নৌকা থাকবে না উপজেলাসহ স্থানীয় নির্বাচনে
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। ফলে একক দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও আর থাকছে না।
সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভা শেষে গণভবন গেটে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে দলীয় প্রতীকের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেন নেতারা। তবে বেশির ভাগ নেতা দলীয় কোন্দল ও সংঘাত থেকে নেতা-কর্মীদের দূরে রাখতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না রাখার পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও নেতাদের এই মতামতের প্রতি নিজের সমর্থন জানান।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়।
উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে নৌকা দেবে না আওয়ামী লীগ
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনগুলোয় আপাতত দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে না। যাঁর যাঁর মতো করে স্বতন্ত্রভাবে দলের নেতারা নির্বাচন করতে পারবেন। যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতারা ভোট করতে পারবেন।
সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
গণভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আগামী মার্চে সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা আগেই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া আজ নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন হবে। একই দিনে কয়েকটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
স্থানীয় সরকারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট করার বিধান আছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতা উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না করার পক্ষে বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যের সারমর্ম হলো, কদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূলে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে একজনকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিলে অন্যরা স্বতন্ত্র ভোট করবে। এতে বিভেদ আরও বাড়বে। বরং উন্মুক্ত করে দেওয়াই ভালো হবে।
এরপর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সবার মতামতের প্রতি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, আপাতত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এতে ভোট উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে। যিনি জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই জয়ী হয়ে আসবেন। বিষয়টি নিয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মতামত ব্যক্ত করেন। এ সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পশ্চিমা দেশগুলোকে ইঙ্গিত করে বলেন, ভোটার উপস্থিতির বিষয় নিয়েই তো ‘মাতবররা’ সবক দেন। উন্মুক্ত নির্বাচন হলে ভোটার বাড়বে।
বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি দলের নেতা–সমর্থকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৫৮ জন দলের নেতা–সমর্থক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ থেকেই উপজেলা নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার চিন্তা আসে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। নেতারা বলছেন, বিএনপি পরে ভোটে এলে তখন পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রতীক দেওয়া না–দেওয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে ভোট–পরবর্তী সংঘাতের বিষয়টি আলোচনায় আসে। কেউ কেউ একটি বর্ধিত সভা করে বিভেদ কমানোর প্রস্তাব দেন। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা একে অপরের মধ্যে বিরোধের মধ্যে বর্ধিত সভা না করার কথা বলেন। বরং দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিভেদ কমাতে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। পরে বর্ধিত সভা করার কথা বলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করতে সব চেষ্টা করেছে। ব্যাংক, আদালতের কার্যক্রম বন্ধসহ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাজতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের বর্জন করেছে।’
উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির ইচ্ছা হলে নির্বাচন করবে। না এলে নেই। সাধাসাধি করা হবে না।’
সূত্র আরও জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যের বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও আল গোরের নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এখনো জো বাইডেনের জয় মেনে নেননি। তাঁদের দেশেই এ অবস্থা! তাঁরা আবার বাংলাদেশে ওয়াজ–নসিহত করেন কীভাবে, সেই প্রশ্নটা সবার করা উচিত।
আগামি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়ার সিদ্ধান্ত: ওবায়দুল কাদের
আগামি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে গণভবনে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, ওয়ার্কিং কমিটির এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে দলের স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ড ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় চূড়ান্ত করা হবে।
তবে ওয়ার্কিং কমিটির নেয়া সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থী, দলীয় প্রার্থী সব মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মনোমালিন্য তার রেশ এখনো রয়ে গেছে কিছু কিছু জায়গায়। তা দূর করতে আমাদের দলের যে আটটি বিভাগীয় কমিটি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঢাকায় ডেকে এনে তা সমাধানের কথা বলা হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিডিউল ঘোষণার পর দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, সভায় বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)