অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম-বিয়ে, অতঃপর প্রথম পক্ষের সন্তানকে পেতে আইনি লড়াই করেন যে ক্রিকেটার!


ভ্রমণ সংস্থায় গিয়েছিলেন নিজের কাজে। সেখানেই পরিচয় সংস্থার কর্মী চেতনার সঙ্গে। ক্রমে আলাপ ঘনিষ্ঠ হতে বিয়ের প্রস্তাব। কিন্তু চেতনা কিছুতেই রাজি নন।
সম্পর্কের ওপর থেকে তার বিশ্বাস চলে গিয়েছিল। প্রেমের ওপর হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে এনে তাকেই বিয়ে করেছিলেন অনিল কুম্বলে।
বেঙ্গালুরুর একটি ভ্রমণ সংস্থায় চাকরি করতেন চেতনা রামলিঙ্গম। প্রথম স্বামী কে ভি জাহগিরদারকে ছেড়ে চলে আসার পরই ট্রাভেল এজেন্টের চাকরি নিয়েছিলেন তিনি।
অসুখি দাম্পত্যে থাকতে চাননি চেতনা। যন্ত্রণা ভুলে থাকার জন্য আরও বেশি করে ডুবে থাকতেন কাজে। তবে তার একমাত্র মেয়ে রয়ে গিয়েছিল প্রথম স্বামীর কাছে। মেয়েকে নিজের কাছে আনার জন্য মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন চেতনা।
আর সেই চেষ্টায় পাশে পেলেন কুম্বলেকেও। তিনি কোনও দিন তাকে ছেড়ে যাবেন না, চেতনাকে বুঝিয়েছিলেন কুম্বলে। ফিরিয়ে এনেছিলেন সম্পর্ক এবং প্রেমের উপরে তার হারিয়ে যাওয়া আস্থা।
১৯৯৯ সালে খাতায়কলমে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল চেতনার। সে বছরই ডিভোর্স প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই কুম্বলেকে বিয়ে করেন তিনি।
৬ বছরের মেয়ে আরুণি থেকে যায় প্রথম স্বামীর কাছেই।
কোনওরকম জাঁকজমক, রোশনাইয়ের বাইরে রেজিস্ট্রি ম্যারেজে জীবনসঙ্গী হিসেবে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হন চেতনা এবং কুম্বলে। সংবাদ মাধ্যমেও তাদের বিয়ে নিয়ে বেশি প্রচার হোক চাননি দু’জনের কেউই। কারণ তাদের মনে হয়েছিল এতে আরুণির উপর কুপ্রভাব পড়বে।
এরপর দীর্ঘ আইনি লড়াই পেরিয়ে মেয়ে আরুণির কাস্টডি পান কুম্বলে দম্পতি। আরুণি এখন ব্যবহার করেন ‘কুম্বলে’ পদবিই। পরবর্তীতে অনিল এবং চেতনার আরও দু’টি সন্তান হয়েছে। ছেলে মায়স এবং মেয়ে স্বস্তি। ৩ সন্তানকে নিয়ে অনিল এবং চেতনার ভরপুর সংসার।
কুম্বলে যেমন চেতনার লড়াইয়ের শরিক হয়েছেন, অন্যদিকে চেতনাও স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সব ওঠাপড়ায়। তাকে খেলার মাঠে খুব একটা দেখা যায় না ঠিকই। কিন্তু সব টানাপড়েনে তিনিই কুম্বলের মানসিক শক্তির উৎস।
যে বেঙ্গালুরু শহরে এখন কুম্বলে দম্পতির সংসার, তার রাস্তাতেই ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছেন কুম্বলে। যদিও তাদের পরিবার এসেছিল কেরালা থেকে। তবে দীর্ঘ দিন থাকতে থাকতে এখন তারা কন্নড়ই হয়ে গিয়েছেন।
১৩ বছর বয়সে কুম্বলে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন স্থানীয় ‘ইয়ং ক্রিকেটার্স’ ক্লাবে। ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনাও চলে স্বাভাবিক ছন্দে। ১৯৯১-৯২ সালে কুম্বলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। তার আগেই অবশ্য ১৯৯০ সালে জাতীয় দলে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
কুম্বলে প্রথম ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন ১৯৮৯ সালে। পরের বছরই এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে জাতীয় দলের দরজা তার জন্য খুলে যায়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে সুযোগও পান সে বছরের আগস্টে।
১৩২ টেস্টে এই প্রাক্তন লেগ স্পিনারের সংগ্রহ ৬১৯টি উইকেট। রান করেছেন ২৫০৬। ২৭১টি ওয়ানডেতে তার শিকার ৩৩৭টি উইকেট। রান করেছেন ৯৩৮।
শুধু পরিসংখ্যান এবং রেকর্ডের অংক দিয়ে বিচার করা যাবে না কুম্বলের ক্রিকেটারজীবন। তার বোলিং রান আপের জন্য এই নামেই কুম্বলেকে ডাকতেন সহযোদ্ধারা।
চেতনার সঙ্গে বিয়ে ছাড়া আরও একটি কারণে ১৯৯৯ বছরটা কুম্বলের কাছে স্মরণীয়। এই বছরেই দিল্লিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ফিরোজ শাহ কোটলায় তিনি স্পর্শ করেছিলেন জিম লেকারের রেকর্ড। একটি ইনিংসে বিপক্ষের ১০টি উইকেটই পেয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের ২ নভেম্বর দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টের পরে অবসর ঘোষণা করেন কুম্বলে। এরপর আইপিএল-এ অবশ্য ছিলেন তিনি।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে কিছু মৌসুমে আইপিএল খেলার পর ২০১১ সালে কুম্বলে এই প্রতিযোগিতা থেকেও সরে দাঁড়ান। এরপর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এবং পরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের প্রধান উপদেষ্টার পদেও ছিলেন তিনি। এ বছর তাকে দেখা গিয়েছে পাঞ্জাবের কোচ হিসাবে।
২০১৬ সালে অনিল কুম্বলেকে জাতীয় দলের প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন। মনে করা হয়, অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে মতান্তরের কারণেই সরে দাঁড়ান সাবেক এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনও দিন বিতর্কের পথে হাঁটতে চাননি কুম্বলে। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে থাকবেন বলে মাথা হেঁট করেননি সম্মানের কাছে। চাননি বিতর্কও। থেকেছেন অমলিন, যেমন ছিলেন পাতলা সোনালি ফ্রেমের চশমা পরে ক্রিকেট খেলা শুরুর প্রথম দিন থেকে।
সূত্র: আনন্দবাজার

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
