মঙ্গলবার, মার্চ ১১, ২০২৫

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

ঘূর্ণিঝড় মোখা: মহাবিপদ সংকেত

বর্তমান গতিপথ বজায় থাকলে রোববার কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে মোখা। সেসময় ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বাতাসের গতি।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা; দেশের দুই সমুদ্রবন্দরে জারি করা হয়েছে মহাবিপদ সংকেত।

এ ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার আগে মোটামুটি এক দিন হাতে থাকতেই জানমালের ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। কক্সবাজারকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র। নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে চলছে মাইকিং।

বর্তমান গতিপথ বজায় থাকলে রোববার দুপুর নাগাদ কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে মোখা। সেসময় ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বাতাসের গতি।

এ অবস্থায় কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী আশ্রয়শিবিরে টিন, বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ঘরে থাকা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভাগ্যে কী ঘটবে, তা নিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান অবশ্য আশাবাদী, বিগত বছরগুলোর মত এবারও সরকার ‘সফলভাবে’ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

আবহাওয়া অফিস শুক্রবার রাতেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে। আর পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-ফোর’ জারি করে জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বহির্নোঙ্গরে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মহেশখালীর নিকটবর্তী সাগরে ভাসমান দু’টি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রোববারের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে গত সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধাপে ধাপে শক্তিশালী হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বুধবারই সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির প্রস্তুতি সভা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। সেদিনই উপকূলীয় এলাকায় সব আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় ধারাবাহিক সভার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উপকূলীয় অন্তত ২০ জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়।

“আমাদের এখন মূল ফোকাল পয়েন্ট হল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। এর মধ্যে কক্সবাজারকে প্রায়োরিটি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন হচ্ছে ফোকাল এরিয়া।”

তিনি বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে ধান কাটা শেষ হওয়ায় এখন বড় ধরনের স্বস্তি। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার, অবস্থানের সুব্যবস্থা, নারীর, শিশু ও বয়োঃবৃদ্ধদের বিশেষ নজর রাখাসহ যাবতীয় কাজগুলোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।”

সেন্টমার্টিনে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া কোনো পর্যটক এখন নেই জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকরা যাবতীয় সহযোগিতা করছে, আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত; এক সপ্তাহের খাবার মজুদ আছে আমাদের।”

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়ে সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা বলেন মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ যাদের দরকার হবে, তখন তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আরআরআরসি, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে। ভাসানচরে তুলনামূলক ভালো অবকাঠামো থাকায় কিছুটা স্বস্তি।”

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

সেসময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা বাড়ো হাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

শক্তি কতটা, আঘাত হানবে কোথায়

ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে এগোনোর পথে আরও শক্তি সঞ্চয় করে শুক্রবার মধ্যরাত নাগাদ মোখা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে।

শনিবার দুপুর নাগাদ এর বাতাসের শক্তি ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে, যা সুপার সাইক্লোনের কাছাকাছি।

তবে রোববার সকাল নাগাদ বাতাসের শক্তি সামান্য কমতে পারে। আর বর্তমান গতিপথ ঠিক থাকলে মোখা রোববার দুপুরের দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

সেসময় মোখার বাতাসের শক্তি থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তবে টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলছে, শনিবার মোখার শক্তি যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে, তখন বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। রোববার সকালে তা কমে হতে পারে ২৪০ কিলোমিটার।

ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে তাকে বলা হবে সুপার সাইক্লোন।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, “এখনও বেশ সময় বাকি রয়েছে। এটা সুপার সাইক্লোন হতেও পারে, যদি এগোনোর গতি আরও স্লো হয়ে যায়। ১৪ মে দুপুর নাগাদ উপকূল অতিক্রম করবে বলছি আমরা, এটা আরও ডিলে হতে পারে। সব কিছু নির্ভর করছে সাইক্লোন বডির মুভমেন্টের ওপর।”

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

জলোচ্ছ্বাস কত উঁচু

ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আর উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঝরাবে বৃষ্টি

ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় কক্সবাজারে শুক্রবার দুপুরে একদফা মাঝারি বৃষ্টির পর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার থেকে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়তে শুরু করবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ এর আওতায় থাকবে, সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতেও অতি ভারি বর্ষণ হবে।

সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার থেকেই টেকনাফে আসতে শুরু করেছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে এবং দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া বেড়ে যাবে।”

তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি নেই, সব মেঘ গেছে সাইক্লোনের কেন্দ্রে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সেই ঝড় স্থলভাগে ফিরবে।

এ ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে কক্সবাজার জেলায়। তার মধ্যে টেকনাফ উপজেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে মাঝারি ধরনের প্রভাব পড়বে।

উপকূলীয় এলাকায় সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের মূল অংশটা যাবে সেন্টমার্টিন এলাকায়, সেজন্যে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন উপকূল ঝুঁকিতে রয়েছে বেশি। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ব্যস এখন ৭৪ কিলোমিটার। ওই সেন্টারটাই যখন একদম ক্লিয়ার হয়ে যাবে, এখানে কোনো ক্লাউড থাকবে না, তখনই বলা হয় আই ফরমেশন। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ স্পষ্ট হলে সেক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট স্পষ্ট হয়, সাইক্লোনের চতুর্পাশে উইন্ড, বৃষ্টিপাত, ঝড়, বজ্রপাত বেড়ে যায।”

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, আগামী ৪৮ ও ৭২ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলয় এলাকা ও পার্বত্য অববাহিকায় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারি অথবা অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।

“এসময় সংশ্লিষ্ট নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং কিছুনিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।”

নজরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে যে পূর্বাভাস রয়েছে, তাতে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে।

টিন, বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ক্যাম্পের ঘর ঝড়ে উড়ে যাওয়ার যেমন শঙ্কা আছে, তেমনই ভূমিধস, বন্যার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

উখিয়ার কুতুপালং ৫ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউছুফ আলী বলেন, “রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করেন। শিবিরের ঘরগুলো ত্রিপল, বাঁশ, গাছের খুঁটি ও পলিথিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় ঝড়ের সময় ক্ষতিগ্রস্তের হুমকিতে রয়েছে।”

কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের জন্য ৪৫টি বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা শুক্রবার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা।

তারা ইতোমধ্যে দুই হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ মোবাইল মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে আইওএম মিশন প্রধান আবদুসাত্তর এসোয়েভ বলেন, “সরকারি ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সঙ্গে আইওএম স্বেচ্ছাসেবকদের দলটি প্রস্তুত রয়েছে। সব ধরনের সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত।”

বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি কক্সবাজার। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের প্রভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে আইওএ’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে ঝড়ের মূল ধাক্কা লাগতে পারে কক্সবাজার জেলায়, আর এ বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা।

কক্সবাজারে ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা আছেন; তার মধ্যে ২৬টিই উখিয়া উপজেলায়, বাকি ৭টি টেকনাফে। এসব ক্যাম্পে কেবল নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যাই প্রায় সোয়া ৯ লাখ। এর বাইরে নোয়াখালীর ভাসানচরে আছে আরও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে নিরাপদে তাঁবুতে রাখা, খাওয়া ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রস্ততি নিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

সংস্থাটির নোয়াখালী জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, “যদি দুর্যোগ নোয়াখালী বা কক্সবাজারে হিট করে, তাহলে একসঙ্গে ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে অন্যত্র তাঁবুতে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।”

ভাসানচর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসানচরের ৫৯টা ক্লাস্টারের রোহিঙ্গাদেরকে ৫৫টি শেল্টারে রাখা হবে। সেখানে ৩০ হাজার মানুষের রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝড় ও বাতাসে শেল্টার হাউজে বসানো সোলার প্যানেলগুলো উড়ে না যায় তা পুনরায় বাঁধানোর কাজ চলছে। পশু ও রাখালদের বেড়িবাঁধের ভেতর নিয়ে আসা হবে।”

মোখা মোকাবেলায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাড়ে ৪ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটি জানিয়েছে- এরইমধ্যে কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও ভাসানচরে সোসাইটির মাঠে নামানো হয়েছে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম জানান, জরুরি সহায়তায় প্রায় ৩ কোটি টাকা তারা বরাদ্দ রেখেছেন। এছাড়া তারপলিন, জেরিকেন, স্লিপিং ম্যাট, বালতি, হাইজিন কিটসহ অন্যান্য সামগ্রী মজুত রেখেছে সোসাইটি, যা প্রয়োজনে বিতরণ করা হবে।

প্রস্তুত ১৬০৬ আশ্রয়কেন্দ্র

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ১৬০৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

এসব কেন্দ্রে ১০ লাখ সাত হাজার ১০০ জনকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব বলে শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে, যেসবে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৯৯ জনকে রাখা যাবে।

