ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের সঙ্গে দীর্ঘ ১২/১৩ বছর পরিবারের সঙ্গে কোনো কথা হয় না এবং সে বাড়িতেও আসে না বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম।
এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান তার বড় ভাই।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনীত হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজো ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক। সেজো ছেলে কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর রফিকুল ইসলামের ছোট ছেলে রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। কেশবপুরে কাজী পরিবারের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে।
বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন যশোরের ছেলে কাজী রওনাকুল ইসলাম (শ্রাবণ)। দেড় যুগ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। রওনাকুল ইসলামের বাবা ও এক ভাই বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও।
রওনাকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামে। ২০০৩ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রদল কর্মী হিসেবে হল ও বিভাগের সহপাঠীদের মধ্যে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
রওনাকুল ইসলামের বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। সর্বশেষ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলেও পরে দল তাঁকে আবার ফিরিয়ে নেয়।
রওনাকুলের বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত। আরেক ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর ছোট ভাই আযাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
আজ রোববার রওনাকুল ইসলাম ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার খবর প্রকাশ হলে তা কেশবপুরের রাজনৈতিক মহলে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এই ঘটনাকে এক পরিবারের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সহাবস্থান হিসেবে দেখছেন অনেকে।
তবে ছেলের এই রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাননি রওনাকুল ইসলামের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সহসভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেকে তো আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ছেলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। ১৩ বছর ধরে সে বাড়িতে আসে না।
ছেলের ছাত্রদল সভাপতি হওয়া নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানান রফিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য রওনাকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তবে এক পরিবারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের অবস্থানকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেছেন, ‘এক পরিবারের মধ্যে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়।’
তার বাবা ও ভাইয়েরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। সেই পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রদলের শীর্ষ পদ পাওয়ায় তৈরি হয়েছে আলোচনা।
তবে ভিন্ন রাজনৈতিক চেতনার কারণে পরিবারের কারও সঙ্গে শ্রাবণের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তার বড় ভাই কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম।
যশোরের কেশবপুরের সন্তান কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তার বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান। শ্রাবণের বড় ভাই কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজো ভাই কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর সেজো ভাই কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। যে কারণে শ্রাবণ ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার খবর ছড়াতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্র রাজনীতির শুরু থেকেই ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তিনি। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনীত হন।
শ্রাবণের বড় ভাই সাগরদাঁড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম বলেন, বিকেলে শুনেছি শ্রাবণের নেতৃত্বের বিষয়ে। তার ব্যাপারে আমাদের পরিবারের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কেননা আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সদস্য, একমাত্র সে ছাড়া। ভিন্ন রাজনীতি করার কারণে আমাদের সঙ্গে তার ১২/১৩ বছর কথা হয় না। সে বাড়িতেও আসে না।
২০১৯ সালে শ্রাবণ যখন প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রার্থী হন, সে সময় তার বাবা ও ভাইয়েরা যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে তার বাবা দাবি করেন, ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের কারণে শ্রাবণের সঙ্গে তাদের পারিবারিক কোনো সম্পর্ক নেই। সেও (শ্রাবণ) বাড়িতে আসে না এবং পরিবারের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে না।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ যশোরের কেশবপুরের সন্তান। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তার বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যন।
শ্রাবণের পদপ্রাপ্তিতে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও ছাত্রদল তাকে অভিনন্দন জানালেও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
তারা বলছেন, এটি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তবে, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের পরিবার বলছে, দীর্ঘ ১২-১৩ বছর তার সঙ্গে পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও শ্রাবণ ছাত্রকাল থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে দোষের কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে, এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলে কোনো প্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে হয় না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, তার নেতৃত্ব নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই। আমি খুশিও না, দুঃখিতও না। কেননা সে তো আমার দলীয় আদর্শের কেউ না। যদি আমার দলের কেউ হতো, তাহলে প্রতিক্রিয়া থাকতো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম আমাদের দলের সহ-সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান। তার এক ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ইউপি নির্বাচন করেন এবং দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। একই কারণে তার আরেক ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বহিষ্কার হন।
এদিকে, শ্রাবণ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় সন্ধ্যায় কেশবপুর শহরে আনন্দ মিছিল বের করে উপজেলা ছাত্রদল। তারা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং মিছিল শেষে মিষ্টিমুখের আয়োজন করে।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান বলেন, আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের জন্মস্থান কেশবপুরের আরেক কৃতি সন্তান কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের।
তিনি বলেন, শ্রাবণ ভাইয়ের পরিবারের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনিই একমাত্র আমাদের দলের সঙ্গে রয়েছেন। সে কারণে তার বাবা, ভাইরা তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন। শ্রাবণ ভাইও বাড়িতে যেতেন না। ২০১৮ সালে ভোটের সময় ধানের শীষের জন্য কাজ করতে একবার এসেছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মশিয়ার রহমান বলেন, কেশবপুরের সন্তান তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছেন, এলাকার মানুষ হিসেবেও গর্ব হচ্ছে। তাছাড়া শ্রাবণ দীর্ঘদিন ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আমরা সবাই খুশি হয়েছি। তিনি ছাত্রদল না হয়ে অন্য কোনো সংগঠনের হলেও খুশি হতাম; কেননা তিনি আমাদের এলাকার সন্তান।
রোববার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৫ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে এবং সাধারণ সম্পাদক হলেন সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল। এ ছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)