সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলো স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মীরা
স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিগণকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ‘প্রত্যয় স্কিম’ চালু করেছে সরকার।
এই স্কিম চালুর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি আগামী ১ জুলাই, ২০২৪ এবং তার পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তাদেরকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানসমূহের বিদ্যমান কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।
গত ১৩ মার্চ সরকার এ বিষয়ে দু’টি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারিগণের জন্য প্রযোজ্য প্রত্যয় স্কিমের রুপরেখা ঘোষণা করেছে।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকুরিতে যাদের ন্যুনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবসর জীবনে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় ১ জুলাই, ২০২৪ এবং এর পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তা বা কর্মচারিগণের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কম সংখ্যক স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ’ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহে পেনশন স্কিম চালু রয়েছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারিগণ আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ (কন্ট্রিবিউটরি প্রোভিডেন্ট ফান্ড) ব্যবস্থা প্রযোজ্য। এই ব্যবস্থায় কর্মচারিগণ চাকুরি শেষে অবসর সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। কিন্তু, মাসিক কোন পেনশন প্রাপ্য হন না। ফলশ্রুতিতে অবসরোত্তর জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন। কর্মচারিদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে।
প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারির প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ (শতকরা দশ ভাগ) বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, যা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারির বেতন হতে কর্তন করা হবে এবং সমপরিমান অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। এরপর উভয় অর্থ এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কর্মকর্তা বা কর্মচারির কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারির পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং এই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হবে।
বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারির মূল বেতনের ১০ ভাগ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রদান করে থাকে। প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা প্রদান করলে তিনি অবসরের পর অর্থ্যাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে ৩০ বছর ধরে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারির নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারি মিলিয়ে সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা। তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তবে ১৫ বছরে পেনশন প্রাপ্য হবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারির নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ। আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় এ পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ হতে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হবে বিধায় চাঁদা দাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগলব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদা দাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারিত হবে। জমাকৃত চাঁদার উপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে। স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারি পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের অর্থ পেতে থাকবেন, যা তাকে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করা হবে। এক্ষেত্রে তাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোন দপ্তরে যাওয়ার বা কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন হবে না। প্রত্যয় স্কিমটি নতুন কর্মকর্তা বা কর্মচারিদের জন্য আকর্ষণীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর একটি ব্যবস্থা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)