‘ইসলামের আলোকে করণীয়’ কাজে মন না বসলে


মানুষের মন কারণে-অকারণে যে কোনো সময় ছোট কিংবা বড় যে কোনো বিষয়ে খারাপ হতে পারে। তখন কোনো কিছু ভালো না-ও লাগতে পারে। এসব ক্ষেত্রে করণীয় কী? এর প্রতিকারই বা কী?
দুঃখ-হতাশাসহ যদি জানা-অজানা কোনো কারণে কারও মন খারাপ হয়ে যায় বা কোনো কিছুতে মন না বসে তবে ওই ব্যক্তির জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। যা তার মনকে দেবে প্রশান্তি। হতাশা, একগুয়েমি কিংবা বিরক্তি থেকেও পাবে মুক্তি। কী সেই কারণগুলো? আসুন জেনে নিই-
> ভালো না লাগার কারণ খুঁজে বের করা
যখন কোনো কিছুতেই মন বসে না বা ভালো লাগে না তখন এর কারণ কী তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। তা হতে পারে
– বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের ঘটনা বা দুর্ঘটনা।
– কোনো কিছু না পাওয়ার বেদনা।
– পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ না হওয়া কিংবা
– কোনো বিষয়ে স্বপ্ন দেখার পর তা বাস্তবায়ন না হওয়া।
– আবার অলসতা, অসুস্থতা, দুঃশ্চিন্তা, মানসিক আঘাত, মান-অভিমান, খারাপ আচরণ ও কষ্টদায়ক কথার শিকারও হতে পারে।
সুতরাং কারণ যা-ই হোক তা খুঁজে বের করে তা থেকে মুক্তির উপায় বের করার চেষ্টা করা। ধৈর্যের সঙ্গে হতাশামুক্ত থাকার জন্য যথাসাধ্য এর প্রকৃত সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করা।
> ক্ষমা প্রার্থনা করা
যে কারণেই মন খারাপ হোক না কেন, আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা হতে পারে-
– ইবাদত থেকে দূরে সরার কারণে মন খারাপ হতে পারে।
– কোনো গোনাহের করার কারণে মন খারাপ হতে পারে।
কারণ যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে যায় এবং পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে তখন তার মনে উদাসিনতা, অস্থিরতা, টেনশন, ভয়ভীতি, হতাশা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এক সময় জীবনটা হতাশা ও সংকীর্ণতায় পরিণত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ
‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (সূরা ত্বা-হা: ১২৪)
সুতরাং এ উভয় কারণে কারো কোনো কিছুতে মন না বসলে আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইসতেগফার ও রোনাজারির মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
> দোয়া ও জিকির করা
মনের প্রশান্তি পেতে এবং হতাশা কাটাতে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির ও দোয়া করা। কেননা দোয়া এবং জিকিরের মাধ্যমে মনে প্রশান্তি আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; ‘জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
فَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا وَمِنْ آنَاء اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَى
‘সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার (তাসবিহ) প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে, সূর্যাস্তের পরে আর (তাসবিহ) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাতের কিছু অংশ ও দিনের ভাগেও, সম্ভবত তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩০)
> সাওয়াবের কাজ করা
কোনো কিছু মন না চাইলেও সাওয়াবের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে বাধ্য করা। কেননা সাওয়াবের কাজের মাধ্যমে মানুষের সুন্দর ও সুখময় জীবনের প্রতিশ্রুতির ঘোষণা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
যে ব্যক্তি সৎকর্ম সম্পাদন করে সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব আর প্রতিদানে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব; যা তারা করত।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯৭)
> সেজদায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া
নামাজের সেজদায় আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি হয় বান্দা। সেজদায় বান্দা যে দোয়া করে আল্লাহ তাআলা ওই দোয়া কবুল করেন। এ কারণেই নামাজের সময় সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের মনের অবস্থার কথা তুলে ধরা। মনের অবস্থা পরিবর্তনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর এ দোয়াটি করা-
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব, ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা।’
অর্থ : ‘হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তুমি তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ।’ (তিরমিজি)
> নেককার ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া
যখনই কোনো বিষয়ে মন খারাপ হয়ে যায়, কোনো কিছু করতে ভালো লাগে না; তখনই কোনো অভিজ্ঞ আলেম বা বুজুর্গানে দ্বীনের কাছে যাওয়া। দ্বীনি মজলিশে সময় অতিবাহিত করা। আল্লাহর নেককার বান্দার পরমর্শ নেয়া।
মনে রাখতে হবে,
দুনিয়ায় হতাশা, ক্ষোভ, দু:খ-কষ্ট কিংবা মানসিক অশান্তি খুব স্বাভাবিক বিষয়। এখানে সব প্রত্যাশা যেমন পূরণ হবার নয়; তেমনি সবক্ষেত্রে হতাশা হওয়ারও কোনো কারণ নেই। কারণ, এ কথা সুনিশ্চিত যে, একমাত্র জান্নাতই মানুষের সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবার এবং হতাশামুক্ত জীবন লাভের স্থান। তাই মনকে ঠিক রাখতে এবং পরকালে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশায় ধৈর্য ধারণ করা।
> হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করা
অস্থিরতা ও হতাশা কাটাতে হাসি-খুশি থাকার বিকল্প নেই। যে কাজ করলে মনে শান্তি পাওয়া যাবে; সে কাজে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা যদি তা হালাল হয়। কোনোভাবেই হারাম কাজের সঙ্গে জড়িত হওয়া যাবে না। চলাফেরা, উঠাবসাসহ যে কোনো বিনোদনের ক্ষেত্রে হালাল-হারাম মেনে চলা খুবই জরুরি।
> চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া
মনের অবস্থা যদি মাত্রারিক্ত খারাপ হয়ে যায় বা কোনোভাবেই মন খারাপ হওয়া থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ না থাকে তবে অভিজ্ঞ আলেম কিংবা মানসিক ডাক্তার বা শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা। হতে পারে অভিজ্ঞ আলেম, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ডাক্তারের সুপরামর্শে মানসিক যে কোনো সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।
সর্বোপরি কথা হল
প্রত্যেক মানুষের জীবনে সাময়িকভাবে এ জাতীয় কিছু সমস্যা হতেই পারে। সুতরাং কোনো কাজে বা কোনো কিছুতে মন না বসলে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সময় ও অবস্থার আলোকে উল্লেখিত পরিস্থিতিতে আলোচিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণসহ ইসলামি নির্দেশনার আলোকে জীবন পরিচালনার মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

যশোরের শার্শায় গৃহবধূকে গনধর্ষণের অভিযোগ
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি যশোরের শার্শায় দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ (৩৮) গনধর্ষণের শিকারবিস্তারিত পড়ুন

‘সাকিব অবৈধ সরকারের এমপি, তা ভুলে গেলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে’
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্য ছিলেন সাকিব আল হাসান। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেবিস্তারিত পড়ুন

মিত্রদের কয়টি আসনে ছাড় দেবে বিএনপি?
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেবিস্তারিত পড়ুন