বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখে বিস্মিত জাপানের মন্ত্রী-নিশিমুরা ইয়াসুতোশি
বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখে বিস্মিত জাপানের মন্ত্রী
প্রায় ১৩ বছর পর বাংলাদেশে এসে বদলে যাওয়া ঢাকা দেখে নিজের মুগ্ধতার কথা জানালেন জাপানের অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর মেট্রোরেল ও বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ঘুরে দেখে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টেকসই উন্নয়নে সামনের দিনগুলোতেও পাশে থাকতে চায় জাপান।
সোমবার (২৪ জুলাই) বিকেলে জাপান-বাংলাদেশের অন্যতম মৈত্রী স্মারক জাইকার সহায়তায় নির্মিত দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন সিক্স দেখতে যান জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে নিয়ে উত্তরা থেকে মেট্রোরেলে করে আসেন পল্লবী। পরে আবারও সেখান থেকে আসেন উত্তরায়।
পরে জাপানের সহযোগিতায় নির্মাণাধীন বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শনে যান সফররত জাপানের অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী।
উত্তরার মেট্রো স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিশিমুরা ইয়াসুতোশি বলেন, গেল ১৩ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখে তিনি বিস্মিত।
তিনি আরও বলেন, গত একযুগে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে। এ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সব সময় জাপান পাশে থাকবে।
এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের কথা তুলে ধরেন। আগামীতেও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো রোববার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছেন নিশিমুরা। সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকায় নবনির্মিত মেট্রোরেল ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ঘুরে দেখেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের কাছে বদলে যাওয়া ঢাকা নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানান তিনি। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতেও জাপান পাশে থাকতে চায় বলে জানান তিনি।
জাপানের ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকার আধুনিক নগর গণপরিবহন ব্যবস্থা মেট্রোরেল। বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনালও নির্মিত হচ্ছে জাপানের অর্থায়নে।
এছাড়া দেশের অন্যতম বড় ভৌত অবকাঠামো প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান।
বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে চলে আসা এসব বড় প্রকল্পকে বাংলাদেশের উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই অর্থনৈতিক জোনে ইতোমধ্যে ৪০টি জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির আওতায় এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে জাপান। এরই অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মাতাবাড়ি প্রকল্প। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পরে ব্যয় ৪৪ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা।
বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর ফলে ২০২২ সালে বাংলাদেশে জাপানের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) দাঁড়ায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার; যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ।
রোববার ঢাকা আসার পরই সোনারগাঁও হোটেলে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-জাপান ইকোনমিক রিলেশন ফর দ্য নেক্সট ফিফটি ইয়ার্স’ শীর্ষক সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইয়াসুতোশি নিশিমুরা।
তিনি বলেন, এখনকার বাংলাদেশ আমাদের ধারণার থেকেও অনেক বেশি অগ্রগতি করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কারণে।
এই উন্নয়নে জাপানি কোম্পানিগুলোরও অবদানের কথা উল্লেখ করে দুই দেশের মধ্যে শত বছরের অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
নিশিমুরা বলেন, শতবছর আগে বাংলাদেশের পাট দিয়ে জাপানে শুরু হয় পাটকলের ব্যবসা। কোবে শহরে ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কয়জুমি কোম্পানি।
আর স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সহায়তা দেয়া এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সোনারগাঁও হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)