এপ্রিলেই স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় আসছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা


এপ্রিলেই চালু হচ্ছে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিডিং কর্মসূচি। দেশের ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচির আওতায় আসছে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে এবং ঝরে পড়া রোধে সপ্তাহের পাঁচদিন দুপুরে খাবার দিতে সরকার এ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসে। অন্যদিকে অবস্থাপন্ন শিশুদের অভিভাবকরা সন্তানদের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেনে পড়িয়ে থাকেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা প্রান্তিক এসব শিশু দারিদ্র্য কিংবা অসচেতনতায় অনেকেই ঠিকমতো বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে তারা যেসব খাবার গ্রহণ করে তা পুষ্টিসমৃদ্ধও হয় না। আবার শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত দ্বিতীয় ধাপের শ্রেণিতে থাকা শিক্ষার্থীরা খাবার গ্রহণ না করার কারণে ক্ষুধা পেট নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অভুক্ত থাকে, ফলে লেখাপড়ায় তারা মনোযোগী হতে পারে না। অন্যদিকে হয়তো অনেক পরিবারে পুষ্টিকর খাবার কেনারও সামর্থ্য থাকে না।
তিনি বলেন, সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রান্তিক পর্যায়ের সব উপজেলার স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব শিশুর উদ্দেশ্যে বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশের সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথাও ভাবা হচ্ছে। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর পাঠদান ও গ্রহণ যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, এ লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। দেশের ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চলবে। এ উপজেলার মধ্যে ৯১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩৫ উপজেলা অতি উচ্চ এবং উচ্চ দারিদ্র্য প্রবণ। বাকি ১৪টি, অর্থাৎ ৯ শতাংশ উপজেলা নিম্ন দারিদ্র্য প্রবণ এলাকা। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে থাকবে দুধ, ডিম, রুটি (বন) এবং মৌসুমি ফল। তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে শুকনো পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বিতরণের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বিবিএস এর দারিদ্র্য ম্যাপ দেখে ১৫০ টি উপজেলার প্রায় ১৮ থেকে ১৯ হাজার স্কুলকে নির্বাচন করা হয়েছে। উপজেলার সব স্কুলের বাচ্চারাই খাবার পাবে। খাবার এমনভাবে পরিবেশন করা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিডারশিপ তৈরি হয়। তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে পুষ্টিসমৃদ্ধ এ খাবার পরিবেশন করা হবে।
এরমধ্যে স্কুল খোলার প্রথম তিনদিন শিক্ষার্থীরা একটি করে ডিম ও বনরুটি (ছোট গোল পাউরুটি), পরের দুইদিন পর্যায়ক্রমে ইউএইচটি দুধ ও বনরুটি এবং অন্যদিন পাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট ও যে কোনো মৌসুমি ফল। খাবারের পেছনে শিক্ষার্থী প্রতি খরচ হবে গড়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা। কার্যক্রমের শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি কাজ করবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে।
‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’র খরচ কোনো বিদেশি ঋণ কিংবা অনুদান ছাড়াই নিজস্ব জোগান থেকে বহন করবে সরকার। প্রকল্পের ব্যয়ভার ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ প্রসঙ্গে বলেন, মিড ডে মিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশুরা লম্বা সময় স্কুলে থাকে, তারা দুপুরে কিছু খাবে, ক্ষুধা দূর হবে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে ভোগে। এ প্রজেক্টে হেলথের কম্পোনেন্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার এবং ভাসানচরে অবস্থানরত মিয়ানমারের শিশুরাও এ প্রকল্পে যুক্ত হবে। ১ হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৯৯ জন শিক্ষক এ প্রকল্পের আওতায় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পাবেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
