কয়েক মাসে দেড় লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া, শ্রম বাজার খুলতে ৩ শর্ত


প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মালয়েশিয়া এক থেকে দেড় লাখ বিদেশি শ্রমিক নিতে পারে। লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশকে সবার আগে অগ্রাধিকার দেবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেডমন্ত্রীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম ধাপে ৭ হাজার ৯২৬ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে মালয়েশিয়া। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা মালয়েশিয়ার কাজ করার সুযোগ পাবেন।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি আগামী কয়েক মাসে মালয়েশিয়া এক থেকে দেড় লাখ বিদেশি শ্রমিক নিতে পারে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ সবার আগে অগ্রাধিকার দেবে। আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে লোক পাঠানোর সুযোগ পায়।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, আমাদের আরেকটি বড় অগ্রগতি যেটা হয়েছে, আমাদের শ্রমিকরা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পান না। যাতে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পান সে ক্ষেত্রে তারা ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া যারা দেশটিতে অবৈধ হয়েছেন তাদের বৈধ করার ব্যাপারে আমি বলেছি। তারা বলেছেন বৈধকরণ প্রক্রিয়া মাঝেমধ্যে হয়। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব নয়।
কয়েক মাসে দেড় লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া : আসিফ নজরুল
শ্রম বাজার নিয়ে বাংলাদেশকে বড় সুখবর মালয়েশিয়ার
এ ছাড়া সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ার গিভার, নার্স নেওয়া যায় কি না কিংবা স্কিল ওয়ার্কার নেওয়া যায় কি না—এ ব্যাপারে তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন।
শ্রম বাজার খুলতে ৩ শর্ত
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়ায় দেশটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তারোপ করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সভায় অংশ নেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফি সিদ্দিকি। সভায় লুৎফি সিদ্দিকি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সভায় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া এবং উপসচিব সারোয়ার আলম।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক বিভিন্ন এজেন্সির সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মানবপাচার ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ‘হয়রানীমুলক’ মামলা হয়েছে। যা মালয়েশিয়া সরকারের অভিবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই মালয়েশিয়া দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি চায়।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পুর্ণ অভিবাসন নীতিমালা মেনে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছে। সেখানে মানবপাচার এর অভিযোগ আনা অবান্তর। মিথ্যা ও সাজানো মামলা অভিবাসন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এরূপ মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি বা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়া সরকার জোর দিয়ে বলেছে, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি বা প্রত্যাহারের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
একই সঙ্গে তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অভিবাসন ব্যয় কমানো এবং সহযোগী এজেন্সি (অ্যাসোসিয়েট বেয়ারার) পদ্ধতি পরিহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
পাশাপাশি মালয়েশিয়ার শর্তের মধ্যে রয়েছে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে, অভিবাসন ব্যায় কমানোর লক্ষ্যে সহযোগী এজেন্সি প্রথা বাদ দেওয়া ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে সরকার সব এজেন্সিকে সুযোগ করে দিতে গিয়ে সহযোগী এজেন্সিকে সঙ্গে নিতে বলে। কোনো শ্রমিক দুই লাখ টাকার মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারলে তার অভিবাসন ব্যয় কম হবে এবং ওই শ্রমিক প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
বৃহস্পতিবারের সভা শেষে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল এবং মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেও’র উপস্থিতিতে শ্রমিক প্রেরণ সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আওতায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকেও শ্রমিক নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অযৌক্তিক অতিরিক্ত ফি আদায়ের সুযোগ থাকলে শ্রমবাজারে বাণিজ্যিক অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ে। অভিবাসন ব্যয় কম থাকলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না। সহযোগী এজেন্সি ব্যবস্থাও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি করে। সরকারের উচিত এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলা, যাতে শ্রমিকরা ২ লাখ টাকার মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন- এতে তাদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। বিশেষজ্ঞরা জানান, মালয়েশিয়ায় সাধারণ শ্রমিকদের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি। কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় বিগত এক বছর এই শ্রমবাজার ঝুলে থাকলেও বর্তমানে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
এই বিশাল শ্রমবাজার পুনরায় চালু হলে বাংলাদেশ এবং অভিবাসী কর্মী- দু’পক্ষই উপকৃত হবে। এতে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
বাংলাদেশের কুয়ালালামপুর দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি বাংলাদেশ পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারে, তবে বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত রেমিটেন্স অর্জিত হতে পারে। তারা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত- কে পাঠাচ্ছে বা কোন এজেন্সি পাঠাচ্ছে তা নয়, বরং শ্রমিকদের কম খরচে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা। কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন, স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিকরা নিরাপদে মালয়েশিয়ায় অভিবাসনের সুযোগ পাবেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
