বর্ষাকালীন হাইব্রিড তরমুজ চাষে কম খরচে বেশি ফলন
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল : নড়াইলে বর্ষাকালীন হাইব্রিড জাতের অফ সিজন তরমুজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তাদের সফলতা দেখে অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। কৃষি বিভাগও হাইব্রিড জাতের তরমুজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শ, বিনামূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মাচায় মাচায় ঝুলছে হলুদ, কালো রঙের অসংখ্য তরমুজ। কালিয়া পৌরসভার ছোট কালিয়ার গোবিন্দনগর এলাকার বিলে, সালামাবাদ ইউনিয়নের ভাউরীর চর বিলে, বাঐসোনা ইউনিয়নের ডুটকুড়া বিলে আর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ভক্তডাঙ্গা বিলের অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে মাচায় মাচায় বিশেষ জাতের বারোমাসি তরমুজ আবাদ হয়েছে।
কৃষি অফিস ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নড়াইলে ২০ হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কৃষকরা হেক্টর প্রতি জমিতে ১৫ টন ফলন আশা করছে। এসব জাতের তরমুজের মধ্যে রয়েছে এশিয়ান-২, তৃপ্তি ও ব্লাক বেবি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসবের মধ্যে এশিয়ান-২ বাংলাদেশি জাত। এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। বিশেষ করে তৃপ্তি জাতের তরমুজ বেশি সুস্বাদু। এই তরমুজ চাষে খরচ কম, একর প্রতি মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় কৃষকও খুশি।
তরমুজ চাষে সফল জেলার নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কালিয়া উপজেলার ভাউরীর চরের বাসিন্দা শেখ কামাল হোসেন। তিনি জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর গাছবাড়িয়া বিলের ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক হাজার চারশতটি চারা রোপণ করেছিলাম। এতে মোট খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আর এবার আশা করছি ৩ লাখ টাকা বিক্রয় হবে।
আরেক চাষি বাঐসোনের ডুটকুড়া গ্রামের অসিত কুমার বিশ্বাস ডুটকুড়া বিলে তিন হাজার চারা রোপণ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন ১২ হাজার কেজি তরমুজ ৬ লাখ টাকা বিক্রি হবে।
সফল চাষি কালিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার বর্মণ জানান, ১৫০ বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ে ১০ হাজার চারা রোপণ করে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৮ লাখ টাকা। ৯০ হাজার কেজি তরমুজের ফলন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে ৪০-৫০ টাকা পাইকারি কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন।
কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইভা মল্লিক বলেন, তরমুজ এখন আর মৌসুমি ফল নয়, সারা বছরই তা চাষ করা যায়। বীজ বপনের মোট ৬০-৭০ দিনেই ফসল সমাপ্ত করা যায়। ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় প্রথম উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে এই অফসিজন তরমুজের চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। উপজেলা কৃষি অফিস, কালিয়া থেকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমরা এই ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ি নড়াইলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, কালিয়ায় অফ সিজন তরমুজ চাষে কৃষকরা সফল। প্রত্যন্ত অঞ্চল দুর্গম জায়গা যেখানে সরকারি সেবা সহজে পৌঁছায় না সেখানে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)