দেশের ৫২ জেলা করোনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সাপ্তাহিক (২১ থেকে ২৭ জুন) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫২ জেলা করোনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের ১২টি জেলা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলাই করোনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে সারাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। উচ্চ ঝুঁকির এই তালিকায় আছে দেশের প্রতিটি বিভাগই। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় (৩০ জুন) শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ২৫ শতাংশের ওপরে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সাপ্তাহিক (২১ থেকে ২৭ জুন) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫২ জেলা করোনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান। রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার সবকটি। রংপুর বিভাগের নীলফামারী এবং গাইবান্ধা ব্যতীত সব জেলা। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সবকটি। ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর বাদে সব জেলা। সিলেট বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা এবং বরিশালের ভোলা এবং পটুয়াখালী বাদে সব জেলা এই তালিকায় আছে। অতি উচ্চ ঝুঁকির তালিকার বাইরের ১২ জেলা আছে মধ্যম ঝুঁকিতে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে বরিশাল বিভাগে, যা আগের সপ্তাহ থেকে ১১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বরিশালের পর আছে যথাক্রমে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং রাজশাহী। আগের সপ্তাহের তুলনায় সারাদেশে সংক্রমণ বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এই সাত দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ৬২৪ জনের, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে খুলনায়, সংখ্যায় যা ১৭৮ জন। শতকের ওপরে মৃত্যু হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর এপ্রিলের করোনা পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা করেছে। দেশে দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো রেকর্ড ভেঙেছে করোনা শনাক্তে। গত ৭ এপ্রিল করোনা শনাক্ত অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৬২৬। আর সোমবার (২৮ জুন) অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৬৪ জন। রবিবার (২৭ জুন) অতীতের মৃত্যুর রেকর্ড অতিক্রম করে একদিনে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯ জনে। আর বুধবার (৩০ জুন) আবারও রেকর্ড অতিক্রম করে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮২২ জনে। গত ২৩ জুন পাঁচ হাজার ৭২৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, শতকরা হারে যা ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। কিন্তু গত ২৮ ও ২৯ জুন রোগী শনাক্ত অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ২৮ জুন শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ২৯ জুন ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রায় ২৪ শতাংশের কাছাকাছি। গত ৩০ দিনে সংক্রমণের হার মোটামুটি বেড়েই চলেছে। আর বুধবার শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মুখপাত্র এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে ২১ হাজার ৬২৯ জন রোগী শনাক্ত হলেও ফেব্রুয়ারি মাসে রোগী কমে দাঁড়ায় মাত্র ১১ হাজার ৭৭ জন। কিন্তু মার্চ থেকে ক্রমাগত রোগী সংখ্যা বাড়ছে। এপ্রিল মাসে এক লাখ তিন হাজার ৯৫৭ জন রোগী শনাক্ত হয়, আর জুনের ২৯ দিনে শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ তিন হাজার ৮৯৬ জন।’
তিনি বলেন, ‘রোগী বাড়ার প্রবণতা গত এক মাস ধরে, গত এক সপ্তাহ ধরে দেখছি। নিশ্চিত করে বলতে পারি, আজকের (৩০ জুন) রোগী শনাক্ত হওেয়ার পর সেটা হবে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ শনাক্ত। ৮ মার্চ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সপ্তাহভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে ৮ মার্চ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪১৬ জন, কিন্তু ২৫তম সপ্তাহে এসে সেটা হয়েছে ৭৩৮ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগেও রোগী শনাক্তের হারও অন্য যেকোনও সময়েও চেয়ে বেশি।’
সারাদেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে বিজিবি এবং সেনাবাহিনী।
পুরো দেশজুড়ে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ ও লকডাউনে সংক্রমণের গতি কমবে বলে মনে করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘শনাক্তের হারে আমরা কখনও শূন্যে নামতে পারিনি।’
লকডাউন যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের উৎস কমাতে হবে। রোগী ম্যানেজমেন্টও জরুরি। রোগীদের শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশন ও সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে নেওয়া খুব দরকার। টিকা আসলে টিকা নিতেই হবে সবাইকে। এরপরও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। টিকায় মৃত্যু কমলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘সাত দিনের লকডাউনে তো কিছু হবে না, হয়তো সরকার ৪৯ দিনের জন্য অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। এখন অবস্থা তো ভয়াবহ। একদিকে সরকারের সর্বাত্মক লকডাউনের কোনও বিকল্প নেই। তাছাড়া সামনে কোরবানি আছে। সব মিলিয়ে এখন কঠিন একটা অবস্থা। আর এবারের সংক্রমণ একদম ভিন্ন। আগের সংক্রমণ ছিল মূলত জেলা শহরগুলোতে, এখন সেটা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। কাজেই লকডাউন দিয়ে এটা ঠেকানো খুব কঠিন কাজ। আমরা যদি এই রোগীগুলোকে আগেই আইসলেশনে নিতে পারতাম, তাহলে কিন্তু লকডাউন ছাড়াও সংক্রমণ কমানো যেতো। এই পন্থা একটু কষ্টকর বলেই করা যাচ্ছে না। তাই সহজ কাজ হিসেবে লকডাউন দিতে হচ্ছে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)