রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

আকন্দ গাছের যত গুণ

আকন্দ একপ্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। Asclepiadaceae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত এই উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Calotropis gigantea। আকন্দ দুই ধরনের-শ্বেত আকন্দ ও লাল আকন্দ। আকন্দ, অর্ক, মান্দার, মাদার, আক, আকওয়ান প্রভৃতি স্থানীয় নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। শ্বেত আকন্দের ফুলের রং সাদা ও লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনি বর্ণের হয়ে থাকে।

গাছের ছাল ধুসর বর্ণের এবং কান্ড শক্ত ও কচি ডাল লোমযুক্ত। পাতা সরল, প্রতিমুখ, তীর্যকাপন্ন, পুরু, শিরাবিন্যাস জালিকাকার। পাতা ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা, উপরিভাগ মসৃণ এবং নীচের দিক তুলোর ন্যায়। বৃন্ত ক্ষুদ্র এবং বৃন্তদেশ হৃদপিন্ডাকৃত। গাছের পাতা ছিড়লে কিংবা কান্ড ভেঙ্গে ফেললে দুধের মত কষ(তরুক্ষীর)বের হয়। পাতায় এনজাইম সমৃদ্ধ তরুক্ষীর বিদ্যমান। এতে বিভিন্ন গ্লাইকোসাইড, বিটা-এমাইরিন ও স্টিগমাস্টেরল আছে। ফল সবুজ, অগ্রভাগ দেখতে পাখির ঠোটের মত। বীজ লোমযুক্ত, বীজের বর্ণ ধূসর কিংবা কালচে হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের সর্বত্র আকন্দ পাওয়া যায় এবং তবে সাধারণত পরিত্যক্ত স্থানে বেশি জন্মে।
রাস্তার পাশে বেড়ে ওঠে নিজে নিজেই। অযত্ন আর অবহেলার মাঝেও টিকে থাকে গাছ। এটি কিন্তু মূলত একপ্রকারের ঔষধি গাছ। নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যায় এর ছাল, পাতা, ফুল ব্যবহৃত হয়।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন- ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন, পাকিস্তান ও নেপালে উদ্ভিদটি পাওয়া যায়।

রাস্তার ধারে শুকনো স্থানে অযত্নে অবহেলায় আকন্দ জন্মে থাকে। ঝোপ জাতীয় এ গাছটির অসম্ভব ওষুধি গুণ রয়েছে। যে কোনো ব্যথায় আকন্দের পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। যদিও এর পাতার রস ও ডাল ভাঙলে তা থেকে ঝরে পড়া তরুক্ষী বিষাক্ত। তবুও আকন্দের গুণাগুণ কম নয়।

আকন্দ সাধারণত দুধরনের হয়ে থাকে, একটি শ্বেত আকন্দ ও অন্যটি বেগুনী আকন্দ। সব গাছের ফুল ও ফল একই রকম। ফল দেখতে টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো এবং অনেকটা শিমুল ফলের মতো। ফল শুকালে ভেতরে তুলা উৎপন্ন হয় এবং তুলার সাহায্যে বাতাসে ভেসে ভেসে আকন্দের বংশ বিস্তার ঘটে। পাতা ও ডাল ভাঙলে তা থেকে সাদা দুধের মতো রস ঝরতে থাকে। পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো বস্তু দিয়ে আবৃত থাকে।

সারা বছরই ফুল দেখা গেলেও এর মূল সময় চৈত্র ও বৈশাখ। আকন্দ ফুলে কালো ভীমরুলের খেলা জীবনানন্দ দাশের চোখ এড়িয়ে যায়নি। রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের কবিতায় সেই কথাটিই ধরা পড়েছে- আকন্দ ফুলের কালো ভীমরুল এইখানে করে গুঞ্জরণ/ রৌদ্রের দুপুর ভরে।

আকন্দের রয়েছে অনেক ভেষজ গুণাগুণ। যেমন- হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, দাঁতের ব্যথা, গর্ভপাত, খোসপাঁচড়া, অ্যাকজিমা, বহুমূত্র রোগ, পা মচকালে, পেট জ্বালাপোড়া, হজম শক্তি, ফোড়া, ব্রণ, বিছা কামড়ালে, বায়ুনাশক, পাকস্থলীর ব্যথা, হজমকারক, শরীরের কোনো স্থানে ক্ষত হলে আকন্দ গাছের পাতা, ছাল, ফুল, ফল, মূল ও কষ মানবকল্যাণে রোগ নিরাময়ে ব্যাপক উপশম হয়।

আকন্দ উদ্ভিদের রাসায়ানিক উপাদানঃ
এর শিকড় ব্যতীত ছাল,পাতা,ফুল ও কষ ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ। আকন্দের পাতায় এনজাইম সমৃদ্ধ তরুক্ষীর বিদ্যমান। এতে বিভিন্ন গ্লাইকোসাইড, বিটা-এমাইরিন ও স্টিগমাস্টেরল আছে। যা নানা ভাবে আমাদের অনেক উপকার করে থাকে।

উপকারীতাঃ
১। আকন্দের পাতা সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো এর ব্যাথা নিরাময় ক্ষমতা । শরীরের কোনো অংশে ব্যাথা হলে বা ফুলে গেলে এটি খুবই দ্রুত কাজ করে। এজন্য শরীরের কোথাও আঘাত লাগলে বা ফোলাজনিত কারণে কোনো স্থান ফুলে উঠলে আকন্দ পাতা বেঁধে রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

