স্বরূপে ফিরল ঐতিহাসিক ‘ঢাকা গেট’
নিজস্ব প্রতিবেদক: সংস্কারের পর উদ্বোধন হলো ‘ঢাকা গেট’। স্বরূপে ফিরলো ঐতিহাসিক স্থাপনাটি।
পুরনো আদলে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে ফটকটি।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে উদ্বোধন করা হয় ঢাকা গেট। এরপর জনসাধারণের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও ফটকের নতুন নকশাকার অধ্যাপক আবু সাঈদ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের কাছে ঢাকা গেটের অবস্থান। কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছিল ঢাকা গেট। নান্দনিকতা ফেরাতে ২০২২ সালে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রায় ৮২ লাখ টাকা খরচ করে গেটটি সংস্কারের কাজ করেছে ঠিকাদার কোম্পানি আহনাফ ট্রেডিংস।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা গেটের মতো স্থাপনাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আমরা ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। নগরবাসী এই ব্যাপারে আরও মনোযোগী হচ্ছে। এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি করতে পারব, যদি জনগণ আমাদের পাশে থাকে।
ঢাকা গেট সংরক্ষণ করার আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, ঢাকার যে ঐতিহ্য আছে, সেই ঐতিহ্যকে আমাদের ধারণ করতে হবে, সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু দেশবাসী নয় বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। এইসব কর্মের মাধ্যমে ঐতিহ্য স্থাপনাগুলোকে পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে আমরা নাগরিকের কালচারাল অ্যাভেলেবিলিটি আরও বৃদ্ধি করতে চাই।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে একইরকম পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ঢাকা গেট ঢাকার ঐতিহাসিক সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি খোলা জায়গা দেবে। এতদিন এই স্থাপত্য অযত্নে ছিল, এখন এটি সংস্কার করায় সুন্দর লাগছে। এটি দেখে আমাদের ইতিহাস জানার ইচ্ছে হচ্ছে।
মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, গত ৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। ইতিহাস ঐতিহ্য যদি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হয় তাহলে শহরের প্রাণ থাকে না। আমরা কখনো কোনো মেয়রকে এই বিষয়ে রাজি করাতে পারিনি। তারা সকলেই নির্মাণের দিকে আগ্রহী ছিলেন। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে। কাজটি শেষ হলে সেখানে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে। মানুষ তা দেখতে যাবে। ঢাকা গেট দেখে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।
স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ বলেন, যেটা আগে ছিল, ওটাকেই আমরা রিস্টোরেশন করেছি। কিছু জিনিস ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফটকের ওপর কলসের মতো যে জিনিসগুলো, একটা কর্নারে বুরুজ ভাঙা ছিল, সেগুলো আমরা সংস্কার করেছি। তার মানে আদি যে ডিজাইনটা ছিল, সেটাকেই আবার নতুনভাবে করা হয়েছে। তবে সেখানে নতুন করে বসার স্থান এবং মীর জুমলার ‘বিবি মরিয়ম’ কামানটা সংযোজন করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক স্থাপনা ঢাকা গেট দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান বলেন, ঢাকায় আশার পর আমি এটিকে নোংরা অবস্থায় দেখেছি। অনেক দিন হলো দেখছি এটির নান্দনিকতার কাজ চলছে। আজ সেটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। এতদিন যা অযত্নে ছিল, এখন সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে ইচ্ছে করছে।
উল্লেখ্য, ১৮৩০ সালের দিকে এই স্থাপনা রমনা গেট হিসেবে তৈরি করা হয়। অনেকেই মনে করেন মীর জুমলা যখন আসাম অভিযান করেন তখন এই জায়গা থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন, তাই এটাকে মীর জুমলা গেটও বলা হতো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)