এম.এ মাসুদ রানা -এর গল্প
শেষ পর্ব
ইজিবাইকটা বাইপাস রোডের মাঝা মাঝি আসতেই.., চলন্ত ইজি বাইকের ভিতর হতে ও মা—,শব্দ শেষ হতেই; একটা শোরগোল পড়ে গেল ইজিবাইকটাকে ঘিরে। ততক্ষণে অবশ্যই ইজিবাইকটা থেমে গেছে। বলতে থাকো শাওন, আপনি তো জানেন মাসুদ ভাই, আমি ঐ সময় থেকেই একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত, যেটা আমরা এস এস সি ১২ ব্যাচের,আমি জানি সংগঠনের সঙ্গে তুমি এখনো যুক্ত আছো। তবে এখন আর সেভাবে —, সময় দিতে পারো না তাইতো? বুঝতেই তো পারছেন, সেদিন সন্ধ্যায় আমি যখন সংগঠনের কার্যালয়ে যায়, তখন এক ফাঁকে আমার এক বন্ধু আমাকে বলল, আজকে একটা ব্যতিক্রমধর্মী অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনেছিস? আমি বললাম না, ও বলল কেন? কলারোয়া নিউজ বা Ourনিউজের হেডলাইন দেখিস নি? নারে দোস্ত! আমার বাড়িতে কাজের একটু প্রেসার ছিল, এজন্য সময় করে উঠতে পারেনি, নিউজ পরে দেখিছ, আগে ঘটনাটা বলতো? আরে দোস্ত, তোর কাছে সেট আছে না দেখে নে, দেখছিস না আমি একটু ব্যাস্ত আছি। আরে তোর ব্যস্ততা মানে তো গেম খেলা, আমি মোবাইলটা বাসা থেকে আনতে ভুলে গেছি, তোর সেটটা একটু দে, পরে গেম খেলিস। তারপর একপ্রকার ওর হাত হতে মোবাইল সেট টা নিয়ে, কলারোয়া নিউজে ঢুকে নিউজ টা দেখলাম, হেডলাইনটা লেখা “একটা লাল ওড়না ও — অতঃপর “তাই না শাওন? আপনার মনে আছে দেখছি, মনে থাকবে না কেন? নিউজটা তো আমারই করা ছিল। তাছাড়া মেডিকেল কলেজে যে, প্রাপ্তির ছবি পেতে সেদিন আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। আপনার সেদিনের সেই হৃদয় কাড়া নিউজ আর প্রাপ্তির নিষ্পাপ অসহায় চেহারা, আমার মনটা কেন জানি ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল, আমি পরদিন সকালেই মেডিকেলে ছুটে যাই, কিন্তু প্রাপ্তি তখন আই সি ইউ তে থাকায়, সরাসরি ওকে দেখার সুযোগ হয়নি তবে, প্রাপ্তির মায়ের সাথে আমার কিছুটা আলাপ হয়, তাতে করে আমি বুঝতে পারি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই অসহায় বিধবা মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে গভীর সংশয় আছেন। আমি কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গেকথা বলে জানতে পারি, রোগী যদি বেঁচেও যায় তো তার যেকোনো এক সাইট , পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং চিকিৎসা ও অনেক ব্যয়বহুল, যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়, কারণ এই ধরনের রোগীর চিকিৎসা এবং স্পেশালিস্ট ডক্টর ভারতেই ভাল পাবেন। মাসুদ ভাই, পরের ঘটনাতো আপনি কিছুটা হলেও জানেন? জানি, কিন্তু তুমি বলে যাও।প্রাপ্তি শাওনের এই ভুলে যাওয়া টাকে উপভোগ করছে বলে মনে হচ্ছে,ঘাড় নেড়ে সেও শাওন কে বলে যাওয়ার তাগাদা দিল।প্রাপ্তি কে আই,সি ,ইউ থেকে যে দিন বেডে দিল তার পরের দিন, আমার যতদূর মনে আছে, সম্ভবত সকালে আপনাকে আমি কাল দিয়ে মেডিকেল আসতে বলি। হ্যা শাওন, আমার মনে আছে, তুমি বলে যাও। আমি আগে ভাগে যেয়ে প্রাপ্তির মায়ের সঙ্গে কথা বলি,এরপর প্রাপ্তির বেড়ে শুয়া নির্বাক ছবি,এবং তার মায়ের করুন আজি’ ভরা হৃদয় কাড়া আরো একটি ভিডিও নিউজ Our news এবং কলারোয়া নিউজে প্রকাশ করলেন, এবং আমি আমার বন্ধুদের বলে নিউজ টা বেশি বেশি শেয়ার করার ব্যাবস্থা করলাম এবং