২। শরীরের কোনো স্থানে ক্ষত হলে সেই স্থানটিতে আকন্দ পাতার সেদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হয়। এতে পুঁজ হয় না।আকন্দের আঠার সঙ্গে ৪গুণ সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে এই গরম তেলের সঙ্গে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খোস পাঁচড়ায় বা ঘায়ে দিলে তা ভালো হয়ে যায়।

৩। আকন্দ পাতার উপরের পিঠে সরিষার তেল মাখিয়ে পাতাটি অল্প গরম করে পেটের উপর রাখলে বা শেঁক দিলে পেট কামড়ানো বা পেট জ্বালা বন্ধ হয়। এছাড়াও অ্যাসিডিটির সমস্যায় খুবই অল্প পরিমাণ আকন্দ পাতার পোড়া ছাই পানিসহ পান করলে সঙ্গে সঙ্গে উপকার পাওয়া যায়।

৪। অনেক ভেষজ শাস্ত্রে পাওয়া যায় যে, হাঁপানি রোগের মহৌষধ হলো আকন্দ পাতা। এজন্য ১৪টি আকন্দ ফুলের মাঝের চৌকো অংশটি নিয়ে এর সাথে ২১টি গোলমরিচ একসঙ্গে বেটে ২১টি বড়ি বা ট্যাবলেট বানিয়ে প্রতিদিন সকালে পানি দিয়ে ১টি করে খেলে হাঁপানি রোগের উপশম হয়। এই ওষুধ খাওয়ার সময় পথ্য হিসেবে শুধু দুধ ভাত খেতে হয়। এতে শ্বাসকষ্ট কেটে যায়।

৫। নিউমোনিয়াজনিত ব্যাথায় আকন্দ পাতার সোজা দিকে ঘি মেখে ব্যথার জায়গায় বসিয়ে লবনের পুটলি দিয়ে শেঁক দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও আকন্দ গাছের পাতা ফোঁড়া ফাটানোর ওষুধ হিসেবে ফোঁড়া ফাটাতে সাহায্য করে। আকন্দ পাতা দিয়ে ফোঁড়া চেপে বেঁধে রাখলে অতি সহজে ফোঁড়া ফেটে যায়।

৬। আকন্দের কষ তুলায় ভিজিয়ে লাগালে দাঁত ব্যথা দুর করে। আকন্দ চুলের রোগ, ব্যাথা এবং বিষনাশে বিশেষ কার্যকরী। এছাড়াও পোকামাকড় কামড়ালে জ্বালা-পোড়া কমাতে আকন্দ পাতা ব্যবহার করলে উপশম হয়।

বহুগুণে গুণান্বিত আকন্দ গাছের ফুল, পাতা, আঠা, শিকড়, কাণ্ড বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আকন্দ চুলের রোগ সারাতে, ব্যথা কমাতে, হাঁপানি ও বিষনাশে বিশেষ কার্যকরী। এছাড়া দাঁদ, মেছতার দাগ, কৃমি রোগ, অম্লনাশক, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে, পেট ব্যথা দূর করতে ব্যবহৃত হয় আকন্দ গাছ। আমাদের দেশে রাস্তার ধার, বাঁধের ধার, পতিত জমি, পুকুর পাড়, পারিবারিক বাগান ও ভেষজ বাগানে আকন্দ চোখে পড়ে। এছাড়া ফসলি জমির আইলে জীবন্ত বেড়া হিসেবে অনেক চাষি আকন্দ গাছ রোপণ করে থাকেন। বীজ বা চারা রোপণের ২-৩ বছর পর থেকে গাছের পাতা, ফুল, শিকড়, কাণ্ড, আঠা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার উপযুক্ত হয়। সার্বিক বিবেচনায় আকন্দ গাছ মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য এক অনন্য উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ।

তারিক ইসলাম,
শিক্ষার্থী উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ,
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ।

একই রকম সংবাদ সমূহ

সাতক্ষীরায় কপোতাক্ষ নদ থেকে ৬২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ

গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় কপোতাক্ষ নদ থেকে ৬২ কেজি হরিণের মাংসসহ চোরাশিকারিদেরবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঐতিহ্যবাহী সাতক্ষীরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরার গোবিন্দকাটি হিফজুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসার ছাদ ঢালাই উদ্বোধন

এসএম আব্দুল্লাহ, ঝাউডাঙ্গা (সাতক্ষীরা): সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি হিফজুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসারবিস্তারিত পড়ুন

  • কলারোয়ায় চেকের মামলায় যুবদল নেতা টুটুল গ্রেফতার
  • সাতক্ষীরায় সাংবাদিকের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল চুরি
  • সাতক্ষীরায় জামায়াতের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা ও দোয়া
  • সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিকে মাতৃভাষা দিবসে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান
  • সাতক্ষীরার ডিবি গার্লস হাইস্কুলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
  • একুশের প্রভাত ফেরিতে ভাষা শহীদদের সম্মান জানালো ধুলিহর আর্দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • সাতক্ষীরা ডি.বি ইউনাইটেড হাইস্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
  • সাতক্ষীরায় শিশু সন্তানকে পু*ড়ি*য়ে ও বয়স্ক মা’কে পি*টি*য়ে হ*ত্যা, মেয়ে আ*ট*ক
  • সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসক কাপ টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
  • দেশে শিক্ষকদের প্রথম এমপিওভুক্ত করেন শহীদ জিয়া : কলারোয়ায় সাবেক এমপি হাবিব
  • সাতক্ষীরায় দিগন্ত পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা: হেলপারসহ ১৩ যাত্রী আহত
  • সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মালামাল জব্দ