নির্বাচনের কথা সরকারের মুখে মানায় না : মির্জা আব্বাস
সরকার উৎখাতের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা তো সরকারই দেখি না। এটা নির্বাচন করে সরকার হয়নি। সুতরাং এ সরকারকে উৎখাত করার বা রাখার দায়-দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। জনগণ যখন মনে করবে, তখন এই সরকারকে ফেলে দেবে। তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব মুক্তি পরিষদের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিবের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বর্ণনার সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, কি বিচিত্র বাংলাদেশ। একশ টাকার জন্য চোরের হাত বেঁধে রাখেন, এক হাজার কোটি টাকা যারা চুরি করেন, তাদের স্যালুট দেন’। এই তো বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের কি করুণ অবস্থা। এটা বিশ্বের সবাই জানে, বাংলাদেশ কি দুরবস্থার ভেতর আছে। তার চেয়ে বেশি জানেন বিএনপি নেতাকর্মীরা, তারা কি অবস্থায় আছেন।
প্রতিদিন আমার বাসায় ৫০ থেকে ১০০ জন অভিভাবক, স্ত্রী-সন্তান আসে এমনটা জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, কেউ বলেন আমার বাবা জেলে, কেউ বলেন আমার স্বামী জেলে, কেউ বলেন আমার ছেলে জেলে, কেউ বলেন আমার ভাই জেলে। কতজনের জন্য কথা বলব, আর কতজনের জন্য সান্ত্বনা দেবো।
এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন জিয়াউর রহমান এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। তার দল বিএনপির যে নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে করতে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হয়েছেন। আল্লাহই জানেন কয়দিন পরে তার কি হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কতবার বলেছি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে অথবা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠান। উনার অবস্থা বেশি ভালো নয়। সরকার বলছে আইন নেই। আইন থাকবে না কেন, আইন কি মানুষের জন্য, না আইনের জন্য মানুষ?’ এ সময় রাশেদ খান মেনন ও আ স ম আব্দুর রবের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা আব্বাস। সেই সাথে তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। আ স ম আব্দুর রবকে বন্দি অবস্থায় এবং রাশেদ খান মেননকে পাঠিয়েছিলেন আজকের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। অথচ তারা (সরকার) বলছেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাবে না’। অর্থাৎ তাকে হত্যা করতে হবে। এমন ভাবেই করতে হবে, যেন কেউ কিছু বলতে না পারে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘জেলে কোনো রাজবন্দি নেই’। কি সুন্দর কথা বললেন কাদের সাহেব, আমার খুব হাসি পায়। কাদের সাহেব আপনি যখন এক/এগারো জেলে ছিলেন। আপনি কি চোর হয়ে সেদিন জেলে গিয়েছিলেন? না, রাজবন্দি হয়ে জেলে গিয়েছিলেন, আমি জানতে চাই। এক/এগারো সময় আজকের যিনি প্রধানমন্ত্রী উনিও জেলে গিয়েছিলেন। উনি কি হয়ে জেলে গিয়েছিলেন? আমি জানতে চাই।
মির্জা আব্বাস বলেন, আপনাদের (সরকার) মনে থাকে না, একটা মামলা দেবেন, জেলে পাঠাবেন। আর বলবেন, রাজনৈতিক কোনো রাজবন্দি জেলে নেই। এরা হলো মামলার আসামি। আরে কোন মামলার আসামি? রাজনৈতিক মামলার আসামি। যারা আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। গ্রেফতার করে পৃথিবীর কোনো আন্দোলন, কোনো স্বৈরশাসক থামাতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না এমন মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমার জানা নেই। একদিন না একদিন এই স্বৈরশাসকের পতন ঘটবেই জনরোষের মুখে। এটাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি না গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতেও পারবে না সে নির্বাচন বাংলাদেশে প্রয়োজন নেই। এখন একটি কাজ করতে পারেন রাজতন্ত্র কায়েম করতে পারেন। কিন্তু নির্বাচনের কথা আপনাদের (সরকার) মুখে মানায় না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সহ-সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাপ্পীসহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পার্থ দেব মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)