নড়াইলে পাখির ডাক ডাউনলোড করে ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার
নড়াইলে পাখির ডাক ডাউনলোড করে ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার। প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের শুরুতে সুদূর হিমালয় ও সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি।
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলের খাল-বিল ও জলাশয়ে আসতে শুরু করেছে। আর এই অতিথি পাখির আগমনের কারণেই স্থানীয় চোরা শিকারিরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে মেতে উঠেছে পাখি নিধনের মহোৎসবে। সর্বত্র অতিথি পাখি শিকার যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনও একেবারেই নিরব ভূমিকা পালন করছে।
জানা গেছে, অতিথি পাখি শিকারীরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে নড়াইলের তিনটি উপজেলার চাঁচুড়ী বিল,ইছামতি বিল, কাড়ার বিল,নলামারা বিল,গোপালপুর-বগুড়ার বিলসহ বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বালি হাঁস, কালকোচ,কায়েম,ডুঙ্কর,পানকৌড়ি, পাতাড়ি হাঁস, হাঁস
ডিঙ্গি, কাদা খোঁচা, খয়রা,চেগা, কাচিচোরা, মদনটাক, শামুখখোলা ও বক অন্যতম।
অতিথি পাখি শিকারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফাঁদসহ নানা ধরনের অভিনব পদ্ধতি। চোরা শিকারীর কারণে এ অঞ্চলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণের স্থানগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সূত্র মতে, প্রতিবছর শীতের শুরুতেই শীত প্রধান দেশগুলো থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এরা মূলত নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে
আমাদের দেশে আসে। মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত অবস্থান করে।
শীত শেষ হলে আবার তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্থানীয় একাধিক শিকারীরা জানায়, একসময় মাছ ও ফড়িং জাতীয় কীট-পতঙ্গে
বিষটোপ দিয়ে, ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কিংবা ফাঁদপেতে পাখি শিকার করতো। তবে এখন পাখি শিকারে শিকারী চক্র তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই বোকা বানাচ্ছে
এসব পাখিদের। দীর্ঘদিন ধরে এসব বিল ও জলাশয়ে শিকারী রাতের বেলা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক ডাউনলোড করছে স্ব স্ব মোবাইলে। এরপর রাতের আকাশে পাখিদের আনাগোনা দেখে বিল ও জলাশয়ের বৃহৎ এলাকা জুড়ে বড় আকারের জালের ফাঁদ পেতে মোবাইলের মাধ্যমে ওইসব পাখির ডাক সাউন্ড বক্সে বাজানো শুরু করছে।
এরপর পাখিরা ওই টোন শুনে মনে করছে তাদের অন্যান্য সঙ্গীরা সেখানে নিরাপদে অবস্থান করছে। আর শিকারীদের এসব নিত্যনতুন প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে নীচে
নামতেই জড়িয়ে পড়ছে পেতে রাখা ফাঁদে। এভাবে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত অভিনব কায়দায় নির্বিচারে পাখি নিধন করছে।
এছাড়া রাতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে সকালে যখন খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে তখন তাদের শিকারীদের কবলে পড়তে হয়। দিনের বেলায়ও শিকারীরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। দিনে-রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। আবার বড়শি পেতে, কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকে কিছু শিকারী। শিকারীরা প্রতি রাতেই নিধন করে হাজার হাজার অতিথি পাখি।
শিকারিরা সারারাত ধরে নিধন করা পাখি শিকার
করে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তা বিক্রি করছে।
পাখি শিকারি আলীম বলেন,‘বাজারে অতিথি পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই যে কোন উপায়ে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। এমনকি আগে থেকেই বুকিং নেয়া ক্রেতাদের বাড়িতে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তা পোঁছে যায়। এসব ক্রেতা
আবার সমাজের এলিট শ্রেনীর লোক বলে জানান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাখি শিকারি বলেন,‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে টাকা
ও পাখি দিয়ে প্রতি রাতেই পাখি শিকার করে থাকি। কারণ প্রশাসনেরও কিছু কর্তাব্যক্তিও এই পাখির ক্রেতা। ক্ষেত্রবিশেষ তাদের বাড়িতে গোপনে পাখি পাঠিয়ে নির্বিঘে তারা পাখি শিকার করে চলেছে। যে কারণে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এই শিকারিদের দৌরাত।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন,‘অতিথি পাখি আমাদের দেশের একটি সম্পদ। এদের রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বন্য
প্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা ২০১২ আইন ৩৮ (১) ধারা মোতাবেক অতিথি পাখি শিকার বা ধরা দন্ডনীয় অপরাধ। শিকারীদের শনাক্ত করতে পারলে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। শিকারিদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে বলে তিনি
জানান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)