চা বিক্রি করে সংসার চালান মনিরামপুরের এক আ.লীগ নেতা আমজেদ


কাপে চা ঢালেন আর কল্পনা করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় গ্রাম এলাকার রাস্তাঘাট উন্নত হবে। শহরের সকল সুবিধা গ্রামের মানুষ ভোগ করবে। একদিন এদেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ছাড়িয়ে যাবে। অথচ একদিন উনোনে (চুলা) চা না জ্বালালে সংসার চলে না আমজেদ হোসেনের।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের মোবারকপুর গ্রামের মো. শমছের আলী খাঁর ছেলে আমজেদ হোসেন রাজগঞ্জের চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন।
পাশাপাশি চালুয়াহাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্যও ছিলেন তিনি।
তারপরেও দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে কোনো ধরণের লোভ-লালসায় গা ভাসিয়ে দেননি আমজেদ হোসেন। কোনো ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে মিথ্যা মামলার হুলিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়ে বাবার পৈত্রিক জমিটুকু মামলা চালাতে গিয়ে শেষ করে সর্বশান্ত হন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে চা-পান বিক্রি করতে নেমে পড়েন।
পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া ৭ কাঠা জমি ও ভিটে-বাড়িই তার সম্বল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করে দলীয় সকল কর্মসূচিতে অংশ নেয়াসহ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নিরলস পরিশ্রম করেন তিনি। সাংগঠনিকসহ এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে ডাক আসলেই চায়ের দোকান ফেলে রেখেই চলে যান। বাধ্য হয়ে সংসারের খরচ জোগাতে তার একমাত্র ছেলে আব্দুর রাজ্জাক চা-পান বিক্রিতে নেমে পড়েন। এসএসসি পাশ করেই বাবার চায়ের দোকানে থাকতে গিয়ে পড়ালেখায় আর বেশি দূর আগাতে পারেনি রাজ্জাক।
মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের ত্রিমোহনী সড়কে একটি খুপড়ি ঘরে চা-পান আর কলা, রুটি বিক্রি করেন আমজেদ হোসেন।
তার একটাই চাওয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করা।
চায়ের কাপে চা ঢালতে ঢালতে কথা হয় আমজেদ হোসেনের সাথে।
তিনি কলারোয়া নিউজকে জানান, ‘ইউনিয়নটি একসময় বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত ছিলো। ১৯৯৩ সালে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তিনি সংশ্লিষ্ট হন। এরপর প্রতিটি আন্দোলনে সংগ্রামে সরব উপস্থিত উপজেলার নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলেও তিনি কোনো অনৈতিক সুবিধায় নিজেকে জড়াননি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে রোষানলে পড়েন। তাকে ৪টি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়ে আদালতে আত্মসমর্পণের পর দেড় মাস কারাভোগ করে এলাকায় ফিরে বাজারে চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাতে শুরু করেন। ২০০৩ সালে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কমিটি করতে আসলে কেউ কমিটিতে আসতে চাননি। তাকেই নিজ ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরে সাংগঠনিক দক্ষতায় তাকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
সেই অবধি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
এরমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এলাকার লোকজন মেম্বার প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়ে দিলে নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনের খরচও এলাকাবাসির অনেকেই বহন করেন।
সংগঠনসহ এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে যখন-তখন বের হতে হয় বলে দোকানে পরিপাটি হয়ে থাকেন তিনি।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হাইসহ কয়েকজন নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমজেদ হোসেন সাবেক মেম্বার চায়ের দোকানের রোজগারেই সংসার চালান। তিনি আগামী ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারো মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানান।
তিনি আশাবাদি এবারো ওয়ার্ডবাসির বিপুল ভোটের মাধ্যমে মেম্বার নির্বাচিত হবেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
