল (প্রস্তাবনা) দিয়ে শুরু করা। ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিলের যে ঘোষণাপত্র সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘোষণাপত্র। অন্যগুলো ছিলো সাময়িক কথাবার্তা। মাঠের সেনাপতিরা কি বলেছে, অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা কি বলেছেন- সেটি ধর্তব্য নয়।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের সরকার গঠিত হওয়ার পরে ঘোষণা দিয়েছিল তিনটি আদর্শকে ভিত্তি করে যে- জনগণের মধ্যে সাম্য, মানুষের মধ্যে মর্যাদা রাষ্ট্র দেবে এবং সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা হবে। এগুলো যদি অনুবাদ করে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তুলছে; এগুলো তো ভুয়া কথা। পরবর্তী সময় এরশাদের সময় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঢোকানো হয়েছে। এখন এটি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। বাংলাদেশে যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থাকে, বাকি সবগুলোর গ্যারান্টি আছে। ন্যায়বিচারের মধ্যেই ধর্মের গ্যারান্টি আছে। সকল ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আসল গ্যারান্টি ছিল। মুক্তিযুদ্ধে কি বলেছিল? আমরা বৌদ্ধ, আমরা খ্রিষ্ট্রান, আমরা হিন্দু, আমরা মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি। এই ছিল স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের সংবিধানে যে জিনিসটা পরিবর্তন করা দরকার, সেটি হলো- বাংলাদেশের অধিবাসীগণ বাঙালি বলে পরিচিত হইবেন। বাংলাদেশের অধিবাসীগণ বাঙালি এবং অবাঙালি নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণ বলে পরিচিত হবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)