নড়াইলের মধুমতি সেতু : সড়ক প্রশস্ত না হলে দুর্ভোগ ও দূর্ঘটনার আশংকা
নড়াইলে মধুমতি নদীর ওপর ছয় লেনের মধুমতি সেতুর উদ্বোধনের খবরে যশোর-কালনা সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি জোরদার হয়ে উঠেছে। না হলে এক লেনের এই সড়কে তীব্র যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিক ও চালকরা। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়, জানান, তারা বলছেন, কালনা সেতু চালু হলে এ সড়ক এত পরিমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়বে যে, এখন তা ভাবাই যাচ্ছে না। তখন অপরিসর এ সড়কটিতে যেমন সৃষ্টি হবে যানজট, তেমনিই বাড়বে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
যদিও সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সড়কটি তারা দুই লেনে উন্নীত করবে। তবে তা সেতু উদ্বোধনের আগে নয়। যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক সংস্থার সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, কালনা সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হবে। তবে এ অঞ্চলের সড়কগুলোকে সম্প্রসারণ হলে আরও ভালো হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অক্টোবর মাসে কালনা সেতু উদ্বোধন করবেন বলে সম্প্রতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর নাম ‘মধুমতী সেতু’ রাখা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কালনা সেতু অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু চালু হলেও কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এর পূর্ণ সুবিধা পায়নি এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
সেতুটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের সড়কপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে যাবে। এশিয়ান হাইওয়েতে থাকা সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকাও রাখবে।
তবে পরিবহন শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর পরিপূর্ণ সুফল পেতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে যশোর-নড়াইল সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তারা বলছেন, সেতুটি উদ্বোধন হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢাকার সাথে যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হলেও সংকীর্ণ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ আশপাশের সড়কগুলোকে দ্রুত চার লেনে রূপান্তরিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। শ্রনিক নেতা মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছয় লেনের এ সেতু নির্মাণ হয়েছে। এটি খুব দ্রুত সময়ে উদ্বোধন করা হবে বলে শুনছি। সরকারের কাছে দাবি দ্রুত যেন সেতু সংলগ্ন এ অঞ্চলের সব সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়।” সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, “কালনা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে এমন খবর শুনে আমরা খুশি। তবে এর পাশাপাশি আমরা শঙ্কায় রয়েছি। এর বড় কারণ হচ্ছে, যশোর থেকে সেতুর সংলগ্ন যে সড়ক রয়েছে তা এক লেনের সড়ক।
“সেতুটি উদ্বোধনের পরপরই যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। ফলে এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি যানজটের কবলে পড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে।” তিনি বলেন, “আমরা চাই সরকার এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধার জন্য ভাঙা হয়ে যশোর পর্যন্ত সড়ক ফোর লেনে উন্নীত করুক।” যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কালনা সেতু উদ্বোধনের পর এ অঞ্চলের সড়কগুলোতে বিশেষ করে কালনা ভায়া নড়াইল, যশোর সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যে কারণে এই সড়কগুলোকে দুই লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “এর মধ্যে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে সড়কের নড়াইলের চাঁচড়া মোড় হতে যশোর মনিহার মোড় পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।” আগামী দুই মাসের মধ্যে ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর সাথে এ অঞ্চলের সড়ক উন্নয়নে ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার সড়কের ছয় লেনে উন্নীত করার প্রস্তাবনা এরই মধ্যে তৈরি করা হচ্ছে। পরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।” ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধুমতী নদীর ওপর কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা)। দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। এর পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগড়ার কালনাঘাট এবং পূর্বপাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শংকরপাশা। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক সাড়ে চার কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৯৬০ কোটি টাকা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)