‘অযাচিত লকডাউনের আগে মানুষের আহার নিশ্চিত করুন’
হঠাৎ করোনার দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরিয়েন্টে বাংলাদেশে মানব মৃত্যুর গ্রাফ সবচাইতে উর্ধ্বমু্খী। তবু শঙ্কার বিষয় হলো, সরকার ঘোষিত এই লকডাউনকে যেনো রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে বঙ্গবাসীরা।না দেখিয়েই বা উপায় কি বলুন? প্রথম ধাপের লকডাউনে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, এটি ধনী-গরীবের বৈষম্যের লকডাউন। গণপরিবহণ বন্ধ রেখে ভিআইপি পরিবহনে হরদম অবাধে চলার সুযোগ, কৌশলে বইমেলা চালু রেখে দোকানপাট আর বিপণীবিতানগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে তাই ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রতিবাদ সমাবেশ আর কোথাও কোথাও লকডাউন কার্যকরে পুলিশের সাথে এলাকাবসীর অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষেরও বার্তা পাওয়া গেছে।
মোদ্দাকথা হলো, উচ্চবিত্তরা সামাজিক দূরত্ব সমাজিক দূরত্ব বলে গলা ফাটালেও নিম্নজীবীদের তো পেটের দায় বলে একটা কথা আছে।বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ত্রাস,লকডাউনে দিশেহারা কোটি কোটি মানুষ বিদেশ-বিভুঁয়ে রুটিহীন-রুজিহীন পশুর মত বন্দীদশায়; শিশু থেকে কর্মহীন যুবক পেটের জ্বালায় কেউ সবজি, পেঁয়াজ, শাকপাতা, ডিম নিয়ে শহরের ওলিতে গলিতে হেঁকে যায়।শহুরে বড়লোকেরা তাদের আর বাসায় বাসায় সবজি দিতে পারমিশন দেয় না।
লকডাউনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সুষ্ঠু তদারকি আর নিয়ন্ত্রনহীন দ্রব্যমূল্যের বাজার।চাষীর ফসল আঙিনায় ভিড়লো কিনা; উনপাজুরে বৃদ্ধার উনুনে আগুন জ্বললো কিনা; কতজন কাজ হারালো, কতজন হারাবে,বেতন কর্তন হলো কতশত শ্রমিক ভাইয়ের কিংবা বেকার তরুণের ভগ্নদশার, সেদিকে নজর ক’জনার?
সম্প্রতি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট; এলোপাতাড়ি লাশের পাশে পকেটশূণ্য সন্তানের রোনাজারি থেকে শুরু করে গো-খাদ্যের তীব্র সংকটেও রুগ্ন গাভীটির দু’পোয়া দুধ বেঁচে আধসের চাউলের সংস্থান জোগানো বাঙালি পরিবারের যাতনা আমাকে পীড়া দেয়।
চিরকালই সামাজিক দূরত্ব,বঞ্চনা,সামাজিক বিদ্বেষ, জীবনে যাপনে বজায় রেখে চলা উচ্চবিত্ত সব পরজীবী শ্রেণীর কাছে আমার কোনোই প্রত্যাশা নেই। তবু রাগের ঝোঁকে বলে উতঠেই বাধ্য হই-
“ভাত দে হারামজাদা;নইলে মানচিত্র খামচে খাবো।”
সরকার ও নীতিনির্ধারক গোষ্ঠীর নিকট আমার বিনীত আরজি এই যে,দয়া করে লকডাউনের বার্তা জারির পূর্বে খেঁটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণমূলক পূর্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।মহিমান্বিত মাস রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি রোধ ও সুষ্ঠু তদারকি করুন।তাহলেই হয়তো বরাবরের মত আমরা বেপরোয়া বাঙালিরা লকডাউন কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালনে আগ্রহী হবো।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। কলারোয়া নিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)