এ জেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৮৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির দুই হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রাথমিকভাবে কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫৯০ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে তিন মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, তিন টন ড্রাই কেক, ২০ হাজার খাবার স্যালাইন ও ৪০ হাজারটি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর চট্টগ্রামে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৩০টি স্থায়ী ও ৫০০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা পাঁচ লাখ এক হাজার ১১০ জন।

এরইমধ্যে সিপিপির ৮৮৮০ জন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আট হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা আবহাওয়ার বার্তা প্রচার করছে।

মন্ত্রণালয়ের তরফে চট্টগ্রামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ ১৪ লাখ টাকা। একইসঙ্গে ৬০৮ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে তিন মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, তিন মেট্রিক টন ড্রাই কেক ও ৩০ হাজার প্যাকেট খাবার স্যালাইন মজুত রাখা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে ৬০ হাজারটি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোখা মোকাবিলায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম প্রশাসনের সব স্তরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, পৌর ও ইউনিয়ন ওয়ার্ড কমিটি যাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে, সেজন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী সহযোগিতা করবে। তারা তাদের স্থাপনা এবং ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। জরুরি যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাস্তায় গাছপালা পড়ে থাকলে সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ হয়েছে।

গবেষক মোহন কুমার দাশ জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়।

এর পরে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করেছে এমন ঘূর্ণিঝড়গুলো মধ্যে ২২ অক্টোবর ১৯৯২, ৩ মে ১৯৯৪, ২৫ নভেম্বর ১৯৯৫, ৮ মে ১৯৯৬ উল্লেখযোগ্য।

পরে ২০১৭ সালের ৩০ মে ‘মোরা’ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে অতিক্রম করলে এর প্রভাবে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

২০১৫ সালে রয়্যাল মিটিরিওলোজিক্যাল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ইদ্রিস আলমের গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য তুলে ধরে মোহন কুমার দাশ বলেন, ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হেনেছে এমন ১৮৭টি ঘূর্ণিঝড়ের ক্যাটালগ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল এবং খুলনা উপকূল দিয়ে যথাক্রমে ৩০, ৪৬, ১৯, ৪১ এবং ৫১টি ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করেছে।

আবার ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে কক্সবাজার দিয়ে অতিক্রম করেছে এমন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ৫টি ক্যাটাগরি-১ (১১৯-১৫৩ কিমি/ঘ), একটি ক্যাটাগরি-২ (১৫৪-১৭৭ কিমি/ঘ), একটি ক্যাটাগরি-৩ (১৭৮-২০৩ কিমি/ঘ) এবং দুটি ক্যাটাগরি-৪ (২১০-২৪৯ কিমি/ঘ) মাত্রার ছিল। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারটি ক্যাটাগরি-৪ (২১০-২৪৯ কিমি/ঘ) মাত্রার ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করেছে চট্টগ্রাম দিয়ে।

ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দুর্যোগের ঘটনার ডেটাবেস খুবই অগোছালো, অপর্যাপ্ত এবং অসম্পূর্ণ।
সূত্র:বিডিনিউজ

একই রকম সংবাদ সমূহ

প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোটসহ তিন পদ্ধতি নিয়ে এগোচ্ছে ইসি

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে তিনটি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন।বিস্তারিত পড়ুন

এবার জনপ্রতি ফিতরা সর্বনিম্ন ১১০ টাকা, সর্বোচ্চ ২৮০৫

এ বছর বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২বিস্তারিত পড়ুন

শহিদ জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত, পদক ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত

শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৩ বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত (বাতিল) করাবিস্তারিত পড়ুন

  • যে সাতজন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, কে কোন ক্ষেত্রে
  • ব্যক্তি পর্যায়ে সুদে লেনদেন ও দাদন বন্ধে হাইকোর্টের রুল
  • ২০০ কোটির বেশি টাকা পাচারকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
  • প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রায় হাতাহাতি
  • জামায়াত কার্যালয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, আমিরের সঙ্গে বৈঠক
  • প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করবে: চীনা রাষ্ট্রদূত
  • এবার সুধা সদনসহ শেখ হাসিনার পরিবারের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ
  • হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  • হাসিনার শাসনামল ছিল একটি দস্যু পরিবারের শাসন: ড. ইউনূস
  • ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাবিতে মশাল মিছিল, স্লোগানে উত্তাল চবি
  • যেখানে মব, সেখানেই গ্রেফতারের ঘোষণা: উপদেষ্টা মাহফুজ
  • সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন