করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে ৩৭ জেলা, ১৫টিই সীমান্তের


মহামারি করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আবারো বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাসহ আশপাশের জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের সংক্রমণের হার ৬ থেকে ১০ শতাংশে উঠে এসেছে।
একই কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বুধবার (২৬ মে) ১৭ থেকে ২৩ মে- এই এক সপ্তাহের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ১০ থেকে ১৬ মে- এই এক সপ্তাহের তুলনায় ২২টি জেলায় নতুন রোগী বৃদ্ধির হার শতভাগ বা তার বেশি ছিল। এগুলোর মধ্যে ১৫টি জেলাই সীমান্তবর্তী।
এক সপ্তাহে ১০১ থেকে ৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে সীমান্তবর্তী সাতটি জেলা হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেট। এছাড়া এই তালিকায় আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, নোয়াখালী ও গাজীপুর।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সপ্তাহে (১৭–২৩ মে) ১৭৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। আগের সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিল ৭৩ জন। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের হার ৬৩ শতাংশ এবং পার্শ্ববর্তী জেলা রাজশাহীতে এই হার ৪১ শতাংশে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য বিশেষ লকডাউন চলছে।
১৮ মে থেকে সংক্রমণ বাড়ছে সীমান্তবর্তী আরেক জেলা কুষ্টিয়ায়। এখন সেখানে রোগী শনাক্তের হার ১৪–১৬ শতাংশ। এরমধ্যে ভারত থেকে আসা ১৪৫ জন এখন কুষ্টিয়ায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
সাতক্ষীরায় ঈদের আগে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৩ শতাংশ। গত সোমবার থেকে শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে।
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক জানিয়ে, ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের ৩৭টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪০ শতাংশের ওপরে সংক্রমণ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনায়। ২০ থেকে ২৯ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে সিলেট, ঝালকাঠি, রাজশাহী, নাটোর ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং ফরিদপুরে।
এছাড়া ১০ থেকে ১৯ শতাংশ সংক্রমণের হার রয়েছে দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, রংপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, গাজীপুর বগুড়া, গোপালগঞ্জ, যশোর, মাদারীপুর চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, মাগুরা, নওগাঁ, কক্সবাজার, ভোলা, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা এবং টাঙ্গাইলে।
এদিকে ঈদে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা থেকে নিজ নিজ গ্রামে গিয়েছিল ঈদ করতে। ফলে স্বাভাবিকের থেকে কয়েকগুণ বেশি লোকসমাগম হয়েছিল গ্রামগুলোতে। যা সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখীতার একটি কারণ হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। অবশ্য ঈদের আগেই এই শঙ্কার কথা বলেছিলেন তারা। কিন্তু সরকারের খামখেয়ালিপনা ‘বিধিনিষেধ’ আর মানুষের বাড়ি ফেরার আকাঙ্ক্ষার কাছে সেই শঙ্কা হালে পানি পায়নি।
সংক্রমণের দিকে থেকে সর্বোচ্চ দশটি জেলার চিত্রে দেখা যায়, ঢাকায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৮, চট্টগ্রামে ৪৭ হাজার ৫২৮, নারায়ণগঞ্জে ১৪ হাজার ৭৭৪, কুমিল্লায় ১৪ হাজার ৭৭৪, বগুড়ায় ১৪ হাজার ২১৯, সিলেটে ১৩ হাজার ১৩৭, গাজীপুরে ১১ হাজার ৯৯০, কক্সবাজারে ১০ হাজার ৮৪০, ফরিদপুরে ১০ হাজার ৭৩৮ এবং খুলনায় ১০ হাজার ৪৯৮ জন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোর দিতে হবে বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আহমদ পারভেজ জাবীন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে ১৮ দফা মানতে দেশের সবাইকে জানাতে ব্যাপক হারে প্রচার চালাতে হবে। সীমান্তে আসা-যাওয়া বন্ধ করতে হবে। এমনকি সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত এটা বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশের সংক্রমণশীলতার ওপর ভিত্তি করে জেলাগুলোকে ছয় ভাগে ভাগ করেছে। যেখানে সর্বোচ্চ ২০ হাজারের উপরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে মাত্র দুটি জেলায়। এর মধ্যে ঢাকায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৩৩৩ এবং চট্টগ্রামে ৪৬ হাজার ৬১৬ জন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