সাথে সাথে আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে ফান্ড কালেকশন করা শুরু করলাম। আসলে ঐ সময় আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। প্রাপ্তি তার বর্তমান স্বাভাব সূলভ ভঙ্গিতে সায় দিয়ে যাচ্ছে। ফান্ড কালেকশন, পাসপোর্ট, ভিষা, ব্যাঙ্গালোরের হসপিটাল, ডক্টর, অপারেশন, সব কিছু মিলিয়ে প্রায় মাস ছয়েকের মত আমাকে দৌড়ের ওপর থাকতে হয়ে ছিল,এই সময়টাতে পরিবার, বন্ধু- বান্ধব সহ অনেকেই যেমন সহযোগীতা পেয়েছি তেমনি আবার অনেকে কটু কথা বলা বা তির্যক মন্তব্য করতে ও ছাড়েনি। এই পর্যন্ত বলে একটা লম্বা শ্বাস নিল শাওন। এর পরের লড়াই টা — পরের লড়াই টা তোমাকে একাই লড়তে হয়েছে তাই তো? আপনি ঠিক ধরেছেন মাসুদ ভাই, জানেন ঐ সময়টা না আমার ভিতর একটা জিদ কাজ করছিল যে,এত কিছু যার জন্য করলাম,আর অল্প একটু করলে যদি পরিবার টা চলতে পারে, তাহলে কেন করবো না? অবশ্য এতদিনে এক সাথে পাশাপাশি অবস্থান করতে করতে কখন যে একে অপারের —– চলে এসেছি —।প্রাপ্তির লজ্যা অবনত মস্তক,বলে দিচ্ছে শাওন সঠিক টাই বলে যাচ্ছে। আমি যেহেতু কম্পিউটারের ওপর ডিপ্লোমা ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি তাই অনেক ভেবে চিন্তে চাকরির চেষ্টা না করে নিজে কিছু করার মানে,উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম, প্রথম ছাত্রী হিসাবে প্রাপ্তি কে ট্রেনিং দিয়ে দ্রুত ওকে তৈরী করে নিলাম -।সবিতো বুঝলাম শাওন কিন্তু /তাহলে ট্রেনিং সেন্টারের নাম টা —।প্রাপ্তির নামে কেন দিলাম,এক্সাক্টলি সেটাই জানতে চাইছি? আসলে আমি চাইছিলাম ও নিজের পায়ে দাঁড়াক,নতুন করে যেন কারোর মুখাপেক্ষী ওকে না হতে হয়; আর আমি তো ইচ্ছে করলে যে কোন মুহুর্তে নিজের একটা ব্যাবস্থা করে নিতে পারবো। আমি প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম,শাওন কি বলে প্রাপ্তি? ওকে ছাড়বে না কি? প্রাপ্তি তার টেবিলের উপর রক্ষিত সাদা টুকরো কাগজে এক নোট লিখে, আমার দিকে বাড়িয়ে দিল, নোটে লেখা ” আমার জীবন থাকতে নয়” আমি লেখাটা শাওনের দিকে বাড়িয়ে দিলাম, দেখ প্রাপ্তি কি লিখেছে।শাওন তার স্বাভাব সুলভ ভঙ্গিতে স্নিত হেসে বললো আপনি কি তাহলে আমাদের —- ঘটক সাজতে চাইছেন? সাজলে মন্দ কি? একদিন কজ্বি ডুবিয়ে খেতে তো পারবো। ওকে অগ্রিম দাওয়াত রইলো। মাসুদ ভাই আর কোন কিছু জানার না থাকলে, আপনাকে বিদায় জানাতে চাই, বুঝতেই তো পারছেন? হ্যাঁ বুঝতে পারছি, আজ একটু ঝামেলা বেশি পোহাতে হবে। আমারও খাওয়া শেষ, হাত ধোয়ার আগে,সুন্দর রান্নার জন্য, প্রাপ্তির মাকে আরো একবার ধন্যবাদ জানায়,তোমার মা কে আমার ছালাম দিও।আর আমার শেষ প্রশ্ন প্রাপ্তির কাছে? আমাদের কলারোয়া নিউজ বা Our news এর দর্শক বা পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাও কি না? মুখ নেড়ে, সামনের টুকরো কাগজ নিজের দিকে এগিয়ে নিল।আমি ওয়াশরুম হতে আসতেই টুকরো কাগজের নোট টিকে বাড়িয়ে দিল, ” (প্রিয় পাঠক ও সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, বিশেষ করে সেই সমস্ত মা ও বোনদের উদ্দেশ্য যারা,আমার মত ইজিবাইক, পাখিভ্যান,মোটরবাইক বা এই জাতীয় সাধারণ পরিবহনে চলাচল করেন, তাদের কে বলবো, চলার পথে একটু সাবধান হবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)